প্রতিদিনের লিপস্টিকই কি ত্বকের বার্ধক্যের মূল কারণ!-জানুন বিস্তারিত
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য লিপস্টিক কেবল সৌন্দর্যের এক উপকরণ নয়। এটি ঠোঁট এবং আশেপাশের ত্বকের স্বাস্থ্য ও যত্নে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।আমাদের ঠোঁটের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল ও পাতলা, তাই লিপস্টিকের উপাদান, ফর্মুলা, ব্যবহারের নিয়ম এবং ব্যবহারের ঘনত্ব, সবই ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে।
লিপস্টিকের উপাদান এবং প্রভাব
১. কালার পিগমেন্ট ও ডাই: লিপস্টিকের রঙ পিগমেন্ট বা ডাই-এর মাধ্যমে আসে।কিছু কম মানের পিগমেন্ট অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে ঠোঁটের চারপাশে লালচে বা অমসৃণ দাগ দেখা দিতে পারে।কিছু রঙিন ডাই সূর্যের আলোতে বিক্রিয়াশীল হয়ে ফ্রি র্যাডিকাল ক্ষতি বাড়াতে পারে, যা ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে।
২. ওয়াক্স ও অয়েল: লিপস্টিককে মসৃণ ও মোল্ডেবল রাখতে বিভিন্ন ধরণের ওয়াক্স (যেমন ক্যার্নাবা বা ক্যান্ডেলিয়ার ওয়াক্স) এবং অয়েল ব্যবহার হয়। ভারী ওয়াক্স বা তেলের উপস্থিতি ঠোঁটের প্রাকৃতিক তৈল নিঃসরণে বাধা দিতে পারে।ফলস্বরূপ, ঠোঁট শুষ্কতা, ফাটল এবং চুলকানি দেখা দিতে পারে।
৩. সংরক্ষণকারী উপাদান:প্যারাবেন, ফরমালডিহাইড বা অন্যান্য কেমিক্যাল সংরক্ষণকারী উপাদান ঠোঁটের সংবেদনশীল ত্বকে অ্যালার্জি বা সংক্রমণ ঘটাতে পারে।সংবেদনশীল ত্বকের ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হলে ছিদ্রিত ত্বক ও ছোট ফোসকা তৈরি হতে পারে।
৪. ময়েশ্চারাইজার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:আধুনিক লিপস্টিকে ভিটামিন E, Shea Butter বা অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।এটি ঠোঁটের শুষ্কতা কমায়, নরম রাখে এবং ফ্রি র্যাডিকাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
ঠোঁট ও আশেপাশের ত্বকে প্রভাব-
১. ঠোঁটের শুষ্কতা ও ফাটল:ম্যাট বা দীর্ঘস্থায়ী লিপস্টিক প্রাকৃতিক তৈল নিঃসরণে বাধা দেয়।দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ঠোঁট শুষ্ক, ফাটা এবং অসুবিধাজনক হতে পারে।
২. অ্যালার্জি ও লালচে দাগ:সংবেদনশীল ত্বকে লিপস্টিকের রাসায়নিক প্রভাব চুলকানি, লালচে দাগ, বা ফোসকা তৈরি করতে পারে।বিশেষ করে সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে গেলে সূর্যের UV রশ্মি দাগকে আরও তীব্র করে।
৩. পিগমেন্টেশন বা ঠোঁটের চারপাশে কালচে দাগ: দীর্ঘমেয়াদে রঙিন লিপস্টিক ব্যবহারের ফলে চারপাশের ত্বকে পিগমেন্টেশন বৃদ্ধি পেতে পারে।ম্যাট বা ডার্ক শেড লিপস্টিকের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি।
৪. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ:ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে যদি লিপস্টিক অতিরিক্ত পুরনো বা নোংরা থাকে। এটি ঠোঁট এবং আশেপাশের ত্বকে ছোট ফোসকা, র্যাশ বা প্রদাহ তৈরি করতে পারে।
ঠোঁটের ত্বক ত্বকের অন্যান্য অংশের তুলনায় ৩–৫ গুণ পাতলা।তাই, নিয়মিত লিপস্টিক ব্যবহারে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার বাধাগ্রস্ত হয়, যা শুষ্কতা ও ফাটলের কারণ।ঠোঁটের রক্তনালি বেশি সংবেদনশীল, তাই অ্যালার্জি বা সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া দ্রুত ঘটে। ময়েশ্চারাইজার বা ভিটামিনযুক্ত লিপস্টিক ত্বকের ব্যারিয়ারকে সহায়তা করে এবং ক্ষতিকারক প্রভাব কমায়।
লিপস্টিক ব্যবহার ও ত্বকের যত্নের টিপস
☞ উচ্চমানের লিপস্টিক ব্যবহার করুন: কম কেমিক্যালযুক্ত এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত লিপস্টিক বেছে নিন।
☞ প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করুন: দীর্ঘ সময় ধরে লিপস্টিক লাগিয়ে রাখবেন না।
☞ রাতে ধোয়া জরুরি: ঘুমানোর আগে লিপস্টিক সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলুন।
☞ ঠোঁটের স্ক্রাবিং ও ময়েশ্চারাইজার: সপ্তাহে ১–২ বার ঠোঁটের হালকা স্ক্রাব করুন এবং Shea Butter বা কোকো অয়েল ব্যবহার করুন।
☞ সানস্ক্রিন যুক্ত লিপস্টিক: বাইরে গেলে SPF যুক্ত লিপস্টিক ব্যবহার করুন।
☞ মেয়াদ চেক করুন: পুরনো বা সংরক্ষণ করা লিপস্টিক ব্যবহার করবেন না।
লিপস্টিক কেবল সৌন্দর্যের জন্য নয়, ত্বকের স্বাস্থ্য ও যত্নের দিক থেকেও সচেতন ব্যবহার জরুরি।সঠিক লিপস্টিক এবং নিয়মিত পরিচর্যা ঠোঁটকে নরম, মসৃণ এবং স্বাস্থ্যকর রাখে। ভুল বা অতিরিক্ত ব্যবহার ঠোঁট শুষ্কতা, ফাটল, পিগমেন্টেশন এবং সংক্রমণ ঘটাতে পারে। মূল কথা হলো- লিপস্টিকের ব্যবহার সৌন্দর্য বাড়ায়, কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি এবং সচেতনতার সঙ্গে ব্যবহার করলে এটি ত্বকের যত্নকেও সহায়তা করে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।