স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে এই সহজ পরীক্ষা হতে পারে জীবন রক্ষাকারী!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নারীরা যে ধরনের ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন, তার মধ্যে স্তন ক্যান্সার অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হন। অসচেতনতা, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এই সংখ্যাকে ক্রমবর্ধমান করেছে। তবে সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি অসংখ্যাংশে কমানো সম্ভব।
নারীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। তবে আরও কিছু কারণ আছে যা রোগের সম্ভাবনা বাড়ায়।
ঝুঁকির কারণ-
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো:
☞ পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের কোনো সদস্যের স্তন ক্যান্সার থাকা।
☞ জিনগত কারণ: BRCA1, BRCA2 এবং P53 নামক জিনের উপস্থিতি। স্তনের অস্বাভাবিক ঘনত্ব।
☞ হরমোনাল ফ্যাক্টর: অনিয়মিত পিরিয়ড, দীর্ঘদিন জন্মনিরোধক ওষুধ ব্যবহার, মেনোপজের পর দীর্ঘমেয়াদি হরমোন থেরাপি।
☞ গর্ভধারণ ও স্তনপান করানো: ৩০ বছর বয়সের পর প্রথম গর্ভধারণ এবং শিশুকে বুকের দুধ না দেওয়া।
☞ অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা: ধূমপান, মদ্যপান, নিয়মিত ব্যায়াম না করা এবং অযথাযথ ওজন নিয়ন্ত্রণ।
☞ পূর্ব ক্যান্সার ইতিহাস: একবার এক দিকের স্তনে ক্যান্সার হয়েছে এমন নারীদের পুনরায় অন্য স্তনে ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে।
- এগুলো মূল ঝুঁকির কারণ, যা জানা থাকলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।
স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং, সময়মতো রোগ শনাক্তকরণ:
স্ক্রিনিং হলো এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা যা রোগের কোনো লক্ষণ প্রকাশিত না হলেও করা হয়। ছোট টিউমার বা অস্বাভাবিক কোষ প্রাথমিকভাবে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসা সহজ, কম ব্যয়বহুল এবং শারীরিক ক্ষতি কম। ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো উচিত।
স্ক্রিনিং পদ্ধতি-
১. ম্যামোগ্রাফি: স্তনের অভ্যন্তরের কোষ পর্যবেক্ষণের জন্য এক্স-রে প্রযুক্তি।
২. আলট্রাসনোগ্রাফি: টিউমারের ধরন ও অবস্থান নির্ধারণে উচ্চ কম্পাঙ্ক শব্দতরঙ্গ ব্যবহার।
৩. এমআরআই: শক্তিশালী চুম্বক ও রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে টিউমারের অভ্যন্তরীণ গঠন এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়া পরীক্ষা।
৪. বায়োপসি (FNAC): সূক্ষ্ম সূচের মাধ্যমে কোষ সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা, সিদ্ধান্ত নেয়া কেমোথেরাপি বা সার্জারি প্রয়োজন কিনা।
চিকিৎসার আগে অন্যান্য স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করা যেতে পারে, যেমন- BMI নির্ণয়, রক্ত পরীক্ষা, লিপিড প্রোফাইল, এক্স-রে ইত্যাদি।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
⇨ নিজে নিজে মাসিক পরীক্ষা: প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে স্তন পরীক্ষা করা। পিরিয়ড শেষের ৫–৭ দিন হল সঠিক সময়।
⇨ অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করা: ব্যথাহীন চাকা,
স্তনের আকার বা রঙ পরিবর্তন, চামড়ার কুঁচকানো যদি দেখা যায়, দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
⇨ স্বাস্থ্যকর জীবনধারা: ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
⇨ হরমোন ও জন্মনিরোধক ওষুধ: দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার এড়ানো।
⇨ সন্তানকে বুকের দুধ দেওয়া: এটি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
উল্লেখ্য, স্তনে ব্যথা বা চাকা সবসময় ক্যান্সারের ইঙ্গিত নয়। তবে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে অবহেলা করা উচিত নয়।
টিউমারের আকার ১ সেমি থাকাকালেই শনাক্ত করা গেলে অনেক সময় কেমোথেরাপি প্রয়োজন হয় না। সার্জারি বা কেমোথেরাপি হলেও খরচ অনেক কমে যায় এবং স্তন সংরক্ষিত থাকে। দ্রুত শনাক্তকরণ রোগীর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ায়।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হলো সচেতনতা ও নিয়মিত স্ক্রিনিং। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ এই তিনটি মিলিয়ে নারীর জীবনযাত্রা নিরাপদ ও দীর্ঘায়ু হয়। নিয়মিত স্ক্রিনিং শুধু জীবন বাঁচায় না, বরং নারীর মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাসও বজায় রাখে। সঠিক সময়ে পরীক্ষা করানো প্রতিটি নারীর জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।