'To Kill a Mockingbird' এক শিশুর চোখে সমাজের অন্ধকার ও মানবতার আলো

'To Kill a Mockingbird' এক শিশুর চোখে সমাজের অন্ধকার ও মানবতার আলো
ছবির ক্যাপশান, 'To Kill a Mockingbird' এক শিশুর চোখে সমাজের অন্ধকার ও মানবতার আলো
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানব সমাজে অন্যায়ের রূপ অনেক সময় এত সূক্ষ্ম যে আমরা তা চোখে দেখেও টের পাই না। মার্কিন লেখিকা হার্পার লি তাঁর অমর সৃষ্টি "To Kill a Mockingbird"–এ সেই অদৃশ্য অন্যায়ের মুখোশ খুলে দেখিয়েছেন এক শিশুর সরল চোখ দিয়ে। ১৯৬০ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি শুধু আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণবৈষম্যের কাহিনিই নয়, এটি মানবতার পরীক্ষা, নৈতিক সাহসের প্রতিচ্ছবি, এবং ন্যায়বোধের শিক্ষা।

উপন্যাসের পটভূমি ১৯৩০-এর দশকের যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা। দেশজুড়ে তখন বর্ণবৈষম্য, সামাজিক শ্রেণি বিভাজন ও ন্যায়ের বিকৃতি তীব্র। লেখিকা এক ছোট্ট মেয়ে স্কাউট ফিঞ্চ–এর চোখ দিয়ে সমাজের এসব অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন।

স্কাউটের বাবা অ্যাটিকাস ফিঞ্চ একজন সৎ আইনজীবী, যিনি এক কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ টম রবিনসনকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেন, যাকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। সমাজের চাপ, ঘৃণা ও হুমকির মাঝেও অ্যাটিকাস ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ান।

এই ঘটনাই উপন্যাসের মূল স্রোত, যেখানে পাঠক দেখেন, মানুষের রঙ নয়, বিবেকই ন্যায়বিচারের মূল মাপকাঠি।

"To Kill a Mockingbird" আমাদের শেখায় মানবাধিকারের ভিত্তি শুধু আইন নয়, বরং নৈতিকতা। অ্যাটিকাস ফিঞ্চের চরিত্রে আমরা দেখি, কিভাবে সত্যের পাশে দাঁড়ানো কখনো সহজ নয়, তবুও সেটিই মানবতার পরিচয়।
টম রবিনসনের বিচার সমাজের গভীরে প্রোথিত বর্ণবাদী মানসিকতাকে উন্মোচন করে।

স্কাউট ধীরে ধীরে শিখে নেয়- অন্যের জায়গায় দাঁড়িয়ে না দেখলে তার কষ্ট বোঝা যায় না।

অ্যাটিকাসের বার্তা ছিল স্পষ্ট-"সঠিক কাজ সবসময় জনপ্রিয় হয় না, কিন্তু তা করতেই হবে।"
- বার্তাগুলো আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধু ইতিহাস নয়, আমাদের বর্তমান বাস্তবতাও।

হার্পার লি তাঁর লেখায় দেখিয়েছেন, সমাজে অন্যায় কখনো কেবল আইনের ব্যর্থতায় নয়, বরং মানুষের নীরবতায় বেঁচে থাকে। উপন্যাসের সাদা-কালো বর্ণের বিভাজন কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস নয়, এটি প্রতিটি সমাজে বিদ্যমান ক্ষমতা ও পরিচয়ের লড়াইয়ের প্রতীক।

স্কাউটের শিশুমন পাঠককে বাধ্য করে ভাবতে
কেন একজন মানুষ কেবল তার চামড়ার রঙের জন্য ঘৃণার শিকার হবে? কেন সত্য বলার মানুষকে সমাজ একঘরে করে দেয়? - এমন প্রশ্নগুলো আজও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামী বিশ্বে সমানভাবে প্রতিধ্বনিত।

উপন্যাসের শিরোনামেই লুকিয়ে আছে প্রতীকী অর্থ 'To Kill a Mockingbird' মানে হলো এমন এক নির্দোষ প্রাণকে হত্যা করা, যে শুধু গান গায়, কাউকে ক্ষতি করে না।
এই প্রতীক বোঝায়, সমাজ যখন নির্দোষকে দোষী করে তোলে, তখন আসলে মানবতারই মৃত্যু ঘটে। হার্পার লি এই বার্তাটিই দিয়েছেন "মানুষের বিচার রঙ বা শ্রেণি দিয়ে নয়, বিবেক ও মানবতা দিয়েই হওয়া উচিত।"

To Kill a Mockingbird কেবল একটি সাহিত্যকর্ম নয়, এটি সামাজিক বিবেকের আহ্বান।
১৯৬০-এর দশকে যেমন এটি মার্কিন সমাজে বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছিল, তেমনি আজও এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়-  ন্যায়, সহানুভূতি ও মানবিক মূল্যবোধই সভ্যতার ভিত্তি। এই উপন্যাসের পাঠ মানুষকে শেখায়, একটি সমাজকে প্রকৃত অর্থে উন্নত করতে হলে, প্রথমে আমাদের নিজেদের চিন্তায় থেকে ভয়, ঘৃণা ও পক্ষপাতের দেয়াল ভাঙতে হবে।

ন্যায়বিচার কেবল আদালতের বিষয় নয়; এটি প্রতিটি বিবেকবান মানুষের দায়িত্ব।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ