গিরগিটির রঙ বদলের আসল রহস্য জানেন? বিজ্ঞানীদেরও অবাক করেছে এই ক্ষমতা!

গিরগিটির রঙ বদলের আসল রহস্য জানেন? বিজ্ঞানীদেরও অবাক করেছে এই ক্ষমতা!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গিরগিটি হলো প্রাণীজগতের এক বিস্ময়কর উদ্ভিদচোরাকারী, যা শুধু তার নাচানো লেজ বা দীর্ঘ জিহ্বা দিয়েই নয়, বরং তার রঙ পরিবর্তনের ক্ষমতা দিয়েও পরিচিত। ছোট্ট এই প্রাণীটির রঙ বদলানো কেবল চোখে চমক লাগানোর বিষয় নয়, এটি প্রকৃতির বুদ্ধিমত্তা, সুরক্ষা ও যোগাযোগের নিখুঁত সমন্বয়।

গিরগিটির ত্বকে রয়েছে বিশেষ কোষ যাকে বলা হয় ক্রোমাটোফোর (Chromatophore)। এই কোষের ভেতরে পিগমেন্ট থাকে, যেমন লাল, হলুদ বা কালো। ত্বকের নীচে আরও দুটি স্তর রয়েছে-

১। ইরিডোফোর (Iridescent cell) এবং

২। লিউকোফোর (Reflective cell)।
 

ক্রোমাটোফোর, পিগমেন্ট দ্বারা রঙ উৎপন্ন করে। আর ইরিডোফোর, আলো প্রতিফলিত করে ত্বকের রঙে ঝলক যোগ করে।আবার লিউকোফোর, রঙকে হালকা বা উজ্জ্বল করে, কখনও শূন্য আলো শোষণ করে। এগুলি একত্রে কাজ করে গিরগিটির রঙকে সেকেন্ডের মধ্যে পরিবর্তন করতে সক্ষম। যেমন—সবুজ থেকে বাদামী, হলুদ থেকে লাল বা সাদা রঙে রূপান্তর।
 

রঙ পরিবর্তন মূলত তিনটি স্তরে হয়:

১. মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণ অর্থাৎ পিগমেন্ট কণার বিস্তার বা সঙ্কোচন

২. প্রতিফলন ও শোষণ নিয়ন্ত্রণ বা ইরিডোফোর ও লিউকোফোর দ্বারা আলো পরিচালনা

৩. স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোন নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ বা আবহাওয়ার সঙ্কেত অনুযায়ী কোষ সক্রিয় হয়
 

রঙ পরিবর্তনের প্রধান কারণ:

১. পরিবেশের সঙ্গে ছদ্মবেশ (Camouflage):গিরগিটি শিকারি থেকে বাঁচতে আশেপাশের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে রঙ পরিবর্তন করে। উদাহরণ: সবুজ পাতায় সবুজ গিরগিটি, শুকনো শাখায় বাদামী গিরগিটি। এটি একটি প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা, যেখানে প্রাণী নিজের নিরাপত্তার জন্য অবচেতনভাবে পরিবেশ বিশ্লেষণ করে।
 

২. মানসিক অবস্থা বা ভয়:শিকারি দেখলেই বা বিপদের সম্মুখীন হলে রঙের তীব্রতা বেড়ে যায়।এই প্রক্রিয়ায় রঙের পরিবর্তন ভয় বা আতঙ্ক প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।কখনও রঙের বৃদ্ধি বা দাগ তৈরি শিকারিকে বিভ্রান্ত করে এবং পালানোর সুযোগ দেয়।

৩. সামাজিক যোগাযোগ ও প্রজনন: পুরুষ গিরগিটি স্ত্রীকে আকৃষ্ট করতে উজ্জ্বল রঙ ধারণ করে, বিশেষ করে mating season-এ।প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষকে হুমকি দেখাতে রঙ বদলানো হয়,যা শারীরিক শক্তি ও আধিপত্যের বার্তা বহন করে।
 

গবেষকরা দেখেছেন, গিরগিটি শুধু স্বয়ংক্রিয়ভাবে রঙ পরিবর্তন করে না।এটি দৃষ্টি এবং চারপাশের আলো, তাপমাত্রা, পটভূমি বিশ্লেষণ করে রঙ পরিবর্তন করে। অর্থাৎ, রঙ পরিবর্তন কেবল ভয় নয় এটি সচেতন বুদ্ধিমত্তার ফল। উদাহরণ: একই গাছের শাখায় বসা দুই গিরগিটির মধ্যে একটির রঙ আরও দ্রুত পরিবর্তিত হয় যদি শিকারি দৃষ্টিতে আসে।এটি দেখায় যে, গিরগিটি নিজের চারপাশের পরিস্থিতি অনুযায়ী রঙ পরিবর্তন করতে "শিখেছে", যা বুদ্ধিমত্তার চিহ্ন।

 

গিরগিটি রঙ পরিবর্তন করতে সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট সময় নেয়।

☞ ছোট ঝাপসা রঙের পরিবর্তন, দ্রুত আতঙ্ক বা আনন্দ প্রকাশ।

☞ বড় রঙের রূপান্তর, দীর্ঘমেয়াদী camouflage বা mating display বোঝায় ।
 

হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা-

এড্রেনালাইন হরমোন রঙের পিগমেন্টের বিস্তার বাড়ায়।স্নায়ুতন্ত্রের সংকেত কোষকে সক্রিয় করে তীব্র রঙ তৈরি করে।ফলে, রঙ বদলানো শুধু আবেগ নয়, স্নায়ুতন্ত্র–হরমোন সমন্বয়ের ফল।

গিরগিটির রঙ পরিবর্তন প্রকৃতির এক নিখুঁত কৌশল। এটি ভয়কে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মিলিয়ে প্রায় মানবসদৃশ কৌশল অবলম্বন করে, যা প্রকৃতির এক বিস্ময়কর উদ্ভাবন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ