ইঞ্জিনিয়ারদের কড়া সতর্কবার্তা!—এই গাছ ছাদে লাগালেই বিপদ নিশ্চিত

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
শহরের মানুষের জন্য ছাদবাগান এখন শুধু শখ নয়, বরং এক ধরনের প্রয়োজন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খোলা জায়গার অভাব, দূষণের মাত্রা, এবং সবুজের অভাব মানুষকে ছাদে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ছাদে সব ধরনের গাছ লাগানো সমানভাবে নিরাপদ নয়। ভুল গাছ নির্বাচন করলে কয়েক বছরের মধ্যে ছাদের ফাটল, জল চুইয়ে পড়া কিংবা পুরো কাঠামোর দুর্বলতার মতো ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই ছাদবাগানের জন্য গাছ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই সতর্ক হওয়া জরুরি।
কেন কিছু গাছ ছাদের জন্য বিপজ্জনক?
১. ভারী ফলের গাছ (যেমন—আম, কাঁঠাল, লিচু): বড় আকারের গাছের ওজন কয়েকশ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। যখন গাছ পূর্ণবয়স্ক হয়, তখন এর ডালপালা ও ফল ছাদের উপর অতিরিক্ত লোড সৃষ্টি করে। কংক্রিট কাঠামো মূলত বসবাসের জন্য পরিকল্পিত হয়, অতিরিক্ত গাছের ভার বহনের জন্য নয়। ফলে ধীরে ধীরে ফাটল সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে ভবনের স্থায়িত্ব নষ্ট করে।
২. অতিরিক্ত জল শোষণকারী গাছ, যেমন—কলা, বাঁশ বা জলধারক উদ্ভিদ। এদের শিকড় আশপাশের মাটি থেকে ক্রমাগত পানি টেনে নেয়। এর ফলে টবের মাটিতে পানি জমে থাকে, যা ছাদের উপর বাড়তি আর্দ্রতা তৈরি করে। এই অতিরিক্ত আর্দ্রতা কংক্রিটের ভেতর ঢুকে Corrosion of reinforcement (লোহার রডের মরিচা ধরা) ঘটায়। মরিচা ধরা লোহা ফুলে উঠে কংক্রিট ফাটিয়ে দেয়, যা ছাদের স্থায়িত্বে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
৩. গভীর ও ক্ষয়কারী শিকড়ের গাছ: কিছু গাছের শিকড় খুব শক্ত এবং অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অশ্বত্থ বা বটজাতীয় গাছের শিকড় ছাদে লাগালে দ্রুত ওয়াটারপ্রুফ লেয়ার কেটে ফেলে।এর ফলে পানি জমে যায়, শ্যাওলা জন্মায় এবং কয়েক বছরের মধ্যে ছাদে চুইয়ে পড়ার সমস্যা তৈরি হয়। একবার ওয়াটারপ্রুফ স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি মেরামত করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
তাহলে কোন গাছ ছাদের জন্য নিরাপদ?
সব গাছই যে ছাদের জন্য ক্ষতিকর, তা নয়। কিছু গাছ আছে যেগুলো হালকা, ছোট আকারের, সহজে পরিচর্যা করা যায় এবং ছাদে চাষের জন্য একেবারে উপযুক্ত।যেমন -
⇨ফলের গাছ: লেবু, পেয়ারা, কুল, ডালিম, কামরাঙা, ড্রাগন ফল, মাল্টা ও কমলার মতো গাছ ছোট আকারে সীমাবদ্ধ থাকে। এদের শিকড়ও টবে সীমিত থাকে, ফলে কাঠামোর উপর বাড়তি চাপ পড়ে না।
⇨ ফুলের গাছ: গোলাপ, হাসনাহেনা, সন্ধ্যা মালতি, গাঁদা, বেলি, অর্কিড প্রভৃতি শুধু সৌন্দর্যই নয়, সুবাসে ছাদকে করে তুলতে পারে প্রাণবন্ত।
⇨ সবজির গাছ: টমেটো, বেগুন, শসা, ঢেঁড়স, লাউ, কুমড়া, ঝিঙে ইত্যাদি সবজি ছোট ড্রাম বা টবে খুব সহজেই ছাদে চাষ করা যায়।
ছাদবাগান টেকসই রাখতে টিপস:
১. সঠিক পটিং মিডিয়া ব্যবহার করুন – ছাদের মাটিতে কেবল কাদা বা দোআঁশ মাটি নয়, বরং বালি, কম্পোস্ট, নারিকেলের ছোবড়া ও পার্লাইট মিশিয়ে হালকা মাটির স্তর তৈরি করুন। এতে পানি সহজে বের হয়ে যাবে, কিন্তু আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
২. ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখুন – টব বা ড্রামের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি। এতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাবে এবং মাটি ভারী হয়ে ছাদে চাপ ফেলবে না।
৩. অতিরিক্ত জল দেওয়া এড়িয়ে চলুন – প্রতিদিন পানি দেওয়ার আগে মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করুন। ভিজে মাটিতে বাড়তি পানি দিলে শিকড় পচে যাবে এবং ছাদে স্যাঁতসেঁতে ভাব বাড়বে।
৪. ওয়াটারপ্রুফিং নিয়মিত পরীক্ষা করুন – বছরে অন্তত একবার ছাদের ওয়াটারপ্রুফ স্তরে কোনো ফাটল বা ক্ষতি আছে কিনা তা দেখে নিন। প্রয়োজনে মেরামত করুন।
৫. গাছের আকার নিয়ন্ত্রণ করুন – নিয়মিত ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে গাছকে ছোট ও নিয়ন্ত্রিত রাখা জরুরি।
ছাদবাগান মানেই শুধু সৌন্দর্য নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ "গ্রীন স্পেস" যা শহরের গরম কমায়, বাতাস পরিশুদ্ধ করে এবং মানসিক প্রশান্তি আনে। তবে ভুল গাছ বেছে নিলে এই সবুজের স্বপ্নই হয়ে উঠতে পারে বিপদ। তাই বড় আকারের, অতিরিক্ত জল শোষণকারী বা গভীর শিকড়ের গাছ এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। বরং হালকা, মাঝারি ও টবে সীমাবদ্ধ থাকা গাছই হবে আপনার ছাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ সঙ্গী।মনে রাখবেন, ছাদে সবুজ চাই, তবে নিরাপত্তার সঙ্গে। ছাদকে বাগান করুন, কিন্তু কাঠামোর স্থায়িত্ব বিসর্জন দিয়ে নয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।