অবচেতন প্রভাব থেকে মুক্তি কি সত্যিই সম্ভব?-Social Conditioning-এর রহস্য জানুন

অবচেতন প্রভাব থেকে মুক্তি কি সত্যিই সম্ভব?-Social Conditioning-এর রহস্য জানুন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানুষ জন্মগতভাবে সামাজিক প্রাণী। আমরা শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছা বা চাহিদার ওপর নির্ভর করে বাঁচি না, বরং সমাজের তৈরি নিয়ম, মূল্যবোধ ও প্রত্যাশার মধ্যে থেকেও অনেক কিছু শিখি। এই প্রক্রিয়াটিকেই মনোবিজ্ঞানে বলা হয় "Social Conditioning"। সমাজের প্রভাবের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা, আচরণ ও মূল্যবোধ গড়ে ওঠা। কখনো কি ভেবেছেন, আপনি যে সিদ্ধান্তগুলো নেন বা যে আচরণগুলো প্রকাশ করেন, তা কতটা সত্যিই আপনার নিজের এবং কতটা সমাজের শেখানো নিয়মের প্রতিফলন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হলে Social Conditioning-এর গঠন, প্রভাব ও প্রভাবমুক্তির উপায় বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

একজন শিশুর প্রথম শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে পরিবার। জন্মের পর থেকেই বাবা-মায়ের আচরণ, কথাবার্তা, অভ্যাস- সবকিছু শিশুর মানসিক গঠনে ছাপ ফেলে।যেমন:

একটি পরিবার যেখানে মেয়েদের কথা কম বলা "ভদ্রতা" হিসেবে শেখানো হয়, সেখানে মেয়েরা বড় হয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করে। Conversely, উন্মুক্ত ও সমর্থনশীল পরিবার শিশুদের সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। এভাবে পরিবার শিশুর নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও আচরণের ভিত্তি গড়ে দেয়।

স্কুল শুধু পাঠ্যবই শেখায় না; এটি শেখায় শৃঙ্খলা, প্রতিযোগিতা এবং সহমত মানা। শিক্ষার্থীরা দ্রুত বুঝতে শেখে, শিক্ষকের প্রশংসা বা ভালো গ্রেড পাওয়ার জন্য কীভাবে আচরণ করতে হয়। স্কুল জীবনের এই অভিজ্ঞতাগুলো সামাজিক মানদণ্ড ও চাহিদাকে অবচেতনভাবে গ্রহণ করার একটি ক্ষেত্র তৈরি করে।

ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি মানুষকে শেখায় কী "ভালো" বা "মন্দ"। উদাহরণস্বরূপ, কোন কাজ করা "পাপ" বা কোন আচরণ "সম্মানজনক"। এটি সামাজিক আচরণের নিয়ন্ত্রণ ও সীমারেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও আত্ম-অভিব্যক্তিকে প্রায়শই এই কাঠামো সীমিত করে।

 

আধুনিক যুগের প্রভাব:

টেলিভিশন, সিনেমা, বিজ্ঞাপন ও সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের নিত্যদিনের চিন্তা ও আচরণের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।যেমন :

বিজ্ঞাপনে ফর্সা ত্বক বা স্লিম ফিগার বারবার দেখানো হয়, যা সৌন্দর্য ও আত্মমূল্যায়নে প্রভাব ফেলে।সামাজিক প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয়তা বা ফলোয়ার সংখ্যা মানুষের মানসিক চাপ ও স্ব-পরিচয়কে প্রভাবিত করে।এখান থেকেই বোঝা যায় যে, Social Conditioning শুধু শিখানো নয়, এটি চাপের মাধ্যমে আচরণ নিয়ন্ত্রণও করে।

বন্ধু ও সহকর্মীর সঙ্গে মেলামেশা মানুষকে শেখায় "কি গ্রহণযোগ্য" এবং "কি গ্রহণযোগ্য নয়"। এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত চিন্তা প্রায়শই সমাজের মানদণ্ডের সঙ্গে মিশে যায়। যারা সমাজের প্রত্যাশা মেনে চলতে অক্ষম, তারা প্রায়ই নিজেকে ব্যর্থ বা অস্বাভাবিক মনে করে।
 

Social Conditioning-এর প্রভাব- 

⇨ ব্যক্তিত্ব ও আচরণ: আমরা সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী আচরণ করি, নিজের ইচ্ছা প্রায়শই সীমাবদ্ধ হয়।

⇨ লিঙ্গভিত্তিক মানদণ্ড: পুরুষ-নারীর জন্য ভিন্ন প্রত্যাশা তৈরি হয়, যা স্বাধীনতা ও সম্ভাবনাকে সীমিত করে।

⇨ সাফল্যের ধারণা: সমাজ বলে দেয় সফলতা মানে উচ্চ পদ বা বড় আয়, যার ফলে মানুষের সৃজনশীলতা ও মানসিক প্রশান্তি কমে যায়।

⇨ মানসিক চাপ: যারা সমাজের ধারা মেনে চলতে পারেন না, তারা অপরাধবোধ ও উদ্বেগ অনুভব করে।
 

Social Conditioning ভাঙার উপায়-

১. আত্ম-সচেতনতা: নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণের উৎস বোঝা।

২. প্রশ্ন করা শিখুন: প্রচলিত ধারণা কেন মেনে নেওয়া হচ্ছে তা যাচাই করা।

৩. সমালোচনামূলক চিন্তা: তথ্য যাচাই করা এবং নিজের যুক্তি তৈরি করা।

৪. ভিন্নতা গ্রহণ: অন্য সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হওয়া।

৫. নিজস্ব মূল্যবোধ নির্ধারণ: অন্যের প্রত্যাশা নয়, নিজের বিবেক ও অনুভূতির ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা।

 

Social Conditioning সমাজকে সংহত রাখে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সীমিত করে। নিজের চিন্তা ও আচরণের উৎস বোঝার মাধ্যমে আমরা সামাজিক প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে সত্যিকার স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ