পড়তে বসলে মন চলে যায় হাজার দিকে? এই কৌশলগুলো করলে মনোযোগ থাকবে লকড!

পড়তে বসলে মন চলে যায় হাজার দিকে? এই কৌশলগুলো করলে মনোযোগ থাকবে লকড!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আজকের ব্যস্ত ও ডিজিটাল যুগে, পড়াশোনার সময় মনোযোগ ধরে রাখা অনেকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন, বন্ধুদের কল, পরিবারিক আড্ডা, সবই মস্তিষ্কের মনোযোগ চুরি করে নেয়। অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা বইয়ের সামনে বসে থাকা সত্ত্বেও ফলাফল মনমতো আসে না। কেন একবারে পাশের ছাত্র খেলাধুলায় মেতে থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে, কিন্তু আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ার পরও হতাশ হই? উত্তরটি মেধায় নয়, মেধার সঠিক ব্যবহার এবং মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার কৌশলে।

➤ একনাগাড়ে পড়াশোনার ক্ষতি

গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা একটানা ২৫–৩০ মিনিট পর হ্রাস পেতে শুরু করে। অতএব ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা পড়া কার্যকর হয় না।

কৌশল:

⇨ পড়াশোনাকে ছোট ছোট সেগমেন্টে ভাগ করো।

⇨ প্রতি ২৫–৩০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের বিরতি নাও।

⇨ বিরতির সময় হালকা খাবার, গান শোনা বা ফ্রেশ হওয়া যেতে পারে।

⇨ বিরতি শেষ হলে আবার সতেজ মনে পড়াশোনায় ফিরে যাও।


➤ মুখস্থ নয়, বুঝে পড়া

প্রতিদিন বই পড়ার সময় বিষয়বস্তু মুখস্থ করার পরিবর্তে বোঝার চেষ্টা করো।

কৌশল:

⇨ মূল ধারণা বুঝে নাও।

⇨ একবার বোঝার পর তথ্য মনে রাখা অনেক সহজ।

⇨ সংজ্ঞা ও সূত্র মুখস্থের চেয়ে বোঝার অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদি ফল দেয়।


➤ বিভিন্ন সূত্র থেকে শেখা

একই বিষয় বিভিন্ন দিক থেকে বুঝলে ধারণা মজবুত হয়।

কৌশল:

⇨ একাধিক বই, অনলাইন ভিডিও ও গ্রুপ স্টাডি ব্যবহার করো।

⇨ বিভিন্ন লেখক ও শিক্ষকের ব্যাখ্যা দেখলে মস্তিষ্ক নতুন দৃষ্টিকোণ পায়।এতে শেখার প্রক্রিয়া গভীর হয়।


➤ কাউকে শেখাও

আইনস্টাইন বলেছেন, "যখন তুমি কাউকে বিষয়টি বোঝাতে পারো, তখনই তুমি পুরোপুরি তা আয়ত্ত করেছ।"

কৌশল:

পড়া বিষয় কাউকে বোঝাও বা নিজের নোটে লিখে ব্যাখ্যা করো। এটা জ্ঞান গভীর করে, ভুলের সম্ভাবনা কমায়।


➤ নিবিড় মনোনিবেশ

একাধিক কাজ একসাথে করলে মনোযোগ হারায়।

কৌশল:

⇨ পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট করো, সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞপ্তি বন্ধ রাখো।

⇨ পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করো এবং পুরো মনোযোগ দিয়ে পড়ো।


➤ ছোট লক্ষ্য ঠিক করো

দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অনেকের জন্য প্রভাবশালী হয় না।

কৌশল:

⇨ প্রতিদিন ছোট লক্ষ্য ঠিক করো। যেমন: "আজ ম্যাথের এক চ্যাপ্টার শেষ করব।"

⇨ লক্ষ্য পূরণ হলে নিজেকে পুরস্কৃত করো।

⇨ ধীরে ধীরে ছোট লক্ষ্যগুলো বড় সাফল্যে রূপান্তরিত হয়।


➤ পড়াশোনাকে গল্পের মতো করো

গণিত বা বিজ্ঞানকে গল্পের ছাঁচে রাখলে বিষয়টি সহজ ও মজার হয়ে ওঠে।

কৌশল:

উদাহরণ হিসেবে গোয়েন্দা কাহিনী বা বাস্তব ঘটনা ব্যবহার করো। ইউটিউব বা 10 Minute School-এর শিক্ষামূলক ভিডিও দেখো।


➤ স্টাডি মিউজিক ও White Noise

সাউন্ড মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

কৌশল:

হেডফোনে Study Music বা White Noise চালু করো। শান্ত পরিবেশে পড়াশোনা করো।


➤ ছোট সময়ে শুরু, ধীরে বৃদ্ধি (Think Big, Start Small)

ছোট সময় নির্ধারণ করে পড়াশোনা শুরু করলে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।

কৌশল:

প্রথমে ২০ মিনিট পড়ো, ১০ মিনিট বিরতি নাও। ধীরে ধীরে ৩০–৫০ মিনিটে বাড়াও।


➤ পর্যাপ্ত ঘুম ও পানি

মস্তিষ্ক ভালো কাজ করতে পর্যাপ্ত ঘুম ও পানি অপরিহার্য।

কৌশল:

⇨ দৈনিক ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করো।

⇨ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করো।


➤ পড়ার পরিবেশ ঠিক করা

কৌশল:

⇨ শান্ত পরিবেশে পড়ো।

⇨ পড়ার উপকরণ আগেই প্রস্তুত রাখো।

⇨ পাশের ব্যস্ততা থাকলেও White Noise ব্যবহার করো।


➤ কঠিন পড়াগুলো আগে শেষ করো

কঠিন টপিক আগে পড়লে পরবর্তী পড়াগুলো সহজ মনে হয়।
চাপ কমে মনোযোগ বেশি থাকে।


➤ Peak Concentration Time

নিজের সর্বোচ্চ মনোযোগের সময় চিহ্নিত করো। সেই সময়ে পড়াশোনায় বসো।


➤ নিজেকে পুরস্কৃত করো

পড়ার পর প্রিয় চকলেট খাও বা বন্ধুর সাথে ছোট গল্প শেয়ার করো। এটি মানসিক অনুপ্রেরণা বাড়ায়।


➤ মুখে উচ্চারণ করে পড়ো

মনে মনে পড়ার অভ্যাস বাদ দাও। শব্দ করে পড়লে অন্য চিন্তা ঢুকে পড়ে না।


পড়াশোনা কেবল বইয়ের উপর চোখ বুলানো নয়। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক অনুশীলন, যা মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করে, মনকে সচল রাখে এবং চিন্তাকে কার্যকর করে। ছোট লক্ষ্য ঠিক করা, মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা, বিরতি নেওয়া, স্টাডি মিউজিক, পর্যাপ্ত ঘুম ও পানি—সব মিলিয়ে তৈরি হয় একটি জাদুকরী সিস্টেম, যা পরীক্ষায় সফলতা নিশ্চিত করে। পড়াশোনা মানে শুধু বই নয়, এটি মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করে, মনকে সতেজ রাখে, এবং জীবনকে সহজ ও ফলপ্রসূ করে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ