ডলফিন কি সত্যিই হাসে? জানুন মজার তথ্য
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সমুদ্রের নীল জলে যখন ডলফিন লাফিয়ে ওঠে, ঠোঁটের মতো বাঁকানো মুখের কোণে এক অদ্ভুত হাসি দেখা যায়। সেই দৃশ্য দেখে যে কেউই বলবে - "দেখো, ডলফিন হাসছে!" তাদের চোখের উজ্জ্বলতা, মুখের ভাঁজ, আর খেলাধুলার ভঙ্গিমা সত্যিই এমন এক আনন্দের ছোঁয়া দেয়, যেন তারা প্রকৃতির সবচেয়ে হাসিখুশি প্রাণী। কিন্তু প্রশ্ন হলো- ডলফিন কি সত্যিই হাসে, নাকি সেটা কেবল মানুষের চোখের ভুল ধারণা!
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডলফিনের মুখের গঠন এমন যে, সেটি সবসময় একধরনের হাসির মতো লাগে।তাদের ঠোঁটের কোণ উপরের দিকে বাঁকানো, ফলে মুখটা সবসময় "হাস্যোজ্জ্বল" দেখায়।।কিন্তু বাস্তবে, ডলফিনরা মানুষের মতো আনন্দ পেয়ে হাসে না।তবে এর মানে এই নয় যে ডলফিনের মুখভঙ্গি অর্থহীন।বেশিরভাগ প্রাণীর মতো ডলফিনও দেহভঙ্গি, শব্দ, ও আচরণের মাধ্যমে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে। তাদের "হাসির মতো মুখ" আসলে এক প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, যা হাজার বছরের বিবর্তনের ফল।
ডলফিন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান সামুদ্রিক প্রাণী।তারা কেবল জটিলভাবে যোগাযোগ করে না, তাদের মধ্যে সহানুভূতি, বন্ধুত্ব, এমনকি শোক প্রকাশের ক্ষমতাও আছে।অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, আহত বা অসুস্থ সঙ্গীর পাশে ডলফিনরা ভেসে থাকে, তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, কখনও কখনও মৃত ডলফিনকেও ঘিরে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে।অর্থাৎ, তারা আবেগ অনুভব করতে পারে। কিন্তু তাদের মুখভঙ্গি সেই আবেগ প্রকাশ করে না মানুষের মতো। তাদের "হাসি" নয়, তাদের "শব্দ ও আচরণ" হলো আসল ভাষা।
ডলফিনরা যোগাযোগ করে "সিটিং" (whistles), "চির্পিং" (chirps), "ক্লিকস" (clicks), এমনকি শরীরের গতিবিধির মাধ্যমে। প্রতিটি শব্দের আলাদা মানে থাকে -
কোনোটা ডাক, কোনোটা সতর্কবার্তা, আবার কোনোটা আনন্দ বা কৌতূহলের ইঙ্গিত।বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, খেলাধুলা বা সাঁতারের সময় ডলফিনদের সিটিং ও ক্লিকসের গতি বাড়ে, যা একধরনের উদ্দীপনা বা উত্তেজনার প্রকাশ। তখন তাদের মুখে 'হাসির মতো' ভাঁজ আরও স্পষ্ট হয়, ফলে মনে হয় তারা হাসছে।আসলে সেটি আনন্দের নয়, বরং এক ধরনের "যোগাযোগ সংকেত"।
এদেত মস্তিষ্ক অত্যন্ত উন্নত। তাদের কর্টেক্সে (cerebral cortex) থাকা স্নায়ুকোষের ঘনত্ব মানুষের সমান, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বেশি।এই কারণেই তারা শেখে, স্মরণ রাখে, এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে।একটি বিখ্যাত গবেষণায় দেখা গেছে, ডলফিনরা আয়নায় নিজেদের চিনতে পারে, যা আত্মচেতনার অন্যতম প্রমাণ। এমন আচরণ খুব অল্প কয়েকটি প্রাণীর মধ্যেই দেখা যায়, যেমন: মানুষ, শিম্পাঞ্জি, হাতি এবং ডলফিন। এই আত্মসচেতনতার কারণেই তাদের আচরণে মাঝে মাঝে এমন অভিব্যক্তি দেখা যায়, যা আমাদের কাছে "হাসি" বলে মনে হয়।
যখন ডলফিনরা আনন্দে থাকে, তারা দ্রুত লাফায়, জলের ওপরে খেলাধুলা করে, সঙ্গীর পাশে ঘুরে বেড়ায়, কখনও মানুষের নৌকার পাশে এসে খেলে।এই আচরণগুলো তাদের সুখ বা উত্তেজনার ইঙ্গিত দেয়।অর্থাৎ, তারা সত্যিই আনন্দ পায়, তবে সেটা মানুষের মুখের হাসির মতো নয়;তাদের হাসি চোখে নয়, আচরণে প্রকাশ পায়।
আমরা মানুষ নিজেদের অনুভূতি দিয়ে অন্য প্রাণীর আচরণ ব্যাখ্যা করতে ভালোবাসি। ডলফিনের মুখে সেই বাঁকানো হাসিটাও তাই আমরা আনন্দের প্রতীক হিসেবে দেখি।বাস্তবে, সেটা কেবল মুখের আকৃতি, আর তার ভেতরে লুকিয়ে আছে এক জটিল, বুদ্ধিদীপ্ত যোগাযোগের ভাষা,যা আমরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারিনি।
ডলফিন হয়তো মানুষের মতো হাসে না, কিন্তু তারা এমনভাবে অনুভব করে, যা আমাদের হাসির চেয়েও গভীর। তারা সংবেদনশীল, বুদ্ধিমান, এবং সমাজবদ্ধ প্রাণী, যারা সম্পর্ক গড়ে, যোগাযোগ রাখে, এমনকি কখনও মানুষের সঙ্গেও বন্ধুত্ব করে। তাদের মুখে থাকা সেই চিরচেনা হাসি তাই আসলে প্রকৃতির এক সুন্দর প্রতারণা— দেখতে হাসি, কিন্তু ভেতরে এক ভাষাহীন বুদ্ধিমত্তা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।