গুগল-মেটার মতো ডেটা সেন্টারগুলোতে বছরে পানি খরচ হয় ৮০ হাজার কোটি লিটার
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগতিতে বাড়ছে ডেটা সেন্টারের নির্মাণ ও সম্প্রসারণ। তবে এসব ডেটা সেন্টার কেবলমাত্র বিদ্যুৎ ও জমির ওপর নির্ভরশীল নয়, বিপুল পরিমাণ পানিরও প্রয়োজন হয় তাদের কার্যক্রম পরিচালনায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে দেশটির ডেটা সেন্টারগুলো প্রায় ১৭ বিলিয়ন গ্যালন (৬৪ বিলিয়ন লিটার) পানি সরাসরি ব্যবহার করেছে ঠান্ডা রাখার কাজে, যা ২০২৮ সালের মধ্যে দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ হতে পারে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরোক্ষভাবে আরও ২১১ বিলিয়ন গ্যালন (৮০০ বিলিয়ন লিটার) পানি ব্যবহৃত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেক মিশিগানের তীরে অবস্থিত ওয়াটার সায়েন্সেস স্কুলের গবেষক মেলিসা স্ক্যানলান ও ওয়াটার পলিসি বিশেষজ্ঞ পেটন ম্যাককলি তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখিয়েছেন, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো প্রায়ই তাদের ডেটা সেন্টারের পানিব্যবহার সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করে না। তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আইওয়া অঙ্গরাজ্যের একটি ডেটা সেন্টার একাই এক বিলিয়ন গ্যালন (৩.৮ বিলিয়ন লিটার) পানি ব্যবহার করেছে, যা দিয়ে পুরো আইওয়ার আবাসিক পানির পাঁচ দিনের চাহিদা পূরণ সম্ভব।
ডেটা সেন্টারের অভ্যন্তরে হাজার হাজার সার্ভার ও রাউটার ক্রমাগত কাজ করার ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, যা ঠান্ডা রাখতে ব্যবহৃত হয় বিপুল পরিমাণ পানি। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় কমিউনিটির মোট পানির ২৫ শতাংশেরও বেশি খরচ হয়ে যায় এই শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে শুধু গুগল একাই তাদের সব ডেটা সেন্টার ঠান্ডা রাখতে ছয় বিলিয়ন গ্যালন (২৩ বিলিয়ন লিটার) পানি ব্যবহার করেছে।
এই শীতলীকরণ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে দুটি প্রধান পদ্ধতি, এভাপোরেটিভ বা বাষ্পীকরণভিত্তিক পদ্ধতি, যেখানে পানি ব্যবহার শেষে বাষ্প হয়ে যায়; এবং ক্লোজড-লুপ সিস্টেম, যেখানে পানি পুনর্ব্যবহার করা হয়, তবে এতে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। এসব সিস্টেমে কতটুকু পানি পুনরায় ব্যবহার হয় বা হারিয়ে যায়, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য সাধারণত প্রকাশ করা হয় না।
গবেষকরা জানান, পানিব্যবহারের প্রকৃত চিত্র নির্ণয়ে সরকারি তথ্য পাওয়া কঠিন, কারণ অনেক সময় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোম্পানির গোপনীয়তার কারণ দেখিয়ে এসব তথ্য প্রকাশ করে না। ফলে গবেষকরা নির্ভর করেন কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত টেকসই উন্নয়ন বা সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টের ওপর। এসব প্রতিবেদনে অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, মেটা, ডিজিটাল রিয়েলটি ও ইকুইনিক্সসহ বড় কোম্পানিগুলোর তথ্য পাওয়া গেলেও সেগুলোর উপস্থাপন পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় তুলনামূলক বিশ্লেষণ কঠিন।
মেটা ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী মোট ৮১৩ মিলিয়ন গ্যালন (৩.১ বিলিয়ন লিটার) পানি ব্যবহার করেছে, যার ৯৫ শতাংশই তাদের ডেটা সেন্টারগুলোতে ব্যয় হয়েছে। গুগলের ক্ষেত্রে ২০২৪ সালে আইওয়ার কাউন্সিল ব্লাফসের ডেটা সেন্টার একাই এক বিলিয়ন গ্যালন পানি ব্যবহার করেছে, যা তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ। অপরদিকে টেক্সাসের প্লুগারভিলে অবস্থিত একটি এয়ার-কুলড ডেটা সেন্টার বছরে মাত্র ১০ হাজার গ্যালন পানি ব্যবহার করেছে, একটি গড় টেক্সাস পরিবারের দুই মাসের পানির সমান।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন, এআই প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তারে ডেটা সেন্টারের সম্প্রসারণ আরও বাড়বে, কিন্তু পর্যাপ্ত ও স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশ না থাকায় স্থানীয় সরকার ও জনগণ পূর্ণ ধারণা ছাড়াই এসব স্থাপনা অনুমোদন দিচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে স্থানীয় পানিসম্পদ, বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ পানি ও লেক মিশিগানের মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।