বিজয় দিবসের মঞ্চে উপ-উপাচার্য শামীম, আলোচনা সভা বর্জন করল চাকসু এজিএস ও হল সংসদের প্রতিনিধিরা
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খানের উপস্থিতির প্রতিবাদে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা বর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) এজিএসসহ বিভিন্ন হল সংসদের ৯ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে হট্টগোল ও চাকসু প্রতিনিধিদের সাথে ধস্তাধস্তি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গত ১৪ ডিসেম্বর। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, “১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা জীবিত না মৃত অবস্থায় ফিরবে সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে এই ধারণা রীতিমতো অবান্তর।” তার এ বক্তব্যকে ইতিহাস বিকৃতি ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবমাননা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র কাউন্সিল, অঙ্গনসহ ছয়টি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানায়। একই রাতে তারা উপ-উপাচার্যের নিঃশর্ত ক্ষমা ও অবিলম্বে পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এর পরদিন ১৫ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে বারোটার দিকে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ করে। এতে দুই উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন। আন্দোলনকারীরা পুনরায় ড. শামীম উদ্দিন খানের নিঃশর্ত ক্ষমা ও পদত্যাগের দাবি জানান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অভিযোগ তুলে চাকসু প্রতিনিধিরা আন্দোলনস্থলে এলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই আলোচনার পর ছাত্রদল নেতারা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কোনো কর্মসূচিতে ড. শামীম উদ্দিন খান উপস্থিত থাকবেন না।
তবে আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সব কর্মসূচিতে উপ-উপাচার্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে জারুলতলায় ‘সাম্প্রতিক বাংলাদেশে বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। সভা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একটি মিছিল অনুষ্ঠানস্থলে এসে মঞ্চে থাকা সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগ দাবি করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ‘তুই রাজাকার’, ‘একাত্তরের টিক্কা খান, পঁচিশের শামীম খান’, ‘রাজাকার আলবদর কিছুই রবে নারে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
একপর্যায়ে চাকসু এজিএস আয়ুবুর রহমান সভা বর্জনের ঘোষণা দেন। বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে কথা বলার পরও সহ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খান কোনো দুঃখপ্রকাশ কিংবা ক্ষমা চাননি। এর পরও তিনি বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়েছেন, যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে আমরা এই আলোচনা সভা বর্জন করছি।
এজিএসের সঙ্গে আরও ৯ জন হল সংসদের প্রতিনিধি সভা বর্জন করেন। তারা হলেন মাস্টারদা সূর্য সেন হল সংসদের সহসভাপতি মো. তাজিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. সাদমান, এ এফ রহমান হল সংসদের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক তানজিম আশরাফ, শাহজালাল হল সংসদের এজিএস ইমতিয়াজ জাবেদ এবং সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, আলাওল হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক মো. নূরনবী ও খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক বনি আল আমিন সরকার, অতীশ দীপঙ্কর হল সংসদের সহসভাপতি রিপুল চাকমা এবং শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের স্বাস্থ্য, আবাসন ও যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক জামিল হোসেন।
বর্জনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন। বর্জনের ঘোষণার পর চাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) মো. ইব্রাহীম বক্তব্য দেন। তিনি ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ে এসে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে আলোচনা সভার একপর্যায়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মঞ্চের সামনে গিয়ে উপ-উপাচার্যকে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নোমান বলেন, মহান বিজয় দিবসে কোনো রাজাকার মঞ্চে থাকতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অসম্মান ছাত্রদল ও দেশপ্রেমিক ছাত্রসমাজ কখনোই মেনে নেবে না। অবিলম্বে শামীম খানকে স্থান ত্যাগ করতে হবে, নইলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
চাকসুর নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়ুবুর রহমান তৌফিক বলেন, উপ-উপাচার্য তার পদে থাকার নৈতিক ও যৌক্তিকতা হারিয়েছেন। তিনি জানান, নিজেসহ বিভিন্ন হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই আলোচনা সভা প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এই আয়োজনের মাধ্যমে প্রকৃত বিজয় দিবসকে অবমাননা করা হয়েছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।