'ঈশ্বর কণা' কি সত্যিই আমাদের সবকিছুর ভর নিয়ন্ত্রণ করে? বিজ্ঞান কি বলছে !

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
২০১২ সালের ৪ জুলাই, দিনটি পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে। ইউরোপীয় পারমাণবিক গবেষণা সংস্থা সার্ন (CERN) ঘোষণা দিল এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের হিগস বোসন কণা। বহু দশকের অনুসন্ধান ও তত্ত্বের পর অবশেষে প্রমাণ মিলল, মহাবিশ্বে এমন একটি ক্ষেত্র রয়েছে, যা ছাড়া কিছুই ভর পেত না, আর কিছুই গড়ে উঠত না।
আবিষ্কারের পেছনের কাহিনি:
১৯৬০-এর দশকে পদার্থবিদ পিটার হিগস ও তাঁর সহকর্মীরা ধারণা দেন—একটি অদৃশ্য ক্ষেত্র (Higgs Field) সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে বিদ্যমান। এই ক্ষেত্র কণাগুলোকে ভর প্রদান করে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য দরকার ছিল এক বিশেষ কণার—হিগস বোসন।
দীর্ঘ প্রস্তুতি, জটিল পরীক্ষা এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (LHC) এর মাধ্যমে ২০১২ সালে বিজ্ঞানীরা অবশেষে সেই রহস্যময় কণাটিকে শনাক্ত করেন।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই কণা?
হিগস বোসনকে বোঝার জন্য আমাদের "স্ট্যান্ডার্ড মডেল" বুঝতে হবে। এটি হলো কণা পদার্থবিদ্যার এক কাঠামো, যা মহাবিশ্বের মৌলিক কণা (যেমন ইলেকট্রন, কোয়ার্ক) এবং মৌলিক বলগুলো (যেমন তড়িৎচৌম্বক বল, দুর্বল বল) ব্যাখ্যা করে।
কিন্তু এক বড় প্রশ্ন ছিল-এই কণাগুলো ভর পেল কীভাবে?
হিগস ক্ষেত্রের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমেই কণাগুলো ভর অর্জন করে। যদি এই ক্ষেত্র না থাকত, তাহলে কণাগুলো ভরহীন থেকে যেত। আর ভরহীন কণার মহাবিশ্বে না থাকত পরমাণু, না থাকত নক্ষত্র, না থাকত আমরা। অতএব, হিগস ক্ষেত্র ছাড়া মহাবিশ্ব কার্যত অস্থিতিশীল ও শূন্য হতো।
মহাবিশ্বের গঠনে প্রভাব:
হিগস বোসনের আবিষ্কার শুধু একটি কণার অস্তিত্ব প্রমাণ নয়, বরং মহাবিশ্বের জন্ম ও গঠনকে বোঝার ক্ষেত্রে এক বিশাল সাফল্য।
⇨ ভর প্রদানকারী ক্ষেত্রের প্রমাণ: কেন ইলেকট্রন বা কোয়ার্কের ভর আছে, তার উত্তর মিলল।
⇨ জীবনের সম্ভাবনা: হিগস ক্ষেত্র না থাকলে জীবন সম্ভব হতো না।
⇨ বিজ্ঞানচর্চার দিগন্ত প্রসার: স্ট্যান্ডার্ড মডেল আরও শক্ত ভিত পেল, যদিও এর বাইরেও এখনও অনেক অজানা রহস্য রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এখন হিগস বোসনের বৈশিষ্ট্যগুলো আরও গভীরভাবে পরীক্ষা করছেন।
- এটি কি স্ট্যান্ডার্ড মডেলের বাইরেও কোনো রহস্য উন্মোচন করবে?
- মহাবিশ্বের "ডার্ক ম্যাটার" ও "ডার্ক এনার্জি"-এর রহস্য কি এর মাধ্যমে খোলা যাবে?
- বিগ ব্যাং-এর পর মহাবিশ্বের বিস্তার ও গঠনে এর ভূমিকা কতটা ছিল?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আজও লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার সচল রয়েছে।
কেন বলা হয় "ঈশ্বর কণা"?
হিগস বোসনকে জনপ্রিয়ভাবে বলা হয় "God Particle"। নামটি এসেছে এর অপরিসীম গুরুত্ব থেকে, কারণ এটি ছাড়া মহাবিশ্বে ভরের ধারণাই থাকত না। তবে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এই নাম কিছুটা বিভ্রান্তিকর; এর বৈজ্ঞানিক তাৎপর্যকে বোঝাতে এটিকে বলা উচিত "ভর সৃষ্টির কণা"।
হিগস বোসনের আবিষ্কার আমাদের মহাবিশ্বকে নতুন চোখে দেখতে শিখিয়েছে। এক অদৃশ্য ক্ষেত্রের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলো, যা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। এটি শুধু পদার্থবিদ্যার ইতিহাসের নয়, মানব সভ্যতার জ্ঞানভান্ডারেরও এক অনন্য মাইলফলক।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।