পুরুষদের রাগ স্তব্ধ করে নারীর কান্না!-গবেষণা

পুরুষদের রাগ স্তব্ধ করে নারীর কান্না!-গবেষণা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানুষের আবেগ কখনোই কেবল শব্দ বা দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পায় না। এক টুকরো কান্না, একটি অশ্রু, এমনকি নারীর কান্নার ঘ্রাণও মানুষের মস্তিষ্কে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণা প্রকাশ করেছে, নারীর কান্নার ঘ্রাণ পুরুষের মানসিক অবস্থাকে শান্ত করতে সাহায্য করে। রাগ কমে, উত্তেজনা হ্রাস পায়, সম্পর্কের সংঘাতের মাত্রা কমে। এই অদ্ভুত আবিষ্কার শুধু রোমান্টিক সম্পর্ক নয়, পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ। কান্না কেবল আবেগের প্রকাশ নয়; এটি এক প্রাকৃতিক biochemical communication যা মানুষের বিবর্তনের অংশ।

মানব আচরণ ও আবেগের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে দীর্ঘদিন ধরে গবেষকরা দেখেছেন, মানুষের মস্তিষ্ক শুধুমাত্র শব্দ বা দৃষ্টিশক্তি থেকে প্রভাবিত হয় না। Pheromones বা রাসায়নিক সংকেতও আবেগ ও আচরণ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সম্প্রতি একটি গবেষণায় এসেছে -

৩৫ জন পুরুষকে দুই গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রথম গ্রুপকে নারীর কান্নার ঘ্রাণ প্রদান করা হয়, দ্বিতীয় গ্রুপকে কোনো ঘ্রাণ ছাড়া রাখা হয়। পরিমাপ করা হয় হৃৎস্পন্দন, রাগের মাত্রা, মস্তিষ্কের স্নায়বিক সক্রিয়তা, মানসিক চাপের সূচক।
ফলাফল চমকপ্রদ-নারীর কান্নার ঘ্রাণের সংস্পর্শে পুরুষদের রাগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। মস্তিষ্কের prefrontal cortex সক্রিয় হয়েছে, যা আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
 

কেন নারীর কান্না পুরুষকে শান্ত করে?

১. রাসায়নিক সংকেতের শক্তি (Chemosignals): নারীর কান্নার সময় শরীর থেকে নির্গত হয় বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ, যা পুরুষের ঘ্রাণের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এই সংকেতগুলো- Amygdala (ভয় ও রাগের কেন্দ্র) কে শান্ত করে, Hypothalamus কে সক্রিয় করে স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করে। প্রাকৃতিকভাবে সহানুভূতি ও শান্তি সৃষ্টি করে। ফলে পুরুষের রাগ হ্রাস পায় এবং বিবেচনামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
 

মানুষের রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ কাজ করে। কান্নার ঘ্রাণ এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক। যেমন- 

⇨ Prefrontal cortex সক্রিয় হয় → আবেগ নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী হয়

⇨ Cortisol হ্রাস পায় → মানসিক চাপ কমে

⇨ Parasympathetic nervous system সক্রিয় হয় → শরীর ও মন শান্ত হয়
 

ফলে, হঠাৎ রাগের মুহূর্তেও পুরুষ শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।

গবেষকরা মনে করেন, মানব বিবর্তনের ইতিহাসে নারীর কান্না পুরুষকে শান্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শিশুর যত্ন নিশ্চিত করা পরিবারে শান্তি বজায় রাখা, সামাজিক সংঘাত কমানো- এই প্রক্রিয়া একটি bio-chemical communication বা জীববৈজ্ঞানিক সংকেত হিসেবে বিবর্তনের অংশ।

 

গবেষণার সীমাবদ্ধতা

সব পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া সমান নয়। সামাজিক শিক্ষা, পূর্ব অভিজ্ঞতা, মানসিক অবস্থা প্রভাব ফেলে। কান্নার ঘ্রাণ একমাত্র সমাধান নয়; খোলামেলা যোগাযোগ, বোঝাপড়া ও সমঝোতাই সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি।

 

গবেষকরা আরও লক্ষ্য করেছেন-

নারীর কান্না শোনার পর পুরুষদের মস্তিষ্কে oxytocin হরমোনের বৃদ্ধি ঘটে, যা সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করে। কান্না ঘ্রাণ বা আবেগের সংকেত পেয়েই পুরুষ মানসিকভাবে সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। এটি শুধুমাত্র রোমান্টিক নয়, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কেও প্রয়োগযোগ্য।

 

কান্নার প্রভাবের অন্যান্য দিক

◑ মস্তিষ্কের রাগ নিয়ন্ত্রণ: নারীর কান্না দেখলে বা তার ঘ্রাণে পুরুষের amygdala কম সক্রিয় হয়, ফলে রাগ কমে।

◑ Stress hormone হ্রাস: Cortisol এবং adrenaline হ্রাস পায়।

◑ মস্তিষ্কে শান্তির অনুভূতি: Parasympathetic nervous system সক্রিয় হয়, ফলে হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ কমে।

◑ সমঝোতা বৃদ্ধি: Purposive thinking বা বিবেচনামূলক চিন্তা বাড়ে, যা ঝগড়া মীমাংসায় সাহায্য করে।
 

সতর্কতা ও সীমাবদ্ধতা

নারীর কান্না সবসময় একই প্রভাব ফেলে না। পূর্ব অভিজ্ঞতা, সামাজিক শিক্ষা ও মানসিক অবস্থা প্রভাবিত করে প্রতিক্রিয়া। এটি কেবল একটি প্রাকৃতিক সহায়ক; খোলামেলা যোগাযোগ, বোঝাপড়া ও সমঝোতাই সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি।

নারীর কান্না কেবল আবেগের প্রকাশ নয়; এটি পুরুষের রাগ হ্রাসে, মানসিক চাপ কমাতে এবং সম্পর্কের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তুলতে এক প্রাকৃতিক রাসায়নিক বার্তা হিসেবে কাজ করে। রাসায়নিক সংকেত মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে।
 

Evolutionary দৃষ্টিকোণ থেকে এটি মানব সামাজিক জীবনের অংশ। সম্পর্ক, পরিবার ও সামাজিক পরিস্থিতিতে শান্তি বজায় রাখতে কার্যকর।
গবেষণার মাধ্যমে স্পষ্ট-একটি অশ্রু, নীরব হলেও, সম্পর্কের শান্তি, বোঝাপড়া এবং আবেগীয় সংযোগ ফিরিয়ে দিতে পারে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ