ব্যাংকের 'উৎসব' ও 'উৎসাহ' বোনাসে সরকারের লাগাম!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো যখন মূলধন সংকটে ধুঁকছে, তখনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিলাসী বোনাস গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে বেতনের আড়াইগুণ থেকে ছয়গুণ পর্যন্ত এই বোনাস নিয়ে থাকেন কর্মীরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন এই লাগামহীন বোনাসপ্রথার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) বরাতে জানা গেছে, কয়েকটি ব্যাংকে বছরে সর্বোচ্চ ৬টি পর্যন্ত বোনাস নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই অতিরিক্ত বোনাসকে 'উৎসাহ বোনাস' বা 'ইনসেনটিভ বোনাস' নাম দিয়ে কর্মীদের দেওয়া হয়। বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) এর এক প্রতিবেদনে অতিরিক্ত এই বোনাসকে 'জনগণের অর্থের ক্ষতি' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এফআইডি’র সচিব নাজমা মোবারেক জানান, "ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত উৎসব বোনাসের বাইরে একাধিক ইনসেনটিভ বোনাস নিচ্ছে। এটিকে এখন যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হচ্ছে।"
তিনি আরো বলেন, এখন থেকে ব্যাংকগুলো তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এই বোনাস পাবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে।
ব্যাংক-বোনাস বিষয়ে সিএজি কার্যালয়ের আপত্তিতে কয়েকটি ব্যাংকের নাম উঠে এসেছে। তন্মদ্ধ্যে জনতা ব্যাংক-এর কুমিল্লা অঞ্চলের বিভিন্ন শাখা, যেমন কান্দিরপাড়, চৌদ্দগ্রাম, গৌরীপুর বাজারসহ আরো কিছু শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতনের তিন-চারগুণ হারে বোনাস নিয়েছে।
আরো রয়েছে, সাধারণ বীমা করপোরেশন-এর প্রধান ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে অনুমোদনের বাইরে মূল বেতনের আড়াইগুণ হারে উৎসব বোনাস দেওয়া হয়, যা প্রায় ১৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি।
এছাড়া, সোনালী ব্যাংক-এর সিলেট, কুমিল্লা ও বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন শাখার কর্মীরাও তিন থেকে চারগুণ পর্যন্ত ইনসেনটিভ বোনাস নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে সোনালী ব্যাংক তিনটি উৎসাহ বোনাসের পরিবর্তে পাঁচটি বোনাস দেয়। পরে এফআইডি তাদের অতিরিক্ত দুটি বোনাসের অর্থ কর্মীদের কাছ থেকে ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি।
এ বিষয়ে এফআইডির অতিরিক্ত সচিব মো. আহসান কবীর বলেন, "ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাবে কর্মীরা ইচ্ছেমতো বোনাস নিচ্ছেন। এখন থেকে ইনসেনটিভ বোনাস পেতে হলে যৌক্তিক কর্মদক্ষতা দেখাতে হবে।"
ইনসেনটিভ বোনাস বিষয়ক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন প্রণোদনা বোনাস নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি পাঁচটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়েছেঃ
১. চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার
২. আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধির হার
৩. ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ বৃদ্ধির হার
৪. খেলাপি ঋণ আদায়ের হার
৫. অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার
নতুন এই নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হবে এবং সেই নম্বরের ভিত্তিতেই বোনাসের সংখ্যা নির্ধারিত হবে। যদি কোনো ব্যাংকের কর্মদক্ষতা খুব কম হয়, তবে তারা কোনো বোনাসই পাবে না।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।