প্রতিদিন কাঠবেল খেলেই শরীর হবে ডিটক্স ও শক্তিতে ভরপুর!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
কাঠবেল বা Wood Apple (বৈজ্ঞানিক নাম Limonia acidissima) দক্ষিণ এশিয়ার এক প্রাচীন ফল। ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি শতাব্দীর ওষুধি ফল হিসেবে পরিচিত। এটি শুধু খাবার নয়, বরং বহু ধরনের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক ঔষধ।
কাঠবেল একটি পুষ্টিকর এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল, যার মধ্যে রয়েছে:
⇨ ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক উজ্জ্বল করে।
⇨ ফাইবার ও পেকটিন: হজম সহজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
⇨ মিনারেলস: ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস – হাড় ও রক্ত গঠনে সহায়ক।
⇨ ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস: কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করে।
⇨ অ্যাসিডিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান: অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠবেল নিয়মিত ব্যবহারে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
আয়ুর্বেদ অনুসারে কাঠবেল তিনটি দোষ –গ্যাস, পিত্ত, কফ – নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
⇨ হজম ও পেটের সমস্যা:খোসা ও রস হজম শক্তি বাড়ায়।অম্বল, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের সংক্রমণ কমায়।
⇨ ডায়রিয়া ও অন্ত্রের সংক্রমণ: অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
⇨ ত্বক ও চুলের যত্ন:ত্বকে ফোলাভাব কমায়, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
⇨ ডায়াবেটিস ও রক্তের সুস্থতা:রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হরমোন ও বিপাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঠবেল নিয়মিত ব্যবহারে সার্বিক স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
খাওয়ার ও ব্যবহার পদ্ধতি
⇨ পাকা অংশ খেলে প্রাকৃতিক স্বাদ ও পুষ্টি পাওয়া যায়।
⇨ রস বা জুস, মধু বা চিনি মিশিয়ে পুষ্টিকর পানীয়।
⇨ পাউডার বা গুঁড়া, আয়ুর্বেদিক ওষুধ বা ত্বকের প্যাক।
⇨ চাটনি ও মোরব্বা, সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর।
⇨ ওষুধের সাথে ব্যবহার, আয়ুর্বেদিক প্রস্তুতিতে প্রায়ই কাঠবেলের রস ও গুঁড়া যোগ করা হয়।
টিপস: শুকনো রস বা গুঁড়া সংরক্ষণ করলে সারাবছর ব্যবহার করা যায়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব: কাঠবেলের রস ও পাউডার বিভিন্ন সংক্রমণ ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর।
গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠবেল লিভার ফাংশন উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কাঠবেলের উপাদান গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রভাব ত্বক ও চুলকে সুরক্ষা দেয়।
গবেষকরা মনে করেন, নিয়মিত এবং পরিমিত ব্যবহারে কাঠবেল সার্বিক স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
সতর্কতা ও ব্যবহারের পরামর্শ
☞ অতিরিক্ত খেলে পেটে অস্বস্তি বা ডায়রিয়া হতে পারে।
☞ অনেকের অ্যালার্জি পরীক্ষা থাকতে পারে। প্রথমবার ব্যবহার করলে অল্প পরিমাণে চেষ্টা করা উত্তম।
☞ গর্ভাবস্থা বা ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
☞ অতিরিক্ত চিনি মিশিয়ে জুস বানানো এড়ানো উচিত, যাতে রক্তের শর্করা বাড়ে না।
কাঠবেল বা Wood Apple শুধুমাত্র একটি ফল নয়, এটি শতাব্দীর আয়ুর্বেদি ওষুধি উৎস।এটি ত্বক, চুল, হজম ও সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। নিয়মিত ও পরিমিত ব্যবহার ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।প্রাকৃতিক, নিরাপদ এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত – এটি সত্যিই শতাব্দীর স্বাস্থ্যকর ফল।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।