কান্না করলে নাক দিয়ে পানি ঝড়ে কেন?-জানেন কি!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
কান্না মানবদেহের সবচেয়ে স্বাভাবিক আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়ার একটি। কিন্তু এই আবেগ যখন চোখ ভেজায়, তখন নাকও যেন পিছিয়ে থাকে না। অনেকেই অবাক হন কান্না তো চোখ থেকে আসে, নাক এভাবে পানি ঝরায় কেন? বিষয়টি যতটা সাধারণ মনে হয়, এর ভেতরে লুকিয়ে আছে দেহের সূক্ষ্ম অ্যানাটমিক গঠন আর আবেগজনিত চাপের কারণে তরল প্রবাহের নাটকীয় পরিবর্তন।
মানবদেহের চোখের ঠিক ওপরে অবস্থিত ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড স্বাভাবিক সময়েও সক্রিয় থাকে। এটি খুব অল্প পরিমাণে অশ্রু তৈরি করে, যা চোখকে আর্দ্র রাখে, জ্বালা কমায় এবং ক্ষুদ্র ধুলো বা জীবাণু ধুয়ে ফেলে। সাধারণ অবস্থায় এই তরল অবিচ্ছিন্নভাবে নেমে যায় চোখের ভেতরের কোণে থাকা দুটি ক্ষুদ্র ছিদ্রের দিকে, যেখান থেকে তা প্রবেশ করে নাসোল্যাক্রিমাল নালীতে। এই নালী চোখ থেকে নাক পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সরু পথ। প্রতিদিনের স্বাভাবিক অশ্রু এতটাই অল্প পরিমাণ যে নাকে পৌঁছে তা নিঃশব্দে মিউকাসে মিশে যায় এবং বাতাসের সাথে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। ফলে মানুষ টেরই পায় না যে চোখের পানির একটি অংশ সবসময় নাকে পৌঁছায়।
কিন্তু মানুষের আবেগ- বিশেষ করে গভীর বেদনা, উত্তেজনা, শোক বা তীব্র চাপ- ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ডকে স্বাভাবিক মাত্রার বাইরে ঠেলে দেয়। আবেগজনিত কান্নায় অশ্রু উৎপাদনের গতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। চোখের পৃষ্ঠে সেই অতিরিক্ত তরল জমা হতে হতে দ্রুত গাল বেয়ে নামতে থাকে। একই সময়ে একটি বড় অংশ ভেসে চলে যায় নাসোল্যাক্রিমাল নালীর দিকে।
এখানেই ঘটে মূল পরিবর্তন। সূক্ষ্ম এই নালী সাধারণ অবস্থায় যে অল্প পানি সামলাতে পারত, কান্নার সময় তা আর পেরে ওঠে না। অতিরিক্ত তরল ঢুকতে থাকে সরু পথ দিয়ে নাকের অভ্যন্তরে। নাকের ভেতরে থাকে মিউকাস, যা স্বাভাবিকভাবেই একটু আঠালো প্রকৃতির। কিন্তু অতিরিক্ত অশ্রু মিশে গেলে এই মিউকাস পাতলা হয়ে যায়। নাকের নরম টিস্যুর ধারণক্ষমতা সীমিত হওয়ায় এই তরল আর ভিতরে আটকে থাকে না। একটু সময় যেতে না যেতেই নাক টইটম্বুর হয়ে পড়ে এবং পানি বের হতে শুরু করে।
মানবদেহের শারীরবিদ্যার দৃষ্টিতে এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। আবেগ বাড়লে অশ্রু–উৎপাদন বাড়বে, আর বাড়তি অশ্রুর কিছু অংশ নাক দিয়ে বের হবে, এটাই দেহের স্বাভাবিক পথ। গবেষকেরা বলেন, নাক দিয়ে পানি ঝরার এই প্রতিক্রিয়াটি আসলে চোখ ও নাকের যৌথ কার্যপ্রণালিরই প্রমাণ, যেখানে আবেগের চাপ তরল প্রবাহের দিক বদলে দেয়।
তবে এখানে এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক দিকও রয়েছে। কান্নার সময় শরীর শুধু আবেগ ঝরায় না, বরং সেই আবেগকে বিভিন্ন শারীরিক উপায়ে মুক্ত করার চেষ্টা করে। চোখ ভেজা, নাক দিয়ে পানি বের হওয়া, কখনো গলা ভারী লাগা - সবই একই আবেগিক প্রতিক্রিয়ার শারীরিক বহিঃপ্রকাশ। ফলে প্রশ্নটির জবাব সহজ হলেও ব্যাখ্যাটি গভীর, চোখের কান্না নাক ডেকে আনে কারণ এই দুটি অঙ্গ প্রকৃতিগতভাবেই সংযুক্ত। আবেগ প্রবাহ বাড়লে এই সংযোগ আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
তাই কান্না শুধুই চোখের নয়, এটি একই সঙ্গে নাকের ভেতরের নালীপ্রণালী, মিউকাসের অবস্থা আর আবেগের চাপের একটি সমন্বিত প্রতিক্রিয়া।শেষ পর্যন্ত যখন মানুষ কাঁদে, তখন শুধু মন নয় পুরো মুখমণ্ডলই তার সঙ্গে অংশগ্রহণ করে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।