সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) 'বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫' এবং 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫' প্রকাশ ও উপস্থাপন উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান দেশের রাজস্ব পরিস্থিতির দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন, "কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল, এখন তা ৭ শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছে।"
তিনি বলেন, সমস্যাটি কোথায়, তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে।

তিনি জানান, কর-জিডিপি অনুপাত কমার একটি বড় কারণ হলো, জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এসময় আবদুর রহমান খান আরও জানান যে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এনবিআর দুই ভাগ হয়ে দুজন সচিবের নেতৃত্বে কাজ শুরু করবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে আশার কথা শোনান।
তিনি জানান, সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংকের সংযুক্তির প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে। ডিপোজিট গ্যারান্টি ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে আমানতকারীদের মধ্যে অর্থ বিতরণ শুরু হতে পারে।

সরকারের এই উদ্যোগের ফলে পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকসহ ৭৬ লাখ পরিবার আমানত ফেরত পাবেন বলে গভর্নর জানান। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, নতুন সংযুক্ত ব্যাংকটি প্রথম বা দ্বিতীয় বছরেই মুনাফার মুখ দেখতে পারে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ঋণের ফাঁদে পড়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "ঋণের ফাঁদে পড়া আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে না। তখন ঋণ নিয়ে আবার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।"

তিনি রাজস্ব বাজেটের ব্যয়ের কাঠামোর একটি ভয়াবহ পরিবর্তন তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগে রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ছিল সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন, এরপর দ্বিতীয় স্থানে ছিল কৃষি ও শিক্ষা। কিন্তু বর্তমানে কৃষি ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত পেছনে ফেলে ঋণের সুদ পরিশোধ দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।