নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ইতিহাসের মহাস্মৃতির চাঁদের শহর

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
নওগাঁর বদলগাছীতে অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, পাল যুগের প্রাচীন স্থাপত্য, ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্যভুক্ত। চতুর্ভুজ স্থাপত্য, প্রাচীন মূর্তি ও জাদুঘরের জন্য পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী চাঁদের শহর দর্শনের জন্য আদর্শ স্থান। নওগাঁ পর্যটন, বৌদ্ধধর্ম, প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি আবিষ্কারের কেন্দ্র।
বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের এক প্রতীক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, যা একসময় “চাঁদের শহর” নামে পরিচিত ছিল, আজও ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অবস্থান করছে। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত এই অষ্টাদশ শতাব্দীর বিহারকে পাল বংশীয় দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল ৭৭০ থেকে ৮১০ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করেন। তার দাপ্তরিক নাম ছিল ধর্মপাল মহাবিহার। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধুলোবালি ও মাটি জমে ধ্বংসাবশেষ বিশাল পাহাড়ের আকার ধারণ করে, যার কারণে স্থানটির নাম হয় পাহাড়পুর।
১৮৭৯ সালে ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এই স্থাপনাটি আবিষ্কার করেন। পূর্ণাঙ্গ খনন শুরু হয় ১৯২০-এর দশকে বিএন দত্ত ও আরডি ব্যানার্জির তত্ত্বাবধানে। খননের ফলে চতুর্ভুজ আকৃতির বিহারের স্থাপনাসহ বৌদ্ধ ও হিন্দু মূর্তি, শিলালিপি, মুদ্রা ও অলংকার উদ্ধার করা হয়। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এই স্থানকে বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বর্তমানে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার কমপ্লেক্স ৭০.৩১ একর জমির ওপর বিস্তৃত। এখানে চারটি বাহুতে ১৭৭টি ভিক্ষুক কক্ষ, বিস্তৃত বারান্দা, প্রশস্ত প্রাচীর এবং বিশাল প্রবেশ তোরণ রয়েছে। মূল বিহার চতুর্ভুজ আকারের, উচ্চতা প্রায় ৭২ ফুট, যেখানে কারুকার্যমণ্ডিত গায়ে নানা ধরনের জীবজন্তুর প্রতিকৃতি রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব খননের সময় বহু ছোট মন্দির, পুকুর ও বিনোদন স্তূপও আবিষ্কৃত হয়।
পাহাড়পুর বিহারের চত্বরে রয়েছে জাদুঘর, যেখানে খননকালে উদ্ধারকৃত রৌপ্যমুদ্রা, মূর্তি ও শিলালিপি সংরক্ষিত। জাদুঘরের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। বাংলাদেশি ও বিদেশি পর্যটকরা প্রতিদিন এখানে আসেন; ছুটির দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা ৯০০–১০০০ পর্যন্ত হয়। তবে পর্যটন অবকাঠামোর ঘাটতি, আবাসন সংকট ও মানসম্মত রেস্টুরেন্ট না থাকায় দর্শনার্থীরা অনেক সময় ভোগান্তিতে পড়েন।
পর্যটকগণ নওগাঁ ও জয়পুরহাট থেকে সড়ক বা রেলপথে সহজেই পৌঁছাতে পারেন। তবে রাত কাটানোর জন্য এখনও পাহাড়পুর এলাকায় পর্যাপ্ত হোটেল নেই। বৌদ্ধবিহারের কাস্টডিয়ান মুহাম্মদ ফজলুল করিম জানান, বর্তমানে চারটি রেস্ট হাউসে সীমিত কক্ষ থাকায় দর্শনার্থীদের বুকিং সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।