ইউনুস (আ.)-এর সেই দোয়া, যা বদলে দিতে পারে জীবনের কঠিন সময়!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ইসলামের ইতিহাসে নবী ইউনুস আলাইহিস সালামের নাম শুধু এক নৈতিক উদাহরণ নয়, বরং বিপদে মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছের দো'আয়ের শক্তির পরিচায়ক। আল্লাহর নির্দেশের পূর্বেই তিনি তাঁর জনগোষ্ঠী থেকে হিজরত করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহর কাছে তার এই পদক্ষেপ অপছন্দনীয় হলে, ঘটনাক্রমে তিনি মাছের পেটে প্রবেশ করেন।
কুরআন পবিত্রে আল্লাহ তা'আলা উল্লেখ করেছেন:
"আর আপনি মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন, তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাকে আটকাবো না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহ্বান করে বললেন, তুমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তুমি দোষমুক্ত, নিশ্চয় আমি গোনাহগার। অতঃপর আমি তার আহ্বানে সাড়া দিলাম। এবং তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনিভাবে মুমিনদের মুক্তি দিয়ে থাকি।"(সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ৮৭-৮৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে আরও স্পষ্ট করেছেন যে, মাছের পেটে থাকা অবস্থায় নবী ইউনুস আলাইহিস সালামের দো'আ "লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ্জালিমিন।"
যে কোনো মুসলিম এই দো'আ আন্তরিকভাবে করবে, আল্লাহ অবশ্যই তার আহ্বানে সাড়া দেবেন। (সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫০৫)
এই দো'আ থেকে আমাদের জন্য মূল শিক্ষা হলো: যেকোনো বিপদে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা এবং আন্তরিক মন থেকে দো'আ করা। তবে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা বা সময়ের মধ্যে দো'আ পড়ার বিষয় কুরআন ও হাদীসে নেই। আল্লাহর নিকট প্রত্যেক দো'আই গুরুত্বপূর্ন এবং কার্যকর।
তবে সম্প্রতি কিছু মানুষ "খতমে ইউনুস" নামে এই দো'আকে নিয়মিত সংখ্যার পুনরাবৃত্তি, নির্দিষ্ট দিন বা সময়ে পড়ার মতো অপ্রমাণিত নিয়মে রূপান্তরিত করেছেন। যেমন বলা হয়, "৩, ৭ বা ৪০ বার পড়তে হবে" বা "অন্ধকারে বসে পড়তে হবে।"- এগুলো কুরআন ও হাদীসের নির্দেশের বিপরীত।
আবার বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে দো'আ করবে, অন্যকে দিয়ে পড়ানো ইসলামী শিক্ষা নয়। ইসলামে বিপদে পড়া ব্যক্তিকে তার নিজের অন্তরের অনুভূতি এবং বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দো'আ করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। অন্যের মাধ্যমে দো'আ করানো শুধুই মানুষের সৃষ্টি করা নিয়ম যা ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে বিচ্যুত। এমন খতম বা প্রথা সমাজে 'পুরোহিততন্ত্র' এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, যা ইসলামী নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খতম বা নির্দিষ্ট সংখ্যার পুনরাবৃত্তি অভিজ্ঞতার নামে প্রচলিত হলেও এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার বিপরীত। ইসলামী শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হলো সুন্নাত অনুযায়ী দো'আ এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিজের অভিজ্ঞতা সবাইকে বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা ইসলামের মূল শিক্ষাকে বিকৃত করে।
নবী ইউনুস আলাইহিস সালামের মাছের পেটের দো'আ আমাদের শেখায় - বিপদে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া, আন্তরিক দো'আ করা এবং পূর্ণ বিশ্বাস রাখা। কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীসের নির্দেশনাই আমাদের পথপ্রদর্শক।
সূত্র:
◑ সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ৮৭-৮৮।
◑ সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫০৫, সহীহ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।