ইউক্রেনকে শান্তি প্রস্তাব মানতে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত ‘শান্তি প্রস্তাব’ গ্রহণের জন্য ইউক্রেনকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান ভ্লাদিমির জেলেনস্কি মন্তব্য করেছেন, তার দেশ "মহাসংকটে" পড়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে সংঘাত সমাধানের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে কিয়েভ তা প্রত্যাখ্যান করলে রুশ সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া কূটনৈতিক উত্তাপ বজায় রেখে শুক্রবার ফক্স নিউজ রেডিওকে বলেন, কিয়েভকে প্রস্তাবটি গ্রহণ করার জন্য আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া "উপযুক্ত সময়"।
দুটি সূত্র ট্রাম্পের এই মনোভাব বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আগেই নিশ্চিত করেছিল।
পরে, হোয়াইট হাউসে নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের উদ্দেশে আরও স্পষ্ট করে বলেন, "তাকে (জেলেনস্কিকে) এটি পছন্দ করতেই হবে। তিনি যদি এটি (শান্তি প্রস্তাব) গ্রহণ না করেন, তাহলে জেনে রাখা ভালো—তাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো গতি নেই।" তিনি যোগ করেন, "একটা পর্যায়ে তাকে (জেলেনস্কিকে) কিছু না কিছু গ্রহণ করতে হবে।"
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত ‘২৮ দফার শান্তিচুক্তি’ এর প্রধান ধারাগুলো হলো-
ভূখণ্ডগত ছাড়ঃ ইউক্রেনকে তার পূর্বাঞ্চলের দনবাস অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার কাছে ছাড়তে হবে। কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই অঞ্চলের কিছু অংশও মস্কোর ক্লিয়ারেন্সে দিতে হবে।
ভূখণ্ড ফেরতঃ বিনিময়ে রাশিয়া দখলে থাকা ইউক্রেনের অন্যান্য কিছু অঞ্চল ফিরিয়ে দেবে।
সামরিক সক্ষমতাঃ ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিন্যের সংখ্যা সংকোচন করে ছয় লাখে নামানো।
ন্যাটো সদস্যপদঃ ইউক্রেনকে ভবিষ্যতে ন্যাটো সদস্য হওয়ার অধিকার না দেওয়া।
এদিকে কিয়েভে নিজের সরকারি কার্যালয়ের সামনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই পরিস্থিতিকে "ইতিহাসের এক কঠিন মুহূর্ত" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "ইউক্রেনের ওপর চাপ এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ইউক্রেন এখন এক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি- আমাদের হয়তো সম্মান হারাতে হবে, অথবা তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারকে হারাতে হবে।"
যদিও এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে তিনি প্রস্তুত আছেন, তবুও তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, "পরিকল্পনায় যাতে অন্তত দুটি বিষয় নিয়ে কোনো আপস না হয়, তা নিয়ে আমি দিন-রাত লড়াই চালিয়ে যাব। তা হলো, ইউক্রেনের সম্মান ও স্বাধীনতা।"
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন। তিনি বলেছেন, এই প্রস্তাবকে "চূড়ান্ত সমঝোতার ভিত্তি" হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে পুতিন কঠোর হুঁশিয়ারি দেন যে "কিয়েভ যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না চায় এবং তা প্রত্যাখ্যান করে, তবে তারা এবং ইউরোপীয় যুদ্ধংদেহী শক্তিগুলোকে বুঝতে হবে, (সম্প্রতি) কুপিয়ানস্কে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি রণক্ষেত্রের অন্যান্য অংশেও অপরিহার্যভাবে পুনরাবৃত্তি হবে।"
পুতিন আরও জানান, গত আগস্টে আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠকের আগে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে এই শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং ওয়াশিংটনের অনুরোধে মস্কো কিছু ছাড়ও দিয়েছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।