তবে কি বিমানের টিকিটের মতোই, মহাকাশ ভ্রমণের টিকিটও আমাদের হাতের নাগালে আসতে যাচ্ছে!! জানুন স্পেস ট্যুরিজম ভ্রমণ কাহিনী

তবে কি বিমানের টিকিটের মতোই, মহাকাশ ভ্রমণের টিকিটও আমাদের হাতের নাগালে আসতে যাচ্ছে!! জানুন স্পেস ট্যুরিজম ভ্রমণ কাহিনী
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানুষের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন হাজার বছরের। কিন্তু ১৯৬১ সালে সোভিয়েত নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন প্রথম যখন মহাকাশে পা রাখেন, তখনও এটি কেবল রাষ্ট্রীয় গবেষণা ও সামরিক প্রযুক্তির অংশ ছিল। সাধারণ মানুষ মহাকাশে যাবে এ ধারণা তখন ছিল একেবারেই কল্পনার মতো। অথচ সেই কল্পনাই বাস্তব হলো ২০০১ সালে। যখন ২০০১ সালের ২৮ এপ্রিল, ৬০ বছর বয়সী ডেনিস টিটো রাশিয়ার সয়ুজ TM-32 মহাকাশযানে চেপে যাত্রা শুরু করেন। গন্তব্য ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)। আর সময়কাল ছিল মাত্র প্রায় ৮ দিন। খরচ হয়েছিল প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (তৎকালীন হিসাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা)। টিটো মূলত একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার ও ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে তিনি রাশিয়ার মহাকাশ কর্মসূচির আর্থিক সংকটে সুযোগ দেখেন। আমেরিকান কোম্পানি স্পেস অ্যাডভেঞ্চারস এবং রাশিয়ান মহাকাশ সংস্থা রোসকসমস-এর সহযোগিতায় তার এই ভ্রমণ সম্ভব হয়।

অনেকে ভাবতে পারেন, ইউরি গ্যাগারিনই প্রথম মহাকাশ পর্যটক। কিন্তু বিষয়টি ভিন্ন।

গ্যাগারিন (১৯৬১) প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশে যান, তবে তিনি ছিলেন প্রশিক্ষিত সোভিয়েত মহাকাশচারী। তাঁর ভ্রমণ রাষ্ট্রীয় মিশনের অংশ ছিল।

টিটো (২০০১) প্রথম "সাধারণ নাগরিক" যিনি অর্থ দিয়ে মহাকাশে গিয়েছিলেন। তাই তাকেই ধরা হয় প্রথম মহাকাশ পর্যটক।
 

এরপর যারা গেলেন-

ডেনিস টিটোর পর ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আরও সাতজন পর্যটক রাশিয়ার মহাকাশযানে ভ্রমণ করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ধনী ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানপিপাসু ও শখের মহাকাশপ্রেমীরা। প্রত্যেকেই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মহাকাশের স্বাদ নিয়েছেন।
 

আজ মহাকাশ ভ্রমণ আর কেবল সরকারের প্রকল্প নয়, বাণিজ্যিক উদ্যোগের হাত ধরেই এটি সাধারণ মানুষের কাছে আসছে।

◑ ভার্জিন গ্যালাকটিক (Virgin Galactic): সাব-অরবিটাল ফ্লাইটে কয়েক মিনিটের জন্য সাধারণ মানুষকে মহাকাশের সীমানায় নিয়ে যাচ্ছে।

◑ ব্লু অরিজিন (Blue Origin): জেফ বেজোসের কোম্পানি, যেটি নিউ শেপার্ড নামক রকেটের মাধ্যমে পর্যটকদের মহাকাশে ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে।

◑ স্পেসএক্স (SpaceX): এলন মাস্কের কোম্পানি, যারা ইতোমধ্যে বেসরকারি নাগরিকদের কক্ষপথে নিয়ে গিয়ে মহাকাশ ভ্রমণের নতুন মাত্রা দিয়েছে। ভবিষ্যতে তারা চাঁদ এমনকি মঙ্গলেও পর্যটক পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।

 

সাব-অরবিটাল বনাম অরবিটাল ফ্লাইট-

সাব-অরবিটাল: কয়েক মিনিটের ভ্রমণ, পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে মহাকাশের অভিজ্ঞতা নেওয়া।

অরবিটাল: কয়েক দিন বা সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণ, কক্ষপথে থেকে মহাকাশ স্টেশনে থাকা।


ভবিষ্যতে খরচ ধীরে ধীরে কমলে সাধারণ মানুষের জন্যও মহাকাশ ভ্রমণ উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ডেনিস টিটোর সেই সাহসী পদক্ষেপ এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল মহাকাশ শুধু বিজ্ঞানী বা সেনাবাহিনীর নয়, এটি মানুষেরও স্বপ্নভূমি। বর্তমানে প্রযুক্তি, প্রতিযোগিতা ও বিনিয়োগের ফলে মহাকাশ পর্যটন ধীরে ধীরে বিলাসিতা থেকে ব্যবসায় রূপ নিচ্ছে। হয়তো খুব শিগগিরই, বিমানের টিকিটের মতো মহাকাশ ভ্রমণের টিকিটও একদিন আমাদের হাতের নাগালে আসবে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ