আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে এশিয়ার সবচেয়ে মানহীন মুদ্রা ভারতীয় রুপি
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চলতি বছর এশিয়ার সবচেয়ে মানহীন মুদ্রার অবস্থানে পৌঁছেছে ভারতীয় রুপি। আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রাটির এই রেকর্ড অবমূল্যায়ন ২০২২ সালের পর সর্বোচ্চ বলে উল্লেখ করেছে ব্লুমবার্গ। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চতর শুল্কারোপ এবং ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক হারে মূলধন প্রত্যাহারই রুপির পতনের মূল কারণ। এ বছর রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা ভারতীয় অর্থনীতির ওপর তাৎপর্যপূর্ণ চাপ সৃষ্টি করেছে।
ব্লুমবার্গের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রুপির মান স্থিতিশীল রাখতে গত জুলাই থেকে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা বাজারে সরবরাহ করেছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে এ নীতি আরও জোরদার করা হলেও, ২১ নভেম্বর ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় হার নেমে আসে ৮৯.৪৯-এ। এতে বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, রিজার্ভ ধরে রাখতে ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়তো আর আগের মতো বাজারে হস্তক্ষেপ করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘসূত্রিতাপূর্ণ বাণিজ্য আলোচনার মধ্যেই মুদ্রা রিজার্ভ শক্তিশালী রাখাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে আরবিআই।
রুপির অবস্থা বর্তমানে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত হলে এবং শুল্কহার কমালে রুপির মান পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি হতে পারে। অন্যথায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আবারও মুদ্রার মান ধরে রাখতে ব্যাপক হারে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রিতে বাধ্য হতে হতে পারে।
বছরের শুরুতেই রুপির অবমূল্যায়ন শুরু হয়। তবে মার্চ ও এপ্রিলে ডলারের বিপরীতে রুপির মান কিছুটা শক্তিশালী হয়েছিল। মার্চ মাসে প্রতি ডলারে রুপির বিনিময় হার দাঁড়িয়েছিল ৮৩.৭৫। এ সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যচুক্তি সহজেই সম্পন্ন হবে এবং শুল্ক কমানো হবে। পাশাপাশি ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের কারণে ভারত নতুন শিল্পকেন্দ্র হিসেবে অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানির নজরে আসে।
কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায় জুলাইয়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণ দেখিয়ে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্কারোপের ঘোষণা দেন। আগস্টে ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ নিশ্চিত হলে রুপির মান প্রতি ডলারে ৮৮ ছাড়িয়ে পড়ে। সেপ্টেম্বরেও রুপির ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি হয় ট্রাম্প ইউরোপীয় দেশগুলোকেও একই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানালে। একই সময়ে ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মূলধন প্রত্যাহার ত্বরান্বিত হয়। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৬.৩ বিলিয়ন ডলার মূলধন বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে, যা রুপির ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করেছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।