আপনার ঘাড়ের ব্যথা কি শুধু সাধারণ ক্লান্তি, নাকি স্নায়ু ক্ষয়ের সংকেত! জেনে নিন বিস্তারিত

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ঘাড়ে অস্বস্তি বা ব্যথা অনেকেই অবহেলা করেন ভাবেন হয়তো দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহার বা খারাপ ভঙ্গির কারণে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি সবসময় এতটা সাধারণ নয়। অনেক ক্ষেত্রে এর পেছনে থাকে সার্ভিকাল স্পন্ডিলোসিস (Cervical Spondylosis), যা মূলত ঘাড়ের মেরুদণ্ডের হাড় ও তরুণাস্থির অবক্ষয়জনিত পরিবর্তনের ফল। এ রোগে কেবল ঘাড়ে নয়, হাত, কাঁধ ও শরীরের স্নায়ুতন্ত্রেও জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কেন হয় সার্ভিকাল স্পন্ডিলোসিস?
মানবদেহের মেরুদণ্ড একেকটি কশেরুকা দিয়ে গঠিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কশেরুকাগুলোর মাঝে থাকা ডিস্ক বা তরুণাস্থি শুকিয়ে যায়, নমনীয়তা কমে আসে। তখনই তৈরি হয় হাড়ের স্পার (bone spur) বা ছোট হাড়ের বৃদ্ধি, যা স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে।
বেশ কিছু কারনেই হতে পারে এই সার্ভিকাল স্পন্ডিলোসিস। যেমন-
⇨ বয়সজনিত পরিবর্তন: সাধারণত ৪০ বছরের পর থেকেই ডিস্ক ক্ষয় দেখা দেয়।
⇨ ভুল ভঙ্গি: দীর্ঘ সময় মাথা নিচু করে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা অন্যতম কারণ।
⇨ পুনরাবৃত্তিমূলক নড়াচড়া: একই ধরনের ঘাড়ের নড়াচড়া বারবার করলে ক্ষয় দ্রুত বাড়ে।
⇨ আঘাত: পুরনো দুর্ঘটনা বা আঘাতও ঝুঁকি বাড়ায়।
যেভাবে বোঝা যায়-
সার্ভিকাল স্পন্ডিলোসিসের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। প্রথমদিকে শুধু ঘাড়ে ব্যথা হলেও সময়ের সাথে তা ছড়িয়ে পড়ে—
◑ ঘাড় ব্যথা ও শক্তভাব: সকালে ঘুম থেকে উঠলে ঘাড় নড়াতে কষ্ট হওয়া।
◑ অসাড়তা বা ঝিনঝিন: ঘাড় থেকে হাত বা আঙুল পর্যন্ত ঝাঁঝালো অনুভূতি ছড়ানো।
◑ পেশী দুর্বলতা: স্নায়ু চাপের কারণে হাত বা কাঁধে শক্তি কমে যাওয়া।
◑ আন্দোলনের অসুবিধা: কখনও কখনও হাঁটা বা হাতের সমন্বয় করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
কেন গুরুত্ব দেওয়া জরুরি?
সার্ভিকাল স্পন্ডিলোসিসকে অবহেলা করলে শুধু ব্যথায় সীমাবদ্ধ থাকে না। দীর্ঘমেয়াদে এটি স্নায়ুর স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে, যার প্রভাব পড়ে হাত-পা নড়াচড়া, দৈনন্দিন কাজকর্ম এমনকি ভারসাম্যের উপরও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেক-নেক (Tech Neck) বা প্রযুক্তি নির্ভর জীবনধারা এ রোগের ঝুঁকি দ্রুত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
চিকিৎসা-
চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যথার মাত্রা ও স্নায়ুচাপের তীব্রতার উপর।
☞ ওষুধ: ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয় নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ (NSAIDs)।
☞ ফিজিওথেরাপি: ঘাড় ও কাঁধের পেশী শক্তিশালী করতে নিয়মিত থেরাপি কার্যকর।
☞ ব্যায়াম: হালকা স্ট্রেচিং ও ঘাড় ঘোরানোর ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ব্যথা কমায়।
☞ জীবনযাত্রার পরিবর্তন: সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম কমানো এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ অত্যন্ত জরুরি।
☞ গুরুতর ক্ষেত্রে: যদি স্নায়ুতে স্থায়ী চাপ তৈরি হয়, তবে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
যদি ঘাড়ের ব্যথা কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয়, বা হাত-পায়ে অসাড়তা, ঝিনঝিন বা দুর্বলতা অনুভূত হয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সার্ভিকাল স্পন্ডিলোসিস আধুনিক জীবনের এক নীরব শত্রু। কাজের চাপ, প্রযুক্তি ব্যবহার ও ভুল ভঙ্গি এটিকে তরুণ প্রজন্মের মাঝেও দ্রুত ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাই সচেতনতা, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়ামই পারে এই অদৃশ্য বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।