হংকংয়ের বহুতল ভবনে আগুন; নিহত বেড়ে ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯

হংকংয়ের বহুতল ভবনে আগুন; নিহত বেড়ে ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

হংকংয়ের তাই পো এলাকার বহুতল আবাসিক কমপ্লেক্স ‘ওয়াং ফুক কোর্ট’-এ অগ্নিকাণ্ডের পর দ্বিতীয় দিনেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে এবং উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে ব্যস্ত সময় পার করেন। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে শুরু হওয়া এই অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪৪-এ; নিহতদের মধ্যে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীও রয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৬২ জনের বেশি বাসিন্দা।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নির্মাণ খাত সংশ্লিষ্ট গুরুতর অবহেলার অভিযোগে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, একজন প্রকৌশল পরামর্শদাতা এবং আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নাম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে হংকং পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট আইলিন চুং জানিয়েছেন, তাদের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, সংস্কার কাজের সময় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অবহেলার কারণেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। বৃহস্পতিবার সকালে প্রেস্টিজ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে নথিপত্রভর্তি বেশ কয়েকটি বাক্স জব্দ করেছে পুলিশ। কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টায় কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তদন্তে আরও জানা গেছে, বহুতল ভবনগুলোর বাইরের দেয়ালে অগ্নিরোধী মান বিবেচনা না করেই কিছু নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছিল, যা আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। অগ্নিকাণ্ডের পর পাশের একটি ভবনের প্রতিটি তলার লিফট লবির জানালার পাশে স্টাইরোফোম পাওয়া গেছে, যেটি অত্যন্ত দাহ্য। ধারণা করা হচ্ছে, সংস্কারকারী কোম্পানিই এগুলো লাগিয়েছিল, তবে সেগুলোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন হংকংয়ের নিরাপত্তা সচিব ক্রিস ট্যাং।

আগুন লাগার মূল সূত্রপাত হয়েছে ওয়াং ফুক কোর্ট কমপ্লেক্সের ৩২ তলা একটি ভবনের বাহিরের স্ক্যাফোল্ডিং থেকে। বাঁশ ও লোহায় তৈরি এই কাঠামো এবং নির্মাণ জালে আগুন দ্রুত দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে এবং পরে ভবনের ভেতরের অংশসহ পাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন প্রবল বাতাসের ঝাপটায় আগুন আরও দ্রুত বিস্তৃত হয়। ফায়ার সার্ভিসের উচ্চ ল্যাডার ট্রাক ব্যবহার করে পানি ছিটানো হলেও ভবনের ভেতরের প্রচণ্ড তাপ তাদের কাজকে অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক ডেরেক আর্মস্ট্রং চ্যান জানিয়েছেন, ভবনের ভেতরের তাপমাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ভেতরে প্রবেশ ও উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় করা কঠিন হয়ে পড়ে।

চার হাজার আট শতাধিক বাসিন্দার জন্য নির্মিত আট ভবনের এই আবাসিক কমপ্লেক্সে প্রায় ২ হাজার ফ্ল্যাট রয়েছে, যাদের একটি বড় অংশই বয়স্ক নাগরিক। ১৯৮০-এর দশকে নির্মিত এই ভবনগুলো বর্তমানে বৃহৎ সংস্কার প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। আগুন লাগার পর বুধবার রাতেই প্রায় ৯০০ বাসিন্দাকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। হংকংয়ের নেতা জন লি জানিয়েছেন, প্রথম রাত ১২টা পর্যন্ত ২৭৯ বাসিন্দার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকায় নিখোঁজের সর্বশেষ সংখ্যা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে জন লি বলেন, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় ৭ ডিসেম্বরের লেজিসলেটিভ কাউন্সিল নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। নির্বাচন পেছানো হবে কি না, তা কয়েক দিনের মধ্যে জানানো হবে। এদিকে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ফায়ার সার্ভিস সদস্যের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার নির্দেশ দিয়েছেন। কয়েক দশকের মধ্যে হংকংয়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই অগ্নিকাণ্ড ১৯৯৬ সালের কাউলুনের ৪১ জন নিহত হওয়া আগুনকেও ছাড়িয়ে গেছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ