বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় নীল শহর! মরক্কোর শেফচাওয়েনের অবাক করা কাহিনি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
উত্তর মরক্কোর রিফ পর্বতমালার কোলে ছোট্ট শহর শেফচাওয়েন (Chefchaouen) আজ বিশ্বজুড়ে পরিচিত "ব্লু সিটি" নামে। সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা রাস্তা, গম্বুজাকৃতির দরজা, উঁচু-নীচু সিঁড়ি সবকিছু নীলের বিভিন্ন ছায়ায় মোড়া। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, কেন এ শহরের প্রতিটি বাড়িঘর নীল? উত্তর খুঁজতে গেলে সামনে আসে ইতিহাস, ধর্ম, বিজ্ঞান ও সমাজ-সংস্কৃতির জটিল মিশেল।
শেফচাওয়েন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৫শ শতকে আন্দালুসিয়ার মুসলিম শরণার্থীদের জন্য। তবে শহরের নীল পরিচয় গড়ে ওঠে মূলত ১৯৩০-এর দশকে , যখন ইউরোপ থেকে নিপীড়িত ইহুদি জনগোষ্ঠী এখানে আশ্রয় নেয়। ইহুদি ধর্মে নীল রঙকে আকাশ ও ঈশ্বরের শক্তির প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। ইহুদি সম্প্রদায় তাদের বাড়িঘর নীল রঙে রাঙাতে শুরু করে, যেন প্রতিদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে স্মরণ করা যায়। ধীরে ধীরে স্থানীয় বাসিন্দারাও এই প্রথা গ্রহণ করে এবং নীল রঙ শহরের সাংস্কৃতিক পরিচয়ে পরিণত হয়।
ইহুদি ঐতিহ্যে ব্যবহৃত টেকহেলেত (Tekhelet) নামক নীল রঙ আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। এটি শুধু নান্দনিকতা নয়, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আধ্যাত্মিক ধ্যানমগ্নতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যও বহন করে। সময়ের সাথে এটি শহরের প্রতিটি দেয়াল ও অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে।
নীল রঙের সঙ্গে যুক্ত আছে নানা বাস্তব কারণও-
☞ মশা প্রতিরোধ: প্রচলিত বিশ্বাস হলো, নীল দেয়াল মশা ও পোকামাকড় দূরে রাখে। আধুনিক গবেষণা বলছে, নীল ও হালকা রঙ সূর্যালোক প্রতিফলিত করে, যা মশার কার্যকলাপ কিছুটা কমাতে পারে।
☞ শীতলতা বজায় রাখা: নীল একটি "কুল কালার"। মনস্তাত্ত্বিকভাবে ঠান্ডার অনুভূতি তৈরি করে।
মরক্কোর শুষ্ক ও গরম আবহাওয়ায় এই রঙ বাসিন্দাদের মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং তাপের প্রভাব কমায়।
☞ পরিচ্ছন্নতার অনুভূতি: নীল রঙ দৃষ্টিগতভাবে নির্মলতা ও সতেজতার প্রতীক। সংকীর্ণ রাস্তা ও ঘিঞ্জি বসতিকে নীল রঙ এক ধরনের পরিচ্ছন্ন ও প্রশস্ত অনুভূতি দেয়।
১৯৭০-এর দশক থেকে মরক্কো সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পর্যটন বাড়াতে শহরের "ব্লু সিটি" ব্র্যান্ডিং জোরদার করে। প্রতি বছর বসন্তে বাসিন্দারা বাড়িঘর নতুন করে নীল রঙ করেন। এর ফলে শহরের রঙ সর্বদা সতেজ থাকে এবং এটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় থেকে যায়। আজ শেফচাওয়েনের অর্থনীতির একটি বড় অংশ গড়ে উঠেছে পর্যটন নির্ভর করে-হোটেল, রেস্তোরাঁ, হস্তশিল্প ও গাইড পরিষেবা থেকে শুরু করে স্থানীয় বাজার পর্যন্ত।
নীলকে বলা হয় "শান্তির রঙ"-এটি মানুষের মস্তিষ্কে শীতলতা, নিরাপত্তা ও প্রশান্তি জাগায়। অনেক ভ্রমণকারী বলেন, শেফচাওয়েনের গলিতে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয় একধরনের "ধ্যানমগ্ন শান্তি" নেমে এসেছে। পর্যটন গবেষকরা মনে করেন, এই মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবই শহরের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে বহুগুণে।
শেফচাওয়েনের নীল রঙের কারণ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো একক তত্ত্ব নেই। ইতিহাসবিদরা বলেন, এটি ইহুদি ধর্মীয় ঐতিহ্যের ফল।জীববিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন, এটি ছিল মশা প্রতিরোধের প্রচেষ্টা।সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। আর পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, আজ নীল রঙ মূলত শহরের পরিচয় ও ব্র্যান্ড।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।