সম্পর্কে ভাঙন সৃষ্টিকারী বদ অভ্যাসগুলো-সম্পর্ক বাঁচাতে এখনই সতর্ক হোন!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষ সম্পর্ক গড়ে ভালোবাসার জন্য, নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য, মানসিক আশ্রয় খোঁজার জন্য। কিন্তু অনেক সময় সম্পর্ক ভাঙার কারণ বড় কোনো ঘটনা নয়। বরং দিনের পর দিন জমে থাকা ছোট ছোট কিছু অভ্যাস। যেগুলো প্রথমে সাধারণ মনে হলেও সময়ের সাথে বিশ্বাস, সম্মান, বোঝাপড়া ও ঘনিষ্ঠতাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
☞ অবহেলা,মনোযোগের ঘাটতিই সম্পর্কের সবচেয়ে বড় বিষ!
মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি হলো, মানসিক উপস্থিতি। যখন একজন অনুভব করে-
◑ কথা বললে সাড়া মেলে না।
◑ প্রয়োজনের সময় পাশে পাওয়া যায় না।
◑ ব্যস্ততার নামে উপেক্ষা বাড়ছে।
◑ সম্পর্কের চেয়ে কাজ, ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তখন মন ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে শুরু করে।
অবহেলা কখনো চিৎকার করে না, কিন্তু সম্পর্ককে নিঃশব্দে ফাঁকা করে দেয়।
☞ অসৎ আচরণ বা মিথ্যা,বিশ্বাস ভাঙার সবচেয়ে দ্রুত উপায়!
বিশ্বাস গড়ে তুলতে সময় লাগে, কিন্তু ভাঙতে লাগে কয়েক সেকেন্ড। বারবার মিথ্যা বলা, সত্য গোপন করা, তথ্য লুকানো এগুলো যেকোনো সম্পর্কে তীব্র ক্ষতি করে। মিথ্যার কারণে যে মানসিক বিপর্যয় তৈরি হয়, তা থেকেই সন্দেহ জন্মায়,দূরত্ব বাড়ে, নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়, রাগ জমে থাকে। একটি সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে সততা ও স্বচ্ছতার ওপর। চাইলে যত ছোট হোক, মিথ্যাই সেটির সবচেয়ে বড় আঘাত।
☞ রাগ–আবেগের ভুল ব্যবহার!
রাগ মানুষের স্বাভাবিক আবেগ, কিন্তু রাগের অভ্যাসগত ভুল ব্যবহার সম্পর্কে গভীর ক্ষতি করে।
ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো হলো- অপমানজনক কথা বলা, চিৎকার করে কথা বলা,তুচ্ছ–তাচ্ছিল্য, ব্যঙ্গ বা কটাক্ষ, দিন শেষে 'silent treatment'।প্রেম যতই গভীর হোক না কেন, অপমানের শব্দগুলো হৃদয়ে চিরস্থায়ী ক্ষত তৈরি করে।
☞ তুলনা অন্যের সঙ্গে তুলনা করলে সম্পর্কের মূল্য কমে যায়!
"ও এটা পারে, তুমি পারো না?", "ফলানার স্বামী/স্ত্রী তোমার চেয়ে অনেক ভালো"— এ ধরনের কথাগুলো মানুষের আত্মসম্মান ভেঙে দেয়। তুলনা করলে মূল্যের অনুভূতি কমে, অপরাধবোধ বাড়ে, নিজেকে অপ্রতুল মনে হয়, অন্যজনের প্রতি ক্ষোভ জন্মায়। সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি হলো গ্রহণযোগ্যতা, তুলনা এই ভিত্তি ক্ষয়ে দেয়।
☞ যোগাযোগহীনতা,নীরব স্থবিরতাই ভাঙনের সবচেয়ে দৃঢ় লক্ষণ!
যখন কথা থাকা সত্ত্বেও দুইজন কথা বলে না, তখন সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি বিপদে থাকে।
যোগাযোগ না থাকলে-
⇨ ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে।
⇨ ইমোশন জমা হতে থাকে।
⇨ দমবন্ধ অনুভূতি জন্মায়।
⇨ ভালোবাসা দূরের স্মৃতি হয়ে যায়।
যারা নিয়মিত কথা বলে, মন খুলে বলে,তারা সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতে পারে দীর্ঘদিন।
⇨ অতিরিক্ত সামান্য ভুলকে বড় করে দেখা-ইগো ও জেদ!
বেশিরভাগ ভাঙন "কে ঠিক-কে ভুল" এর লড়াইয়ে সৃষ্টি হয়, "আমরা দু'জন মিলে সমস্যার সমাধান করব" এমন চিন্তা না থাকার ফলেই। যে সব অভ্যাস ভাঙন বাড়ায়-
◑ ক্ষমা চাইতে না চাওয়া
◑ নিজের ভুল স্বীকার করতে ভয়
◑ ছোট বিষয়েও বড় প্রতিক্রিয়া
◑ জেদ ধরে সম্পর্ককে শাস্তি দেওয়া
একটি সম্পর্ক জেতে যখন দুইজনের ইগো নয়, দুইজনের বোঝাপড়া জয়ী হয়।
☞ সময় না দেওয়া, মানসিক সংযোগ হারানোর অন্যতম কারণ!
ভালোবাসা শুধু কথা নয়, সময়ও একটি প্রয়োজন। যখন দেখা হওয়ার সময় কমে যায়, একসাথে মানসম্মত সময় কাটে না, কাজ–চাপই সবকিছু দখল করে নেয় তখন সম্পর্ক ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব, ঘনিষ্ঠতা ও রোমান্স হারিয়ে ফেলে। সময় না দিলে ভালোবাসায় ফাটল ধরাই স্বাভাবিক।
☞ অপরজনের অনুভূতিকে ছোট করা!
অনেক সময় মানুষ বলে-
⇨ "এটাও কি কোনো সমস্যা?"
⇨ "তুমি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দাও।"
⇨ "তোমার অনুভূতির কোনো মানে নেই।"
এই আচরণে অন্যজনের কষ্টকে অবমূল্যায়ন করা হয়, ভয় জন্মায় কথা বলতে, মনে জমে থাকা আঘাত বাড়ে, সম্পর্কের নিরাপত্তা কমে যায়। একজনের অনুভূতিকে ছোট করলে দুজনের ভালোবাসাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
☞ অবিশ্বস্ততা-মনোযোগ, মানসিক বা শারীরিক প্রতারণা!
সম্পর্কে অবিশ্বস্ততা শুধু শারীরিক নয়। অনেক সময় মানসিক দূরত্ব বা অন্য কারও প্রতি অতিরিক্ত আবেগও প্রতারণার মতো ক্ষতিকর। অবিশ্বস্ততার লক্ষণগুলো বারবার লুকানো, দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া, অন্য কারও সঙ্গে অতিরিক্ত যোগাযোগ, ইমোশনাল ডিটাচমেন্ট। একবার অবিশ্বস্ততা ঘটলে সম্পর্ককে আবার বিশ্বাসে ফেরাতে সময় ও প্রচেষ্টা দুটোই প্রয়োজন।
নিজেকে যত্ন না নেওয়া-সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
নিজেকে অবহেলা করলে-
◑ মুড খারাপ থাকে,
◑ রাগ বেশি হয়,
◑ ক্লান্তি বাড়ে,
◑ সম্পর্কের ওপর চাপ পড়ে,
মানুষ যখন নিজের মানসিক ও শারীরিক যত্ন নেয় না, তখন সম্পর্কেও জট তৈরি হয়। নিজের সুস্থতা সম্পর্কেরও সুস্থতা তৈরি করে।
☞ অতিরিক্ত প্রত্যাশা, যা সম্পর্ককে চাপে ফেলে!
প্রত্যাশা থাকবে, কিন্তু অতিরিক্ত প্রত্যাশা-
◑ অপরজনকে ক্লান্ত করে
◑ অসন্তোষ বাড়ায়
◑ তুচ্ছ বিষয়ে বিরক্তি তৈরি করে
◑ সম্পর্ককে প্রতিযোগিতায় পরিণত করে
সুস্থ সম্পর্ক মানে দুজনের মধ্যে সামঞ্জস্য, চাপ নয়।
☞ অতীত টেনে আনা,সম্পর্কের বর্তমানকেই নষ্ট করে!
প্রতিবার ঝগড়ায়- পুরোনো ভুল তুলে ধরা, অতীতের ক্ষত আবার খুলে দেওয়া, ভুলের হিসাব রাখা- এগুলো বর্তমান সম্পর্কের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে।
☞ কৃতজ্ঞতার অভাবে ভালোবাসার উষ্ণতা কমে যায়
"ধন্যবাদ","ভালো লেগেছে","তোমার চেষ্টা আমি দেখি" এই রকম বাক্যই সম্পর্ককে নতুন আলো দেয়। কৃতজ্ঞতার অভাবে মূলত সম্পর্ক নিস্তেজ হয়ে যায়।
সম্পর্ক কোনো যন্ত্র নয় যে একবার সেট করলে নিজে নিজে চলবে। এটি শ্বাস নেয় ভালোবাসায়, সময়ের স্পর্শে, পারস্পরিক সম্মানে, যোগাযোগে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।