বয়সের সঙ্গে অস্থিরতা কমে না প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে ADHD, গবেষণায় চমক !

বয়সের সঙ্গে অস্থিরতা কমে না প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে ADHD, গবেষণায় চমক !
ছবির ক্যাপশান, বয়সের সঙ্গে অস্থিরতা কমে না প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে ADHD, গবেষণায় চমক !
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আজকের ডিজিটাল যুগে শিশুরা যেন আগের চেয়ে আরও বেশি উদ্দীপিত, চঞ্চল, আর মনোযোগ হারানো। কিন্তু সব চঞ্চলতাই কি স্বাভাবিক? অনেক সময় যেটিকে আমরা "অতি দুষ্টুমি" বা "মনোযোগের অভাব" বলে অবহেলা করি, সেটিই হতে পারে একটি সুনির্দিষ্ট নিউরোলজিক্যাল সমস্যা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার বা ADHD (Attention Deficit Hyperactivity Disorder)।

ADHD কোনো সাধারণ আচরণগত সমস্যা নয়, বরং এটি মস্তিষ্কের বিকাশ ও কার্যপ্রণালীর সঙ্গে যুক্ত একধরনের নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার। অর্থাৎ, মস্তিষ্কের যে অংশ মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ, পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা আবেগ সংযমের কাজ করে, সেখানে রাসায়নিক বার্তা বা স্নায়ুসংযোগে সামান্য অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।

বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা গেছে, ADHD আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে ডোপামিন ও নরএপিনেফ্রিন নামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বা কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকে না। ডোপামিন মনোযোগ ও আনন্দবোধের সঙ্গে যুক্ত, আর নরএপিনেফ্রিন জাগ্রততা ও মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হলে ব্যক্তি কোনো কাজের প্রতি স্থায়ী মনোযোগ রাখতে পারে না, সহজেই বিভ্রান্ত হয়, এবং অতি সক্রিয় আচরণ প্রদর্শন করে।

ADHD সাধারণত শিশু বয়সেই প্রকাশ পায়, তবে অনেক সময় তা বড় বয়স পর্যন্ত টিকে থাকে। শিশুরা বারবার এক কাজ থেকে আরেক কাজের দিকে ছুটে যায়, বসে থাকতে পারে না, ক্লাসে মনোযোগ হারায়, হোমওয়ার্ক শেষ করতে পারে না। অনেক অভিভাবক মনে করেন,"বাচ্চাটা একটু বেশি দুষ্টু"কিন্তু বা স্তবে এটি হতে পারে ADHD-এর প্রাথমিক রূপ।

কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো

◑ অতিরিক্ত অস্থিরতা ও অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া

◑ মনোযোগ ধরে রাখতে অক্ষমতা

◑ কথা বলায় বা আচরণে অস্থিরতা

◑ নির্দেশ মেনে চলতে কষ্ট

◑ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া বা কাজের আগে না ভেবে কিছু করে ফেলা

অনেকে মনে করেন এটি কেবল শিশুদের সমস্যা, কিন্তু বাস্তবে অনেক প্রাপ্তবয়স্কও ADHD-তে ভোগেন। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি প্রকাশ পায়

◑ কাজের পরিকল্পনায় দুর্বলতা

◑ সময় ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা

◑ সহজে মনোযোগ হারানো

◑ সম্পর্ক বা পেশাগত জীবনে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সমস্যা

◑ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা থাকলে তা স্ট্রেস, উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসহীনতা আরও বাড়িয়ে দেয়।

 কারণ ও ঝুঁকিপ্রবণতা:

⇨ ADHD-এর পেছনে রয়েছে জিনগত ও পরিবেশগত উভয় প্রভাব।

⇨ পরিবারের কারও যদি ADHD থাকে, সন্তানের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

⇨ গর্ভাবস্থায় তামাক, অ্যালকোহল বা দূষণের সংস্পর্শে আসা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।

⇨ প্রি-ম্যাচিওর জন্ম ও স্বল্প ওজনের শিশুর মধ্যেও ADHD-এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা:

ADHD নিরাময়যোগ্য নয়, তবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এর চিকিৎসা মূলত তিনটি ধাপে হয়:

⇨ বিহেভিওরাল থেরাপি: শিশুর আচরণগত প্রশিক্ষণ, সময় ব্যবস্থাপনা ও মনোযোগ বাড়ানোর কৌশল শেখানো হয়।

⇨ ঔষধ: কিছু ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রে ডোপামিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ঔষধ দেওয়া হয় (শুধু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে)।

⇨ পরিবার ও স্কুলের সহায়তা: অভিভাবক ও শিক্ষক উভয়ের ধৈর্য, সহমর্মিতা ও সচেতন ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ADHD কোনো ব্যর্থতার গল্প নয়, বরং বোঝাপড়া ও সহায়তার গল্প। অনেক সময় এই শিশুরাই অন্যদের তুলনায় সৃজনশীল, দ্রুত চিন্তাশীল ও উদ্ভাবনী হয়ে ওঠে, যদি তাদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া যায়। মনে রাখা দরকার, ADHD-এ আক্রান্ত শিশুকে "অস্থির" নয়, "বিশেষ" হিসেবে দেখা উচিত। কারণ তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের চেয়ে আলাদা ছন্দে কাজ করে এবং সেই ছন্দ যদি বোঝা যায়, তারা পারে নিজের সম্ভাবনার শিখরে পৌঁছাতে।

হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার কোনো 'দুষ্টুমি'র নাম নয় এটি এক বাস্তব স্নায়ুবিক অবস্থা, যা বোঝার ও পরিচালনার প্রয়োজন আছে। সচেতনতা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে এই সমস্যাকে "অবুঝ আচরণ" থেকে "বুঝে নেওয়া মানুষের" পথে নিয়ে যেতে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ