অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হওয়ার পথে দেশ

অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হওয়ার পথে দেশ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোয় (আইসিইউ) ওষুধ প্রতিরোধী এমন কিছু মারাত্মক জীবাণু দ্রুত বাড়ছে, যেগুলোর ওপর কার্যকর কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই নেই। এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সার্ভিলেন্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) মিলনায়তনে এক সেমিনারে এই গবেষণা ফলাফল তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিইউ থেকে সংগৃহীত নমুনার ৪১ শতাংশ সন্দেহভাজন ‘প্যান-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ (পিডিআর)। অর্থাৎ, এই জীবাণুগুলোর ওপর পরীক্ষিত কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকই আর কাজ করছে না।

সামগ্রিকভাবে হাসপাতালের নমুনায় বহু ওষুধ প্রতিরোধী (Multi-Drug Resistant - MDR) জীবাণুর হার যেখানে ৪৬ শতাংশ, সেখানে আইসিইউতে এই হার ভয়াবহভাবে বেড়ে ৮৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব বলেন, গুরুতর সংক্রমণে দায়ী প্রধান ব্যাকটেরিয়ার বড় অংশ এখন এমন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করেছে, যেটির চিকিৎসায় সর্বাধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেও রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

গবেষণা ফলাফল তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, দেশ দ্রুতই এক বিপজ্জনক ‘পোস্ট অ্যান্টিবায়োটিক সংকট’ এর দিকে এগোচ্ছে, যেখানে সাধারণ সংক্রমণও যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সার্ভিলেন্স প্রতিবেদনে দেশের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ভৌগোলিক তারতম্যও উঠে এসেছে। দেশের মোট অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ৫৭ শতাংশই হয়েছে ঢাকা অঞ্চলে। এর প্রধান কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকায় রোগীর সংখ্যা বেশি, বিশেষায়িত হাসপাতালের আধিক্য এবং স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ঢাকার পরের স্থানগুলোতে রয়েছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট।

এছাড়া মূত্রনালী সংক্রমণের (ইউটিআই) রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। বয়সভেদে, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সি তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে।

জাতীয় এএমআর সার্ভিলেন্স ২০১৬ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।
সর্বশেষ এই প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশজুড়ে মোট ৯৬ হাজার ৪৭৭ রোগীর ক্লিনিক্যাল নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় ৯৬, ৪৭৭টি ক্লিনিক্যাল নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
জরিপ কেন্দ্র ছিলো ১৩টি সেন্টিনেল সাইট (কেসভিত্তিক) এবং ২২টি বেসরকারি ও ২টি সরকারি মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরি। এই গবেষণায় মোট রোগীর ৬০ শতাংশ নারী (৫৮ হাজার ৩৩৪ জন)।
নমুনার মধ্যে গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার প্রাধান্য সর্বাধিক (৭৭%), গ্রাম পজিটিভ পাওয়া গেছে ২২ শতাংশ।
শনাক্ত হওয়া জীবাণুর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ই. কোলি (E. coli) (৩৫%), এরপর ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া (K. pneumoniae) (১৯.২%)।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ