বিটকয়েনসহ ক্রিপ্টো বাজারে রেকর্ড মূল্যধস

বিটকয়েনসহ ক্রিপ্টো বাজারে রেকর্ড মূল্যধস
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে যেখানে সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী, সেখানে বিটকয়েনসহ বিভিন্ন ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজারে দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন ধস। গত ছয় মাসে ক্রিপ্টো মুদ্রার সামগ্রিক বাজার মূলধন এক ট্রিলিয়ন ডলার বা এক লাখ কোটি ডলার কমে গেছে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

ক্রিপ্টো–জগতের সবচেয়ে পরিচিত মুদ্রা বিটকয়েনের দাম অক্টোবর মাসের শুরু থেকে নাটকীয়ভাবে কমছে। অক্টোবর মাসের শুরুতে রেকর্ড ১ লাখ ২৬ হাজার ডলারে থাকা বিটকয়েনের দাম গত শুক্রবার ৮১ হাজার ডলারে নেমে আসে।
যদিও সোমবার বাজার খোলার পর দাম কিছুটা বেড়ে ৮৮ হাজার ডলারে উঠে আসে, তবুও সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে এর পতন প্রায় ৩০ শতাংশ।

অন্যদিকে, গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৯০ ডলার এবং ছয় মাসে ৭৫৪ ডলার ৪৫ সেন্ট বেড়েছে।
বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়লে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ ক্রিপ্টো ছেড়ে সোনার মতো নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন যা এই মূল্য পতনের অন্যতম কারণ।

ক্রিপ্টো মুদ্রার ইতিহাসে নভেম্বর মাসটি সবচেয়ে খারাপ মাস হতে যাচ্ছে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জার্মানির ডয়েচে ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরের মাসেও এই বাজার সংশোধন হবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে প্রবেশ করা সত্ত্বেও এই পতন পরিস্থিতিকে আরও গভীর করেছে।

২০২২ সালে ক্রিপ্টো–জগতের বড় কেলেঙ্কারির হোতা স্যাম ব্যাংকম্যান গ্রেপ্তার হওয়ার পর যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, চলতি নভেম্বর মাসকে এর পর ক্রিপ্টোর জগতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বলে মনে করা হচ্ছে।


দীর্ঘদিন ধরে ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফাটকাবাজির ওপর নির্ভরশীল থাকলেও বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের আধিক্য এই পতনের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে। এই পতনের অন্যতম কারণসমূহ হলো-
ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহারঃ ফেডারেল রিজার্ভ কবে নীতি সুদহার কমাবে, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা রয়েছে। সুদহার বেশি থাকলে বিনিয়োগের খরচ বাড়ে এবং তা ক্রিপ্টোসহ ডিজিটাল সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

এআই বাজারঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই) এর বাজারে সৃষ্ট বুদবুদ কত দিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় বিনিয়োগকারীরা আরও সতর্ক হচ্ছেন।

নতুন সংকট ও বাণিজ্যযুদ্ধঃ গত ১০ অক্টোবর থেকে হঠাৎ বাজার ধসের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দিলে আতঙ্কে ব্যাপক পরিমাণ ক্রিপ্টো বিক্রি শুরু হয় যা মূল্য কমাচ্ছে। একদিনেই প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বাজার মূলধন কমে যায়।

আবার, এবারের ক্রিপ্টো ধসের একটি বিশেষ কারণ হলো গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত স্পট বিটকয়েন তহবিলের মাধ্যমে বাজারে কয়েক বিলিয়ন ডলারের নতুন মূলধন প্রবেশ করেছে। মূলধারার এই বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় ক্রিপ্টোতে ঢুকলেও তারা প্রথমদিকের অনুসারীদের মতো মতাদর্শে অনুগত নন।

ইন্টারঅ্যাকটিভ ব্রোকার্সের প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ সসনিক বলেন, “সংক্ষেপে বললে এখন বিটকয়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতেই। ফলে তারা এটিকে আরেকটা জল্পনামূলক, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ হিসেবেই দেখবেন।“
প্রথম দিকের বিনিয়োগকারীরা দাম কমার পরেও ক্রিপ্টো কিনতেন তবে নতুন বিনিয়োগকারীরা সেই চাপ সামলাতে দ্রুত তাদের ক্রিপ্টো সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা বাজারে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ