হাত-পা অচেতন, ত্বক জ্বালা, খোঁচা-নিউরোপ্যাথির যে সংকেতগুলো কখনো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানব দেহের স্নায়ুতন্ত্র হলো এক জটিল এবং সূক্ষ্ম নেটওয়ার্ক, যা মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড এবং শরীরের প্রতিটি কোষকে সংযুক্ত রাখে। এই স্নায়ু যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্বল হয়ে পড়ে বা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। তাহলেই দেখা দেয় নিউরোপ্যাথি, যা শুধু শারীরিক সমস্যা নয়, জীবনযাত্রার মানেও গভীর প্রভাব ফেলে।
নিউরোপ্যাথি কী?
নিউরোপ্যাথি হলো স্নায়ুতে ক্ষতি বা দুর্বলতা যা স্নায়ু সংকেত পাঠানো এবং গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটায়। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে:
⇨ পারিফেরাল নিউরোপ্যাথি:হাত, পা বা বাহুতে প্রভাব ফেলে। ঝাঁঝড়ি বা শীতল অনুভূতি, স্ফীত বা ব্যথা হতে পারে।
⇨ অটোনোমাস নিউরোপ্যাথি: অজানা অঙ্গের নিয়ন্ত্রণ (যেমন হার্ট রেট, পাচনতন্ত্র, ব্লাড প্রেসার) প্রভাবিত করে।
⇨ ফোকাল বা ফোকাল মোনোনিউরোপ্যাথি: নির্দিষ্ট একটি স্নায়ু বা অঙ্গের উপর প্রভাব ফেলে।
কেন হয় নিউরোপ্যাথি?
নিউরোপ্যাথির কারণ অনেক। সবচেয়ে সাধারণগুলো হলো:
⇨ ডায়াবেটিস: দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তচাপ স্নায়ুর ক্ষতি ঘটায়। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
⇨ সংক্রমণ বা রোগ: হেরপিস জোস্টার, হ্যান্টিংটন রোগ বা লিউকেমিয়ার কারণে।
⇨ পুষ্টিহীনতা: ভিটামিন B12-এর অভাব স্নায়ুতে ক্ষতি করতে পারে।
⇨ অলকোহল ও ওষুধের প্রভাব: দীর্ঘমেয়াদী অ্যালকোহল সেবন এবং কিছু ক্যান্সার বা এন্টিবায়োটিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
⇨ আঘাত বা চোট: দুর্ঘটনা বা সার্জারি স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
লক্ষণ ও উপসর্গ:
নিউরোপ্যাথি ধীরে ধীরে শুরু হতে পারে। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
◑ হাত বা পায়ে ঝিঁঝিঁ বা জলস্রোতের মতো অনুভূতি।
◑ অসহনীয় বা ঘন ঘন ব্যথা।
◑ শক্ত হয়ে যাওয়া বা দুর্বলতা।
◑ সমন্বয় বা ভারসাম্য হারানো।
◑ ত্বকের সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া।
কিছু ক্ষেত্রে, অটোনোমাস নিউরোপ্যাথি হার্টবিট, রক্তচাপ এবং হজম প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে।
চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা:
নিউরোপ্যাথি পুরোপুরি সারানো কঠিন হতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এর প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব-
☞ ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
☞ শর্করা নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখলে
☞ স্নায়ুর ক্ষতি কমানো যায়।
ওষুধ ও থেরাপি:
⇨ পেইন রিলিভার, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ।
⇨ ফিজিক্যাল থেরাপি এবং occupational therapy।
পুষ্টি ও জীবনধারা পরিবর্তন:
⇨ ভিটামিন B12, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য।
⇨ নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান এবং অ্যালকোহল কমানো।
নিউরোপ্যাথি মূলত স্নায়ুর অক্ষমতা এবং সিগন্যাল ট্রান্সমিশনের ব্যাঘাত। স্নায়ুর ঘেরায় থাকা মায়েলিন শিথ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সিগন্যাল ধীর হয়ে যায়। স্নায়ুর রক্ষা করা ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংবেদনশীলতা বা শক্তি হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও জীবনধারা পরিবর্তন করলে স্নায়ুর পুনরুদ্ধার সম্ভব।
সময়মতো সনাক্তকরণ, সঠিক চিকিৎসা, জীবনধারার পরিবর্তন এবং পুষ্টি-সচেতনতা রোগের ক্ষতি কমাতে পারে। স্নায়ু হলো শরীরের জীবন্ত তথ্যপ্রবাহ; যত্ন এবং সচেতনতা থাকলে তার ভাঙা সংকেতও আবার পুনরায় সাজানো সম্ভব।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।