প্রযুক্তি এখন পড়ে ফেলছে আপনার অনুভূতি! গোপন নজরদারির আশঙ্কায় কাঁপছে বিশ্ব
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আপনার মুখের সামান্য হাসি, চোখের পলক কিংবা কণ্ঠের টোন- সবই এখন প্রযুক্তি পড়ে ফেলতে পারে!যেখানে আগে "মানুষের মন বোঝা" ছিল মনোবিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ, সেখানে এখন মেশিনও সেই কাজ করছে নিখুঁতভাবে। 'Emotion Recognition Technology', আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর এমন এক শাখা, যা মানুষের মুখভঙ্গি, কণ্ঠস্বর, হৃদস্পন্দন এমনকি শরীরের ক্ষুদ্রতম সংকেত বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারে কারও আবেগ বা মানসিক অবস্থা।
কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?
ইমোশন রিকগনিশন টেকনোলজি আসলে AI, মেশিন লার্নিং, ফেসিয়াল অ্যানালাইসিস এবং বায়োমেট্রিক ডেটা প্রসেসিং-এর সম্মিলিত প্রয়োগ।ক্যামেরা বা সেন্সর আপনার মুখের সূক্ষ্ম পেশির নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করে। বিশেষ সফটওয়্যার সেই ডেটাকে বিশ্লেষণ করে "emotion patterns" শনাক্ত করে। যেমন - আনন্দ, দুঃখ, ভয়, বিরক্তি বা বিস্ময়।একে Face Reading Algorithm বলা যায়।
শুধু মুখ নয়, কণ্ঠস্বরেও লুকিয়ে থাকে আবেগ, শব্দের কম্পন, পিচ ও গতি থেকে সফটওয়্যার নির্ণয় করে বক্তার মানসিক অবস্থা- আপনি উত্তেজিত, ক্লান্ত নাকি রাগান্বিত!যা Voice Tone Analysis.
কিছু ডিভাইস ত্বকের ঘাম, হৃদস্পন্দন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিবর্তন শনাক্ত করে। মানুষের শরীর আবেগের সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেয়। এই শারীরিক সিগন্যালগুলো মেশিনের কাছে "মনের ভাষা" হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ Physiological Signal Tracking।
মানুষের মুখে প্রায় ৪৩টি মুখের পেশি কাজ করে এবং এগুলো একসাথে ১০,০০০-এরও বেশি ভিন্ন অভিব্যক্তি তৈরি করতে পারে। AI ট্রেনিং ডেটাসেটে হাজারো মানুষের মুখভঙ্গি বিশ্লেষণ করে এই সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো শিখে নেয়। একবার শিখে নিলে, ক্যামেরায় ধরা পড়া নতুন মুখও মিলিয়ে ফেলে পূর্বের তথ্যের সঙ্গে। ফলে মিলিসেকেন্ডের মধ্যে বুঝে ফেলে আপনি কেমন অনুভব করছেন। এই প্রযুক্তির পেছনে মূলত কাজ করছে Deep Learning Neural Networks, যা মানুষের আবেগের 'প্যাটার্ন' শেখে এবং নতুন ডেটায় তা প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নেয়।
ইমোশন রিকগনিশন শুধু গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ নয়; এখন এটি ব্যবহার হচ্ছে আমাদের চারপাশে নানাভাবে-
⇨ শিক্ষা: অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীর মনোযোগ বা বিভ্রান্তি শনাক্ত করতে।
⇨ স্বাস্থ্য: ডিপ্রেশন, অটিজম বা উদ্বেগজনিত রোগ নির্ণয়ে সহায়ক টুল হিসেবে।
⇨ স্মার্ট কার: ড্রাইভারের ক্লান্তি বা বিরক্তি শনাক্ত করে দুর্ঘটনা রোধে সতর্ক করে।
⇨ বিপণন: বিজ্ঞাপন বা পণ্যের প্রতি গ্রাহকের আবেগ বোঝার জন্য।
⇨ গেমিং ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: খেলোয়াড়ের আবেগ অনুসারে গেমের প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন করতে।
যদিও প্রযুক্তিটি চমকপ্রদ, তবে এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কিছু বিতর্কও।
আবেগ তো মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়! তাহলে মেশিন যদি সেটিও "পড়তে" শেখে, তবে গোপনীয়তা কোথায়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মুখভঙ্গি ও কণ্ঠ থেকে সংগৃহীত ডেটা অত্যন্ত সংবেদনশীল। এগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, ভুল ব্যাখ্যা রোধ করা এবং নৈতিক মানদণ্ড বজায় রাখা এখন জরুরি। তাছাড়া সাংস্কৃতিক ভিন্নতাও গুরুত্বপূর্ণ। এক দেশের হাসি বা মুখভঙ্গি অন্য দেশে ভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে। তাই "emotion detection model" সবক্ষেত্রে একভাবে কাজ নাও করতে পারে।
গবেষকরা এখন কাজ করছেন Multimodal Emotion Recognition-এর দিকে, যেখানে মুখভঙ্গি, কণ্ঠস্বর, শরীরের ভঙ্গি ও বায়োসিগন্যাল সব একসঙ্গে বিশ্লেষণ করা হবে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি হয়তো আমাদের স্মার্টফোন, স্মার্ট হোম ডিভাইস কিংবা অনলাইন যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে এমনভাবে যুক্ত হবে, যেখানে মেশিন আমাদের মানসিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। যেমন, কণ্ঠ নরম করবে বা বার্তা প্রেরণে বিলম্ব করবে যদি ব্যবহারকারী উত্তেজিত থাকে।
প্রযুক্তি এখন শুধু চিন্তা বুঝছে না, আবেগও চিনছে!
মানুষের মনের ভাষা ধরতে পারার এই সক্ষমতা। যেমন- যোগাযোগে নতুন দিগন্ত খুলছে, তেমনি তুলছে নৈতিকতার নতুন প্রশ্নও। তবে সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে, Emotion Recognition Technology ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নয়,এটি হতে পারে ভবিষ্যতের মানবিক প্রযুক্তি, যেখানে মেশিনও বুঝবে মানুষের মনের সুর।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।