জিয়াউর রহমানের মুক্তি,৭ নভেম্বরের সিপাহি বিদ্রোহ

জিয়াউর রহমানের মুক্তি,৭ নভেম্বরের সিপাহি বিদ্রোহ
ছবির ক্যাপশান, জিয়াউর রহমানের মুক্তি,৭ নভেম্বরের সিপাহি বিদ্রোহজিয়াউর রহমানের মুক্তি,৭ নভেম্বরের সিপাহি বিদ্রোহ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাস বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে নানামুখী সামরিক উত্তালতার সময় হিসেবে বিবেচিত। ৩ নভেম্বর তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে নিজ বাসভবনে আটকে রাখার মাধ্যমে যে পরিস্থিতির সূচনা হয়, তা পরবর্তী চার দিন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব, কমান্ড কাঠামো এবং রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় এক জটিল ও অনিশ্চিত অবস্থার জন্ম দেয়।

 অবশেষে ৭ নভেম্বর সকালে সিপাহি-সৈনিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণে পাল্টা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং সেই অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা ও লে. কর্নেল হায়দার নিহত হন। স্বাধীনতার পরের প্রথম দশকের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (বীরবিক্রম) তাঁর গ্রন্থ ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য’-তে এ সময়ের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।

লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী, ৩ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যত রাষ্ট্রের প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কমান্ড কাঠামো প্রায় অচল অবস্থায় ছিল। সেনানিবাসে সৈন্যদের মধ্যে অস্বাভাবিক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার নামে প্রচারপত্র বিতরণ সেনাবাহিনীর বিদ্যমান শৃঙ্খলা প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জেল হত্যার খবর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে।

৭ নভেম্বর রাতের মধ্যবর্তী সময়ে ঢাকার সেনানিবাসে ব্যাপক গুলিবর্ষণের সূত্র ধরে জিয়াউর রহমানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি ঘটে এবং তাঁকে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি ইউনিটে নেওয়া হয়। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল তাহের রেডিও স্টেশনে গিয়ে রাজনৈতিক ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দিলেও সেই প্রস্তাব আংশিক মতবিরোধ সৃষ্টি করে। একইদিন শেরে বাংলা নগরে ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা এবং লে. কর্নেল হায়দার নিহত হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাপ্রধান জিয়া সেনা মিলনায়তনে সৈন্যদের সামনে বক্তব্য দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও দাবি-দাওয়া ও উত্তেজনার বহর এতটাই প্রকট ছিল যে এক পর্যায়ে তিনি পদত্যাগের ইঙ্গিতও দেন। পরবর্তীতে ঢাকার বাইরে থেকে অতিরিক্ত পদাতিক ইউনিট এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয় এবং সেনানিবাসের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

এই ঘটনার পর নতুন করে সেনাকাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হয়। ঢাকায় নবম ডিভিশন গঠন করা হয় এবং ব্রিগেডিয়ার মীর শওকত আলীকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে ডিভিশন কমান্ডার করা হয়। লেখকের মতে, যদি ৭ নভেম্বর সেনানিবাসে সৈন্যদের উচ্ছৃঙ্খলতা নিয়ন্ত্রণে না আনা যেত, তাহলে সামরিক-বেসামরিক উভয় পর্যায়ে একটি অনিয়ন্ত্রিত শ্রেণী-সংঘর্ষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারত।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ