তারুণ্য হারাচ্ছেন? এই ৭টি দৈনন্দিন অভ্যাসে মাত্র দুই মাসেই দেখবেন অবিশ্বাস্য পরিবর্তন!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বয়স কেবল সংখ্যায় বাড়ে- এই কথাটি প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানীরা ও ত্বক বিশেষজ্ঞরা। কারণ, প্রকৃতপক্ষে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দেহের কোষের পুনর্গঠন ধীরে হয়, কিন্তু যদি জীবনযাপন ও অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনা যায়, তবে শরীর, ত্বক ও মন সবকিছুই দীর্ঘদিন তরুণ ও উজ্জ্বল রাখা সম্ভব। আজকের প্রতিবেদনে জানুন, মাত্র ৬০ দিনে নিজের মধ্যে তারুণ্যের দীপ্তি ফেরাতে পারেন এমন সাতটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত অভ্যাস।
১. শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখুন। মানবদেহের প্রায় ৬০% অংশই পানি, তাই পানিই তারুণ্যের মূল ভিত্তি। শরীর পর্যাপ্তভাবে হাইড্রেটেড না থাকলে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ, নিষ্প্রাণ এবং দ্রুত বলিরেখা দেখা দেয়।
বিজ্ঞানীরা বলেন, দিনে অন্তত ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি (প্রায় ৮ গ্লাস) পান করলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং ত্বকের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়। পানি শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়, ফলে ত্বক থাকে কোমল ও টানটান। নিয়মিত হাইড্রেশন শুধু ত্বক নয়, চুল, নখ, এমনকি মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়ায়।
২. সানস্ক্রিন, ত্বকের প্রতিরক্ষাবর্ম ব্যবহার করুন।
সূর্যের অতিবেগুনি (UV) রশ্মি ত্বকের বয়স বাড়ানোর প্রধান কারণগুলোর একটি। UV-A রশ্মি ত্বকের ভেতরের স্তরে গিয়ে কোলাজেন ভেঙে দেয়, আর UV-B রশ্মি পোড়ার দাগ তৈরি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন, এমনকি ঘরে থেকেও SPF ৩০ বা তার বেশি মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ত্বককে অকালে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক সমান টোনে থাকে, দাগ কমে এবং কোষের ক্ষয় রোধ হয়। বাইরে যাওয়ার ১৫–২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগান এবং প্রয়োজনে প্রতি ২ ঘণ্টায় পুনরায় ব্যবহার করুন।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূলমন্ত্র!
ত্বক ও দেহের মেরামত প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে ঘুমের সময়। ৭–৯ ঘণ্টা গভীর ঘুম শরীরে গ্রোথ হরমোন ও কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, যা ত্বককে টানটান রাখে এবং বলিরেখা দূরে রাখে। ঘুমের ঘাটতি হলে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা ত্বকের প্রদাহ ও ডার্ক সার্কেল সৃষ্টি করে।তাই রাত জেগে ফোন বা টিভি না দেখে, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো এবং ঘুমের মান ঠিক রাখা ইয়ুথফুল স্কিন-এর অন্যতম রহস্য।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম করুন, রক্ত চলাচলই তারুণ্যের শক্তি! নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শরীর নয়, ত্বককেও উজ্জ্বল রাখে। ব্যায়ামের সময় রক্ত সঞ্চালন বেড়ে কোষে অক্সিজেন পৌঁছে যায়, ফলে ত্বক পায় নতুন প্রাণ। ঘাম ঝরানোর মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়ে যায় টক্সিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটা, যোগব্যায়াম, সাইক্লিং বা হালকা কার্ডিও করলেই দেখা যায় দৃশ্যমান পরিবর্তন। ত্বক হয় উজ্জ্বল, মন থাকে সতেজ এবং ঘুমের মানও উন্নত হয়।
৫. রঙিন ফল ও সবজি, ভেতর থেকে তারুণ্যের খাদ্য- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ফ্রি-র্যাডিক্যাল নামে কিছু অণু তৈরি হয়, যা কোষের ক্ষয় ঘটায় এবং ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে দেয়।এই ক্ষয় রোধে দরকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় রঙিন ফল ও সবজিতে। টমেটো, গাজর, পেঁপে, বেল মরিচ, পালং শাক, ব্লুবেরি, তরমুজ ইত্যাদি খাবারে থাকা বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও লাইকোপিন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং বলিরেখা কমায়।সুষম খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো যুক্ত করলে শরীর ভেতর থেকে পুষ্ট ও তরুণ থাকবে।
৬. মানসিক প্রশান্তি, তারুণ্যের এক অদৃশ্য রহস্য! মানসিক চাপ বা উদ্বেগ সরাসরি ত্বক ও শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল ত্বকে তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, ফলে ব্রণ ও প্রদাহ দেখা দেয়।
ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, কিংবা প্রতিদিন কয়েক মিনিট শান্তভাবে প্রকৃতির সঙ্গে থাকা মনকে শান্ত রাখে।
বিজ্ঞানসম্মত গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ধ্যান ও হাসির অভ্যাস স্ট্রেস কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোষের বার্ধক্য ধীর করে।
মন যত প্রশান্ত, মুখ তত উজ্জ্বল।
৭. ধূমপান ত্যাগ, বয়সের ছাপ থামানোর প্রথম পদক্ষেপ। তামাকের ধোঁয়ায় থাকা নিকোটিন ও কার্বন মনোক্সাইড রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলে ত্বক হয়ে যায় বিবর্ণ ও নিস্তেজ।ধূমপান কোলাজেন ভাঙন বাড়ায়, যার ফলে ত্বক ঝুলে পড়ে ও বলিরেখা দেখা দেয়।ধূমপান বন্ধ করার ১ সপ্তাহ পর থেকেই ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে, আর ২ মাসের মধ্যে ত্বকের রং ও গ্লো উন্নত হয়।
তাই নিজের চেহারা ও স্বাস্থ্যের স্বার্থে এখনই ধূমপান থেকে দূরে থাকুন।
তারুণ্য ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে আপনার প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তে।বয়সকে রুখে দেওয়ার কোনো যাদু নেই, কিন্তু শৃঙ্খলিত অভ্যাসই হতে পারে সেই জাদু।পর্যাপ্ত ঘুম, বিশুদ্ধ খাবার, পানি, ব্যায়াম, মানসিক প্রশান্তি ও ইতিবাচক মনোভাব এই সাতটি উপাদান মাত্র ৬০ দিন নিয়মিত মেনে চললে শরীর ও ত্বকের মধ্যে বদল স্পষ্ট হবে।কারণ, তারুণ্য শুধু মুখে নয়, এটি এক মানসিক শক্তি, এক জীবনচর্চা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।