বনায়ন না করলেই জলবায়ু তহবিল বন্ধ, আন্তর্জাতিক চাপে বাংলাদেশ!

বনায়ন না করলেই জলবায়ু তহবিল বন্ধ, আন্তর্জাতিক চাপে বাংলাদেশ!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

উনিশ-বিশের পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতে সর্বগ্রাসী ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় একদিকে আন্তর্জাতিক সমাজ বলছে, বন ও গাছপালা বৃদ্ধিতে দ্রুত অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে, অন্যদিকে তহবিল ও সহায়তা দানে শর্তে বসেছে। অর্থাৎ, যদি বনায়ন বা বনসংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হয় , তাহলে জলবায়ু তহবিল হারিয়ে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল ও শর্ত-

বর্তমানে বিশ্বের উন্নয়নসংস্থা ও তহবিলদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো দেখছে - শুধু অর্থ দেওয়া আর শর্ত লেখা হয় কাজ শেষ হয় না। তারা চায় পরিমাপযোগ্য ফলাফল। যেমন, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, বনভূমির বৃদ্ধি, প্রকল্পে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ। উদাহরণস্বরূপ, Green Climate Fund (GCF)–র ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, বাংলাদেশের জন্য তাদের প্রকল্প অনুমোদন রয়েছে যা উপকূলীয় এলাকায় লবণবৃদ্ধি ও বন্যার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য বনভিত্তিক অভিযোজন পরিকল্পনায় কাজ করছে।একই সঙ্গে, Transparency International Bangladesh–এর একটি রিপোর্ট বলছে, তহবিল প্রশাসনে গভর্নেন্স ঘাটতি রয়েছে,  অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগছে কি না, প্রকল্পগুলো সময়মতো বিষয়ে আসে কি না। এই অবস্থায়, বন সংরক্ষণ ও বনায়নের কাজ শুধু দেশের পরিবেশ রক্ষার বিষয় নয় এটি আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা ও অর্থায়ন ধরে রাখার পরীক্ষাও হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, যদি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দেখেন যে কোনো দেশ দৃশ্যমান, মাপকযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে পারছে না, তাহলে তারা তাদের তহবিল বা সহায়তা সরলভাবে কমিয়ে দিতে পারে।
 

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা-

২০২৫ সালের বাজেট প্রস্তাবনায় Ministry of Environment, Forest and Climate Change–র জন্য প্রায় ২,১৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা আগের বছরের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে সেইসাথে বলা হয়েছে দেশের মোট বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৫.৫৮ শতাংশ,  যা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অপ্রচুর বলেই বিবেচিত। এদিকে, বনভূমি ক্ষয়ের হুমকি এখনও বড়। অনুসন্ধান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মাত্র এক সপ্তাহে বাংলাদেশে ১৬টি বনক্ষয় অ্যালার্ট দেখা গেছে। অর্থাৎ, পরিবারে বাড়ছে সংবেদনশীলতা, বাজেটে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।  তবে মাঠপর্যায়ে বন সংরক্ষণ‑বনায়নের কাজ এখনও চ্যালেঞ্জপূর্ণ। এখানে শুধু গাছ লাগানোই নয়, তার পরবর্তী পরিচর্যা, টিকে থাকা বনপ্রকৃতিকাঠামো তৈরি, ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও জরুরি।
 

কোথায় ঘাটতি ও বাধা?

⇨ মান ও টিকিয়ে রাখার বিষয়টি পিছিয়ে: শুধু "গাছ লাগানো হয়েছে" বলে কাজ শেষ হয় না; গাছ কতদিন টিকে আছে, কতটা প্রকৃত বনায়ন হয়েছে, বনভূমি অর্জনের পর তার সুরক্ষা হয় কি না- এসব এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাচাইয়ের বিষয়।

⇨ স্থানীয় অংশগ্রহণ কম: অনেক প্রকল্পে দেখা গেছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা কম থাকায় প্রকল্প শেষ হলে তারা বন সুরক্ষায় অনাগ্রহী হয়।

⇨ নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং দুর্বল: তহবিলপ্রাপ্ত প্রকল্প‑কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও ফলাফল মাপার ক্ষেত্রে প্রতিবেদন, স্যাটেলাইট চিত্র, তথ্যভিত্তিক মনিটরিং এখনও সব জায়গায় নেই।

⇨ গভর্নেন্স ও স্বচ্ছতার ঘাটতি: যেমন Transparency International‑এর রিপোর্টে উল্লেখ আছে, তহবিল ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত নিরীক্ষা, তথ্যপ্রকাশ ও পর্যবেক্ষণ নেই।

⇨ ভবিষ্যতের হুমকি বাড়ছে: যেমন একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতি ২০৫০ সালের মধ্যে ভূমি প্রায় ১৭ শতাংশ হারাতে পারে সমুদ্রপৃষ্ঠের উর্ধ্বগতির কারণে, কৃষি উৎপাদনও ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে। 
 

সুযোগ ও করণীয়-

☞ উন্নত মোনিটরিং ও প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানো।  স্যাটেলাইট চিত্র, ড্রোন, জিআইএস‑ভিত্তিক মানচিত্র ব্যবহার করে বনভূমি পরিবর্তন নিয়মিত মাপা ও রিপোর্ট করা জরুরি।

☞ স্থানীয় সমিতি ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। যারা বনভূমি কাছ থেকে জীবিকা নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়িয়ে বন সুরক্ষায় উৎসাহ দেয়া যেতে পারে।

☞ বাগান থেকে বনায়ন‑পরবর্তী পরিচর্যা পর্যন্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা। গাছ লাগানোর পর পরিচর্যা, পানি সেচ, বনভূমির সার্বক্ষণিক রক্ষা, আইন প্রয়োগ থাকবে।

☞ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কাজে লাগানোর ক্ষমতা বাড়ানো। যেমন, বাংলাদেশের জন্য UNDP‑র একটি উদ্যোগ বলছে যে, সেটা ২০২৫ সালের শুরুতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করেছে "global climate finance architecturs" বিষয়ে। 

☞ নীতিমালা ও আইনকে বাস্তবায়নে রূপ দেওয়া। শুধু একটি ঘোষণা বা পরিকল্পনা নয়, যে আইন রয়েছে, তার বাস্তব প্রয়োগ ও স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে।

 

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য বন সংরক্ষণ ও বনায়নের কাজ একাধিক স্তরে টিকিয়ে রাখার অভীষ্ট। এটি শুধুই হালকা প্রকল্প নয়, এটি জলবায়ু অভিযোজনে অবিচ্ছেদ্য অংশ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অর্থায়ন টিকিয়ে রাখার এক নির্ধারক। যদি আগামী কয়েক বছরে দেশ গুণগতভাবে বনভূমি বৃদ্ধি, বজায় রাখা ও স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে "বন না হলে তহবিল বন্ধ"‑এর ভয় কেবল শ্লোগান থাকবে না, বাস্তবতায় পরিণত হতে পারে। আর তখন এই দেশে শুধু পরিবেশগত ঝুঁকি নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির সম্ভাবনাও দ্রুত বেড়ে যাবে। যেমন, উপকূলীয় সম্পদ হ্রাস, ভূমি ক্ষয়, কৃষিকাজ বাধাগ্রস্ত হওয়া। 

বাংলাদেশ এখন এমন এক মোড়ের সামনে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বন ও প্রকৃতি রক্ষাকে শুধু দৃষ্টান্তমূলক হিসেবে নয়, কৌশলগত ও কার্যকর বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সময় কম, কাজ বেশি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ