কালো দাগওয়ালা পেঁয়াজ নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ: বাজারে ফের আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা ভাইরাল!

কালো দাগওয়ালা পেঁয়াজ নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ: বাজারে ফের আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা ভাইরাল!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের খোসা কিংবা ভিতরের স্তরে দেখা যাচ্ছে একধরনের কালো দাগ বা গাঢ় ছাই রঙের পরত। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি মুহূর্তেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, দাগগুলি কি বিষাক্ত কিছু? এগুলো কি ফাঙ্গাস? নাকি পচনের শুরু? প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে বহু চিকিৎসক ও খাদ্যসুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ভিডিও ও পোস্টের মাধ্যমে সতর্কবার্তা দেন, যা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।

এই দাগের পেছনের  ব্যাখ্যাটা আসলে বেশ সহজ, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে অজানা। পেঁয়াজ একটি স্তরযুক্ত সবজি, যার প্রতিটি স্তর সঠিকভাবে শুকনো ও বায়ুচলাচলযুক্ত পরিবেশ না পেলে ভেতরে আর্দ্রতা আটকে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ ছত্রাকের দ্রুত বৃদ্ধির সবচেয়ে উপযোগী জায়গা। পেঁয়াজ যদি জমিতে থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত আর্দ্রতার সংস্পর্শে আসে, অথবা সংরক্ষণ ও পরিবহনের সময় ভিজে যায়, তবে খোসা এবং দুই স্তরের মাঝে ছত্রাক জন্মাতে পারে। যেখান থেকে কালো, ধূসর বা ছাই রঙের দাগ দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করছেন, প্রাথমিক পর্যায়ের দাগ সাধারণত শুধু খোসায় সীমাবদ্ধ থাকে এবং এর কোনো গন্ধ থাকে না। কিন্তু দাগ যদি ক্রমে ভিতরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, স্তরগুলোর রং গাঢ় হয়, নরম হয়ে আসে বা চটচটে অনুভূত হয়, তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে নষ্ট হওয়ার স্পষ্ট লক্ষণ। রান্নায় ব্যবহার করলে অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি হজমে সমস্যা বা জ্বালাভাবও দেখা দিতে পারে। এই ধরণের পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর কারণ আরেকটি, দেশের বেশিরভাগ পরিবার পেঁয়াজ প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহার করে।  তাই পচন বা ছত্রাক সম্পর্কিত যেকোনো সতর্কবার্তা দ্রুত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চিকিৎসকরা নিজেরাও বলছেন, দাগের ধরণ বোঝার জন্য সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত হতে হবে না; বরং জিনিসটি আলাদা করে পর্যবেক্ষণ করলেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়।

কিছু ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, খোসা ছাড়ালে ভিতরের অংশ নাড়াচাড়া করলে সূক্ষ্ম কালো গুঁড়ো মতো কণা ঝরে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সাধারণত ছত্রাকের শুকনো স্পোর। রান্নার তাপে অনেক ছত্রাক ধ্বংস হলেও, কিছু স্পোর তাপ–সহিষ্ণু হতে পারে। তাই খাদ্যের মান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে ফেলে দেওয়াই নিরাপদ।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের সময় কিছু সহজ নিয়ম অনুসরণ করলে দাগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। যেমন- বন্ধ ব্যাগ বা আর্দ্র জায়গায় না রাখা, নিয়মিত বাতাস চলাচল করে এমন শুকনো একটি স্থানে রাখা, ভিজে পেঁয়াজ সঙ্গে সঙ্গে শুকনো করে নেয়া। বাজার থেকে কেনার সময় হাত দিয়ে চেপে দেখলে নরমভাব, ভেজাভাব বা অস্বাভাবিক দাগ খুব দ্রুত ধরা পড়ে।

এখন প্রশ্ন হলো- কালো দাগ মানেই কি বিপদ!!
উত্তরটা  হলো- সব সময় নয়। কিন্তু কোন দাগটি ক্ষতিকর আর কোনটি স্বাভাবিক পরিবেশগত দাগ, এটাই বোঝার জন্য সচেতনতা প্রয়োজন। পেঁয়াজের মতো প্রতিদিনকার খাবারে এ ধরনের দাগ অযত্ন, আর্দ্রতা বা সংরক্ষণ ত্রুটির সংকেত হতে পারে। ফলে চিকিৎসকদের দেওয়া এই সতর্ক বার্তা খুবই সময়োপযোগী, কারণ খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

সুতরাং ভাইরাল হওয়া সতর্কবার্তাটি কেবল আতঙ্কের বিষয় নয়, এটি একটি প্রয়োজনীয় আলোচনা। যে খাবার প্রতিদিনের রান্নার প্রধান উপাদান, তার মান সম্পর্কে সতর্ক থাকা শুধু সুস্থতার নয়, বরং নিরাপদ খাদ্যাভ্যাসেরও প্রথম ধাপ। পেঁয়াজে কালো দাগ দেখা গেলে আতঙ্ক নয়; সঠিক পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং সন্দেহ হলে বাতিল করার দায়িত্বই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ