ডার্ক ওয়েব: অদৃশ্য, অবিশ্বাস্য এবং বিপজ্জনক

জানুন এর ভয়ঙ্কর গল্প
ডার্ক ওয়েব: অদৃশ্য, অবিশ্বাস্য এবং বিপজ্জনক
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। আমরা গুগল করি, সামাজিক যোগাযোগ করি, কেনাকাটা করি, তথ্য খুঁজি সবই সাধারণ ব্রাউজারের মাধ্যমে। কিন্তু এর বাইরে আছে এক অদৃশ্য, রহস্যময় এক জগৎ, ডার্ক ওয়েব। যেখানে সাধারণ আইনের নাগাল পৌঁছায় না, এবং ব্যবহারকারার পরিচয় প্রায়ই গোপন থাকে।ডার্ক ওয়েব কেবল অপরাধের কেন্দ্র নয়; এটি তথ্যের গোপনীয়তা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং নিরাপদ যোগাযোগের জন্যও ব্যবহৃত হয়। তবে এতে প্রবেশ করা বিপজ্জনক- ম্যালওয়্যার, হ্যাকিং এবং আইনি জটিলতার ঝুঁকি সর্বদা থাকে।

ডার্ক ওয়েব কী?

ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেটের সেই অংশ যা সার্চ ইঞ্জিনে পাওয়া যায় না।বিশেষ সফটওয়্যার বা ব্রাউজারের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো TOR ব্রাউজার। ওয়েবসাইটের ঠিকানা লুকানো থাকে। ব্যবহারকারার পরিচয় গোপন থাকে। এটি মূলত গোপনীয়তা রক্ষা ও স্বাধীন যোগাযোগের জন্য তৈরি, তবে এটি অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্যও ব্যবহৃত হয়। ডার্ক ওয়েবকে বোঝার জন্য পুরো ইন্টারনেটকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
 

☞ ক্লিয়ার ওয়েব (Clear Web): সার্চ ইঞ্জিনে সহজে পাওয়া যায়। উদাহরণ: গুগল, ফেসবুক।

☞ ডীপ ওয়েব (Deep Web): পাসওয়ার্ড বা সাবস্ক্রিপশন ছাড়া প্রবেশ করা যায় না। উদাহরণ: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, স্বাস্থ্য তথ্য।

☞ ডার্ক ওয়েব (Dark Web): সম্পূর্ণ গোপন এবং আইনের চোখে প্রায় অদৃশ্য, যেখানে অনেক অপরাধমূলক লেনদেন হয়।
 

ডার্ক ওয়েবে কার্যক্রম

১. বৈধ ব্যবহার: ডার্ক ওয়েব শুধুই অপরাধের কেন্দ্র নয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি নিরাপদ ও বৈধ ব্যবহারে আসে:

⇨ সাংবাদিকতা ও হুইসেলব্লোয়ারস: oppressive সরকার বা সেন্সরশিপের সময় তথ্য গোপনভাবে শেয়ার করা।

⇨ স্বাধীন মত প্রকাশ: রাজনৈতিক দমন, সেন্সরশিপ, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য গোপন যোগাযোগ।

⇨ গোপন ব্যবসায়িক যোগাযোগ: কোম্পানি বা গবেষকরা কিছু সংবেদনশীল তথ্য আদানপ্রদানে ব্যবহার করতে পারেন।

 

২. অবৈধ ব্যবহার: ডার্ক ওয়েবের কুখ্যাত দিকগুলো হলো:

⇨ ড্রাগ, অস্ত্র ও হ্যাকিং সার্ভিস: সহজে কেনাবেচা হয়, পণ্যের উৎস গোপন থাকে।

⇨ হ্যাকড ডেটা ও পরিচয় চুরি: ক্রেডিট কার্ড, পাসওয়ার্ড, ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি।

⇨ অপরাধমূলক ফোরাম ও চ্যাট: হত্যার পরিকল্পনা, প্রতারণা বা সাইবারক্রাইম নিয়ে আলোচনা।

 

ডার্ক ওয়েবের বিপদ ও ঝুঁকি:

ডার্ক ওয়েবের ব্যবহার সহজ না হলেও কৌতূহল মানুষকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু এর বিপদও কম নয়:

⇨ ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস: ব্রাউজার বা ফাইলের মাধ্যমে সহজে সংক্রমণ।

⇨ আইনি জটিলতা: এখানে অনৈতিক বা অবৈধ লেনদেনে জড়ালে কঠোর শাস্তি।

⇨ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি: হ্যাকার বা অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা।

⇨ মানসিক প্রভাব: অনৈতিক বা ভয়ঙ্কর কনটেন্টের কারণে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ।

 

মানুষ প্রাকৃতিকভাবে "forbidden knowledge" বা অজানা জিনিসে আগ্রহী। ডার্ক ওয়েব সেই কৌতূহলকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে।তবে সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা এবং সাংবাদিকরা ডার্ক ওয়েবকে একটি নিরাপদ গোপন চ্যানেল হিসেবে ব্যবহার করেন। অদৃশ্যতার কারণে এখানে আইন প্রায় কার্যকর হয় না। এর ফলে অপরাধমূলক কার্যক্রমের সৃষ্টি হয়, যা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে।
 

ডার্ক ওয়েবে প্রবেশের নিয়ম ও সতর্কতা:

⇨ শুধুমাত্র বৈধ উদ্দেশ্যে প্রবেশ করুন।

⇨ TOR বা অন্যান্য নিরাপদ ব্রাউজার ব্যবহার করুন।

⇨ VPN, অ্যানোনিমাইজার এবং নিরাপদ সফটওয়্যার ব্যবহার করা অপরিহার্য।

⇨ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংক বা পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য কখনো শেয়ার করবেন না।

 

ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেটের অদৃশ্য, রহস্যময় এবং ঝুঁকিপূর্ণ দিক। এটি স্বাধীন মত প্রকাশ, গোপন তথ্য আদানপ্রদানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও অপরাধের উৎসও হতে পারে। সাধারণ মানুষকে কৌতূহল থাকলেও প্রবেশের সময় সতর্কতা, নিরাপদ সফটওয়্যার এবং আইনি সচেতনতা অপরিহার্য।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ