রাতে ভেজানো মেথির পানি সকালে মাথায় দিলে চুলে কেন আসে এমন নাটকীয় পরিবর্তন!

রাতে ভেজানো মেথির পানি সকালে মাথায় দিলে চুলে কেন আসে এমন নাটকীয় পরিবর্তন!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

চুলের পরিচর্যায় প্রাকৃতিক উপাদানের গুরুত্ব আবারও জোরালো হয়ে উঠছে, বিশেষত এমন সময়ে যখন রাসায়নিকসমৃদ্ধ পণ্যে চুলের স্থায়ী ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে। বাজারে অসংখ্য পণ্য থাকলেও একটি সহজ, সাশ্রয়ী ও দীর্ঘদিনের পরিচিত উপাদান মেথির পুনরায় জনপ্রিয় হওয়ার কারণ এর উপাদানগত গঠন এবং কাজের প্রক্রিয়া। বিশেষত, মেথি বীজ রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি চুলে ব্যবহার করা এখন প্রমাণভিত্তিক গবেষণার আলোকে আরও কার্যকর বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া শুধু চুল পড়া কমানো বা চুল নরম রাখা—এই সীমাবদ্ধ ধারণার বাইরে গিয়ে স্ক্যাল্পের ব্যাকটেরিয়াল ভারসাম্য, কিউটিকল স্ট্রাকচার, হেয়ার ফলিকলের রক্তসঞ্চালন এবং চুলের মোট প্রোটিন লেয়ারে গভীর পরিবর্তন আনে।

মেথি ভিজিয়ে রাখলে কী ঘটে-উপাদানগত পরিবর্তন

রাতভর মেথি পানিতে থাকলে তার ভেতরের দ্রবণীয় উপাদানগুলো সক্রিয় হয় এবং পানি একটি বায়ো-অ্যাকটিভ লিকুইড-এ পরিণত হয়। এই পানির ভেতরে উপস্থিত থাকে-

১. মিউসিলেজ (mucilage), এক ধরনের নরম, জেল-জাতীয় পলিস্যাকারাইড। চুলে লাগালে এটি স্লিপ তৈরি করে, কিউটিকল সিল করে এবং ভাঙন কমায়।

২. নিকোটিনিক অ্যাসিড, যা রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। ফলে হেয়ার ফলিকল বেশি অক্সিজেন ও পুষ্টি পায়।

3. ফ্ল্যাভোনয়েড ও স্যাপোনিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি কমায় এবং চুলের বার্ধক্য ধীর করে।

4. উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, চুলের প্রাকৃতিক কেরাটিন স্তরকে সাপোর্ট করে। ফলে চুল কম ভাঙে ও ঘন লাগে।

5. অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ, স্ক্যাল্পের ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখে।
 

স্ক্যাল্পে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে?-

১. স্ক্যাল্পের মাইক্রোবায়োমকে ভারসাম্যপূর্ণ করে। আমাদের স্ক্যাল্পের ওপর একটি মাইক্রোবায়োম থাকে,যা হাজারো ক্ষুদ্র জীবাণুর বাসা। এসব জীবাণুর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হলে খুশকি, চুলকানি, রুক্ষতা ও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। মেথির পানিতে থাকা স্যাপোনিন ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ স্ক্যাল্পের সেই ভারসাম্য ঠিক রাখে। ফলে, খুশকি কমে, তৈলাক্ত ভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে, স্ক্যাল্পে বায়ুপ্রবাহ বাড়ে।

২. রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ফলে চুলের গোড়া পুষ্ট হয়। মেথির নিকোটিনিক অ্যাসিড স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন উন্নত করে। হেয়ার ফলিকলে রক্তপ্রবাহ বাড়লে— চুলের বৃদ্ধি তরান্বিত হয়, দুর্বল ফলিকল সক্রিয় হয় এবং চুলের ঘনত্ব বাড়তে পারে।

৩. স্ক্যাল্পের আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করে। মিউসিলেজ পানির অণুগুলোকে বেঁধে রাখে। এতে স্ক্যাল্প আর্দ্র থাকে, শুষ্কতা বা রাফনেস কমে। যাদের স্ক্যাল্প খুব ড্রাই, তাদের জন্য এটি প্রাকৃতিক হাইড্রেশন ফিল্মের মতো কাজ করে।
 

চুলে কী পরিবর্তন আসে?

১. কিউটিকল স্তর সিল হয়ে যায়। চুলের বাইরের স্তর কিউটিকল। কিউটিকল ওপরে উঠলে চুল রুক্ষ, জট ধরার প্রবণতাসম্পন্ন ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। মেথির পানি কিউটিকলকে মসৃণ করে, ফলে চুল উজ্জ্বল দেখায়, ভাঙন কমে, চুল কম জট লাগে।

২. প্রোটিন সাপোর্ট বৃদ্ধি পায়। চুলের গঠন মূলত প্রোটিনভিত্তিক।
মেথির উদ্ভিজ্জ প্রোটিন কেরাটিন স্তরের ফাটল বা দুর্বল জায়গাগুলো ভরে দেয়।এর ফলে— চুল শক্ত হয়, পাতলাভাব কমে, ভেজা অবস্থায় চুল কম ছিঁড়ে।

৩. মিউসিলেজ চুলে একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনিং স্তর তৈরি করে। এটি রাসায়নিক কন্ডিশনারের বিকল্প, তবে এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নেই।
 

ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি 

১. রাতে কাঁচা মেথি ১–২ চামচ পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।

২. সকালে পানি ছেঁকে হালকা উষ্ণ থাকলে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।

৩. চুলের গোড়া ও স্ক্যাল্পে আঙুল দিয়ে আলতো মালিশ করুন।

৪. ২৫–৩০ মিনিট রাখতে পারেন।

৫. পরে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৬. সপ্তাহে ২–৩ বার নিয়মিত ব্যবহার করলে পরিবর্তন টের পাওয়া যায়।
 

কারা সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে পারেন?

◑ যাদের চুল দ্রুত ভেঙে যায়

◑ যাদের খুশকি বা স্ক্যাল্পে শুষ্কতা

◑ যাদের চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে

◑ যাদের চুল রুক্ষ, প্রাণহীন

◑ যাদের স্ক্যাল্প খুব দ্রুত তৈলাক্ত হয়

◑ অথবা যাদের চুল পড়া দীর্ঘদিন ধরে চলমান
 

ভিন্ন ভিন্ন স্ক্যাল্প টাইপে মেথির কাজ আলাদা হলেও এর মূল সুবিধা(স্ক্যাল্পকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখা) সবার জন্যই কার্যকর।
 

কেন আধুনিক সময়ে মেথি আবার জনপ্রিয় হচ্ছে?

চুলের ঘনত্ব বা শক্তি কমার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে— দূষণ, হরমোনাল পরিবর্তন, খাবারের প্রোটিন কমে যাওয়া, স্ট্রেস, অতিরিক্ত স্টাইলিং, রাসায়নিক পণ্য ইত্যাদি।  তাই ব্যয়বহুল সেলুন ট্রিটমেন্ট না নিয়ে মানুষ এখন ঘরোয়া, নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতির দিকে যাচ্ছে। মেথির পানি সেই প্রাকৃতিক সমাধান যার পেছনে রয়েছে বাস্তব রাসায়নিক ও জৈবিক প্রভাব।

মেথি শুধু রান্নার মসলার সীমায় আটকে থাকা উপাদান নয়, এটি চুলের গভীর কোষীয় স্তর পর্যন্ত কাজ করা এক শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান। রাতে ভিজিয়ে রাখা মেথির পানি সকালে স্ক্যাল্পে লাগালে চুলের গোড়া, প্রোটিন স্তর, কিউটিকল এবং পুরো হেয়ার-ইকোসিস্টেমে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ