১৯৯৭-এর বাজার স্মৃতিকথা vs বর্তমান বাস্তবতা
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
একটি পুরনো সংবাদপত্র কাটিং থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারি ১৯৯৭-এর বাজারে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ছিল নিম্নরূপ:
1. এক ডলার: ৳ ৪২.৫০
2. সোনা (গিনি) ১০ গ্রাম: ৳ ৫৭০০
3. মোটা চাল প্রতি কেজি: ৳ ১০.৫০
4. আটা প্রতি কেজি: ৳ ১৬.০০
5. মুসুর ডাল প্রতি কেজি: ৳ ৪৮.০০
6. দেশি চিনি প্রতি কেজি: ৳ ৩৪.০০
7. সয়াবিন তেল প্রতি লিটার: ৳ ৫০.০০
8. মুরগির ডিম (হালি): ৳ ১২.০০
9. পেয়াজ (নতুন) প্রতি কেজি: ৳ ১২.০০
10. মিল্ক ভিটা “আধা লিটার”: ৳ ১৩.০০
এই পুরনো দামের সঙ্গে ২০২৫ সালের বর্তমান দামের তুলনা করলে দেখা যায় যে, সময়ের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং বাজারের ধরণ অনেক বদলেছে। কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, আবার কিছুতে বাজারে ভিন্ন মাত্রার ওঠানামা দেখা গেছে। তখন দাম ছিল হাতের নাগালে, আর এখন দাম বেড়ে গেছে ভোক্তাদের পৌঁছানোর বাইরে। সাধারণ ভোক্তাগণ এখনকার দামের সাথে তাল মিলাতে পারছেন না, যার কারণে অনেক কিছুই থেকে যাচ্ছে সাধ্যের বাইরে।
বর্তমান দামের তুলনায় বিশ্লেষণ
সাদা চাল
১৯৯৭-এ মোটা চাল ছিল মাত্র ৳ ১০.৫০ কেজিতে। আজকের বাজারে চালের দাম অনেকটা ভিন্ন মাত্রায়। ধান চালের খুচরা বাজারে চাল বর্তমানে প্রায় ৳ ৬০–৬৫ প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দাম আরও বেশি। এই বড় দর বৃদ্ধি নির্দেশ করে, বাজার নিয়ম, চাহিদা, মিলেড় ও সরবরাহ চেইন এখন আগের তুলনায় অনেক জটিল এবং ব্যয়বহুল।
সয়াবিন তেল
ছবিতে ১৯৯৭-এর সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ৳ ৫০ ছিল। এখনকার বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রায় ৳ ১৮৯–১৯৫ প্রতি লিটার পর্যন্ত উঠেছে। তেল দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক কাঁচামালের দাম, ইনবাউন্ড খরচ, এবং মজুদ নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন কারণ তুলে ধরছেন। তাছাড়া অনেক অসাধু ব্যবসায়ী গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
মুসুর ডাল
১৯৯৭-এর দাম ছিল প্রতি কেজি প্রায় ৳ ৪৮। আজকের বাজারে মুসুর ডালের খুচরা দাম সব জায়গায় একই রকমভাবে নির্ধারিত নেই, কারণ ডালের দামে ওঠানামা রয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে গ্রামীণ ও নগর বাজারে ডালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ক্রয়ক্ষমতাও এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।
ডিম
পুরনো সংবাদে মুরগির ডিম (হালি) ছিল মাত্র ৳ ১২। বর্তমান বাজারে ডিমের দাম অনেকটাই বেড়েছে। বাজার এবং ভৌগলিক অবস্থানভেদে মূল্য ওঠানামা দেখে এক যুগ আগের সেই সহজ দামের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের পরিবারগুলোর দৈনন্দিন ব্যয় বেড়েছে।
বিশ্লেষণ ও মন্তব্য
এই তুলনা দেখায় যে, দাম বৃদ্ধির রূপ শুধু ইনফ্লেশনের প্রতিফলন নয়, বরং ভোক্তা চাহিদা, বাজার ম্যানিপুলেশন, চেইন-জটিলতা এবং আমদানির ব্যয় বাড়ার মতো কাঠামোগত কারণগুলোরও বড় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে চাল ও তেলের ক্ষেত্রে, মাত্র কাঁচামাল বৃদ্ধিই নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এবং গুদামদারদের ভূমিকা ও সরবরাহ চেইনের ত্রুটি মূল্য বৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখছে।
নীচে বছরের পর বছর ধরে সহজ জীবনযাপনের ব্যয় ধাক্কা খাচ্ছে। দিনে দিনে নিত্যনির্বাহী পণ্যের দামে ওঠানামা ঘরোয়া মানুষের বাজেটকে চাপে ফেলেছে।
সারি-ভাঙা স্মৃতিতে পুরনো দামের কথা মনে করালে বোঝা যায়—কেবল অর্থনীতির পরিবর্তনই নয়, জনজীবনের গতিপথও পাল্টেছে। আজকের বাজারে সেই পুরনো দামে এই জিনিসপত্র পাওয়া এখন শুধু স্মৃতি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।