রাবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন
- Author, রাফাসান আলম, রাবি প্রতিনিধি
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টায় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পতাকা উত্তোলন, সকাল আটটায় সিনেট ভবন চত্বর থেকে পদযাত্রা, সকাল ৮টা ১০ মিনিটে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, হল প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি, সহায়ক কর্মচারী সমিতি, সাধারণ কর্মচারী ইউনিয়ন, পরিবহন টেকনিক্যাল কর্মচারী সমিতি, স্কুল ও অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
রোববার (১৪ই ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্ত্বরে
সকাল সাড়ে ৯টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণ, সম্মাননা স্মারক প্রদান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর মো. আব্দুল লতিফ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২৫ শে মার্চের রাতে হঠাৎ করে পাকিস্তানি আর্মিরা ঢাকায় আক্রমণ করবে এটা কারো জানা ছিলো না। হঠাৎ আক্রমণ করার কারণে পুরো বাংলাদেশ স্তব্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে পাকিস্তানি আর্মিরা মারতে শুরু করেছে এতে আমরা হতভম্ব হয়ে যায়, হঠাৎ করে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শহিদ জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, তখন দেখলাম যে সারা বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে গেলো যে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি এখন আমাদের লড়তে হবে। তখনও আর্মি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যায়নি, তখন আর্মি ছিলেন শুধু ঢাকাতে। সারাদেশে যখন পাকিস্তান আর্মি ছড়িয়ে গিয়েছিল তখন সারাদেশ থেকে প্রতিরোধ শুরু হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বনর্ণা করে তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাক আর্মি ঢুকে তখন অনেকেই চলে গিয়েছিল, ছিলো অবাঙালি এবং যাদের মধ্যে আর্মিদের সহায়তা করার মনোভাব ছিলো তারা। তাদের সহযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শহিদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার, এরপরে শহিদ হবিবুর রহমান, এরপরে আবদুল কাইয়ুম সাহেব শহিদ হন। এ সমস্ত ব্যক্তিরা যখন শহিদ হলেন তারপর আমরা কি করবো বুঝে উঠতে পারি নাই, আমি নিজে ৪ বার ইন্ডিয়া ক্যাম্পে গিয়েছি ট্রেনিং নেয়ার জন্য। মুক্তিযুদ্ধ হলো দেশ স্বাধীন হলো। মাঝে আমরা আমাদের জ্ঞানী গুনী মনীষীদের হারিয়েছে। আমরা আশা করি আমরা আমাদের বুদ্ধিজীবী স্মরণ করে বেঁচে থাকবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং তাদের ভিতরে যে আজকের শহিদ বুদ্ধিজীবীরা আছেন তাদেরকেও স্মরণ করি। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কথা যদি আমরা বলা শুরু করি তখন আপনারা দেখবেন মোটামুটি তিন চারটি তত্ত্বের তিন চারটি বয়ান আছে।এর কোনো বয়ানই পূর্ণাঙ্গ সত্য নয়, এর কোনো বয়ানই পূর্ণাঙ্গ সত্য ধারণ করে না, যে যার বয়ান নিয়ে আছে। পৃথিবীর সকল স্বাধীনতার মূল সুর এক আত্মমর্যাদা, অধিকার, সুবিচার এবং বৈষম্যহীনতা এটাকে বাঙালির ইতিহাস বলে মনে করলে হবে না।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো প্রান্তে স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনি অন্য কোনো সুর দেখবেন না, সবার চাওয়া পাওয়া একই ধরনের। এই চাওয়া পাওয়াটাকে আগে উপলব্ধি করা দরকার।
তিনি আরো বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীসহ একাত্তরে যারা আত্মত্যাগ করেছে তাদের প্রত্যেকেরই প্রত্যেকটা মানুষের এবং এই চব্বিশেও প্রত্যেকটা মানুষের আকাঙ্ক্ষা এক ছিল।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, শহিদ বুদ্বিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সার এবং জহির রায়হান ওনারা ফেনি জেলার আমাদের এলাকার মানুষ ছিলেন, শহিদুল্লাহ কায়সারকে ১৪ ডিসেম্বর নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো আর খবর পাওয়া যায় নাই এবং জহির রায়হান বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর ফিরে আসেননি। ৭২ সালের জানুয়ারি মাসে উনি কিভাবে হারিয়ে গিয়েছেন এগুলা নিয়ে অনেক কন্ট্রোভার্সি আছে, সেই সব বিষয়ের সমাধান হওয়া উচিত।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মতিয়ার রহমান, প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমানসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।