ফেক নিউজ রোধে প্রযুক্তির বুদ্ধিমান প্রহরা ডিজিটাল যুগে সত্য যাচাইয়ের নতুন যুদ্ধ শুরু!

ফেক নিউজ রোধে প্রযুক্তির বুদ্ধিমান প্রহরা ডিজিটাল যুগে সত্য যাচাইয়ের নতুন যুদ্ধ শুরু!
ছবির ক্যাপশান, ফেক নিউজ রোধে প্রযুক্তির বুদ্ধিমান প্রহরা ডিজিটাল যুগে সত্য যাচাইয়ের নতুন যুদ্ধ শুরু!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আজকের বিশ্বে তথ্যের গতি আলোছায়ার মতো দ্রুত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ক্লিকেই ছড়িয়ে পড়ছে লাখো খবর, ছবি ও ভিডিও। কিন্তু এই গতির সঙ্গে বেড়েছে এক ভয়াবহ সমস্যা ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ। এটি শুধু জনমত নয়, সমাজ, রাজনীতি এমনকি মানবসম্পর্কেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তবে আশার কথা হচ্ছে - প্রযুক্তিই এখন এই মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সত্য খবরের চেয়ে ভুয়া খবর প্রায় ৭০% দ্রুত শেয়ার করে। কারণ, ফেক নিউজ সাধারণত চমকপ্রদ বা আবেগতাড়িত করে তোলে। এভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে "ডিজিটাল সংক্রমণের" মতো। এর পরিণতি ভয়াবহ- গুজবের কারণে সহিংসতা, নির্বাচনে বিভ্রান্তি, এমনকি জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয় পর্যন্ত ঘটতে দেখা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রযুক্তি কি এই ভুয়া খবরকে থামাতে পারছে!

বর্তমানে Artificial Intelligence (AI) ও Machine Learning (ML) প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক প্রতিষ্ঠান ফেক নিউজ শনাক্তের কাজ করছে। এই অ্যালগরিদমগুলো টেক্সট, ছবি, ভিডিও এমনকি শব্দের ধরন বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারে তথ্যটি আসল না নকল। যেমন

⇨ Language Pattern Analysis: ফেক নিউজ সাধারণত অতিরঞ্জিত শব্দ, চটকদার শিরোনাম এবং আবেগপ্রবণ ভাষা ব্যবহার করে। AI এসব শব্দের ধরণ ও টোন বিশ্লেষণ করে সতর্ক সংকেত দেয়।

⇨ Source Verification: একটি সংবাদ কোন উৎস থেকে এসেছে, সেই উৎসের পূর্ব ইতিহাস কেমন AI তা মিলিয়ে দেখে।

⇨ Image Forensics: ছবি বা ভিডিওর metadata ও pixel pattern বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় সেটি সম্পাদিত বা পরিবর্তিত হয়েছে কিনা।

এছাড়া, Deepfake Detection Tools এখন ভিডিওতে মুখ ও কণ্ঠস্বরের মিল পরীক্ষা করে নকল ভিডিও সনাক্ত করতে সক্ষম।

ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (Twitter) এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এখন ফেক নিউজ প্রতিরোধে নানা প্রযুক্তি প্রয়োগ করছে।যেমন -

⇨ Fact-Checking Systems: নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে প্রতিটি পোস্ট যাচাই করা হচ্ছে।

⇨ User Reporting & Transparency: ব্যবহারকারীরা এখন সন্দেহজনক পোস্ট রিপোর্ট করতে পারেন; সেগুলোর উৎস যাচাইয়ের পর প্রয়োজন হলে মুছে ফেলা হয়।

⇨ Algorithmic Control: ভুল তথ্য বারবার শেয়ার হলে অ্যালগরিদম তা কম দৃশ্যমান করে দেয়, ফলে সেটি কম ছড়ায়।

তবে এই প্রক্রিয়া নিখুঁত নয়। কারণ ফেক নিউজ নির্মাতারাও প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও বুদ্ধিমান হচ্ছে।

যত উন্নত প্রযুক্তিই হোক না কেন, মানব বিচারবুদ্ধিই সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। কোনো খবর শেয়ার করার আগে উৎস যাচাই করা, শিরোনাম নয় বরং মূল বিষয়বস্তু পড়া, ওয়েবসাইটের নাম বা URL যাচাই করা এই সচেতন আচরণই ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে প্রাচীর গড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, "ফেক নিউজ থামাতে প্রযুক্তি নয়, মানবিক সততা ও মিডিয়া লিটারেসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"

ভবিষ্যতে ফেক নিউজ রোধে প্রযুক্তির আরও উন্নত প্রয়োগ দেখা যাবে

⇨ Blockchain-Based Verification: প্রতিটি খবরের উৎস ও প্রকাশনার রেকর্ড অদলবদলহীনভাবে সংরক্ষিত থাকবে।

⇨ Real-Time AI Monitoring: খবর প্রকাশের সাথে সাথেই তা যাচাই করার ব্যবস্থা হবে।

⇨ Augmented Reality (AR) Fact Indicators: ব্যবহারকারীরা যখন অনলাইনে কোনো কনটেন্ট দেখবেন, তখন পাশে 'Verified' বা 'Unverified' ব্যাজ দেখতে পাবেন।

তথ্যের এই ডিজিটাল যুগে ফেক নিউজ মানে শুধু ভুল তথ্য নয়, বরং সত্যের ওপর আঘাত। প্রযুক্তি এখন সত্যের রক্ষক হিসেবে লড়ছে, তবে শেষ পর্যন্ত লড়াইটি আমাদের সবার, প্রতিটি ব্যবহারকারীর। কারণ, প্রযুক্তি পথ দেখাতে পারে, কিন্তু সত্য বেছে নেওয়ার দায়িত্ব মানবতারই।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ