ডাক্তার বলছেন সব ঠিক, তবু নিজেকে সব সময় অসুস্থ মনে হয়? হতে পারে আপনি এই রহস্যজনক রোগে ভুগছেন!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমরা অনেকেই ছোটখাটো ব্যথা, মাথা ঘোরা বা হঠাৎ ক্লান্তিকে সাধারণ শারীরিক প্রতিক্রিয়া বলে এড়িয়ে যাই। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এই তুচ্ছ অনুভূতিগুলো একেবারেই ভিন্ন রূপ নেয় তারা ভাবতে থাকেন এর পেছনে হয়তো ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক কিংবা মরণব্যাধি লুকিয়ে আছে। চিকিৎসকের কাছে রিপোর্ট স্বাভাবিক এলেও ভয়ের ইতি ঘটে না। এই মানসিক অবস্থাকেই বলা হয় হাইপোকন্ড্রিয়াসিস, যা বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় পরিচিত অসুস্থতা উদ্বেগ ব্যাধি (Illness Anxiety Disorder) নামে।
আগে এই অবস্থাকে হাইপোকন্ড্রিয়াসিস বলা হতো। তবে শব্দটি অনেক রোগীর কাছে অপমানজনক ও অবজ্ঞাসূচক মনে হওয়ায় চিকিৎসা ম্যানুয়াল DSM-5-এ নাম পাল্টে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এ রোগকে বলা হয় Illness Anxiety Disorder বা Health Anxiety। এর ফলে রোগীদের মানসিক অবস্থাকে আরও সম্মানজনকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে।
কেন হয় এই ভয়?
হাইপোকন্ড্রিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই নিজেদের শরীরকে অতিসতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। সামান্য মাথাব্যথা তারা টিউমারের লক্ষণ বলে ভাবতে পারেন, বা সাধারণ হজমের সমস্যাকেও মারাত্মক রোগের পূর্বাভাস মনে করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন-
⇨ মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা এই ভয়কে বাড়িয়ে তোলে।
⇨ শৈশবের অভিজ্ঞতা যেমন পরিবারের কারও গুরুতর অসুস্থতা দেখা বা ছোটবেলা থেকেই বারবার চিকিৎসার অভিজ্ঞতা থাকলে এ ধরনের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
⇨ ইন্টারনেট ও স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্যের সহজলভ্যতা উদ্বেগকে আরও তীব্র করে। 'সাইবারকন্ড্রিয়া' শব্দটি এসেছে এ কারণেই। অর্থাৎ অনলাইনে অতিরিক্ত রোগ খোঁজা থেকে নতুন রোগভীতি তৈরি হওয়া।
লক্ষণসমুহ:
◑ যে কোনো সাধারণ শারীরিক উপসর্গকে গুরুতর অসুস্থতার প্রমাণ মনে করা।
◑ স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন থাকা এবং বারবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া।
◑ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েও আশ্বস্ত হতে না পারা।
◑ ইন্টারনেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসুখ নিয়ে খোঁজাখুঁজি করা।
◑ পরিবারের সদস্য বা চিকিৎসকের আশ্বস্ত করার পরও ভয় না কমা।
সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রভাব-
অসুস্থতা নিয়ে অযৌক্তিক ভয় একজন মানুষের কর্মজীবন, পারিবারিক সম্পর্ক ও সামাজিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। বারবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া কেবল অর্থনৈতিক চাপই বাড়ায় না, সম্পর্কেও টানাপড়েন সৃষ্টি করে। অনেক সময় রোগীরা এতটাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক হয়ে পড়েন যে জীবনের স্বাভাবিক আনন্দও হারিয়ে যায়।
চিকিৎসা -
ভয়ের শেকড় গভীরে থাকলেও চিকিৎসা সম্ভব-
সাইকোথেরাপি, বিশেষ করে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) রোগীকে নিজের ভয়কে বুঝতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি বা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিবার ও কাছের মানুষদের সহায়তা। কারণ এ ব্যাধি বোঝার মতো সংবেদনশীলতা প্রয়োজন।
শরীর সুস্থ থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতার ভয় যেন সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এটাই হাইপোকন্ড্রিয়াসিসের কঠিন বাস্তবতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি মানসিক ব্যাধি হলেও, রোগীর কাছে এটি এক অদৃশ্য যন্ত্রণার মতো। তাই এর চিকিৎসায় শুধু ডাক্তার নয়, পরিবার, বন্ধু ও সমাজের সহানুভূতিও জরুরি। সঠিক সচেতনতা ও মানসিক সমর্থন থাকলে হাইপোকন্ড্রিয়াসিস আক্রান্ত মানুষও নিশ্চিন্ত ও স্বাভাবিক জীবনের পথে ফিরতে পারেন।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।