স্বৈরশাসনের অভিযোগে যেসব রাষ্ট্রনেতাদের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত

স্বৈরশাসনের অভিযোগে যেসব রাষ্ট্রনেতাদের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বৈরশাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বহু রাষ্ট্রনায়ককে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। কেউ হারিয়েছেন ক্ষমতা, কেউ জীবনও। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লস, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্ডেরেস, পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং ইরানের আমির-আব্বাস হোবেইদা সেইসব ব্যক্তি, যাদের পরিণতি রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থার কঠোরতায় চিহ্নিত হয়ে আছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম।

১৬৪৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসকে শিরচ্ছেদ করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। পার্লামেন্টের সঙ্গে দীর্ঘ বিরোধ, কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং জনঅসন্তোষের জেরে তাকে ‘জনশত্রু’ ঘোষণা করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে বিচারকরা। এই ঘটনা আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসককে দায়বদ্ধ করার এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে আছে।

তুরস্কে ১৯৬০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্ডেরেসকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, সংবিধান লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগে বিচার করা হয়। ইয়াসিয়াদা দ্বীপের সামরিক আদালত দীর্ঘ শুনানির পর ১৯৬১ সালে তাকে ফাঁসিতে দেয়। তুর্কি ইতিহাসে একজন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর এমন সমাপ্তি এখনো বিতর্কের বিষয়।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৭ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হন। বিচারপ্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব ও ত্রুটির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডি কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমির-আব্বাস হোবেইদাকে দ্রুত সংগঠিত একটি বিশেষ আদালত রাষ্ট্রদ্রোহ ও নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। একই বছরের ৭ এপ্রিল তাকে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা উঠে।

এই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিকতম রায় আসে বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুইটিতে মৃত্যুদণ্ড ও একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্যানেল, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। 

এছাড়া ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই, হাঙ্গেরির ইমরে ন্যাগি, রোমানিয়ার নিকোলাই চাউশেস্কু ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তাজিকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা বিশ্ব ইতিহাসে অপশাসনের ভয়াবহ পরিণতির সাক্ষ্য বহন করে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ