শুধু চোখে নয়, এবার শরীরও অনুভব করবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) যুগে আমরা চোখে দৃশ্যমান অভিজ্ঞতা পেতে পারি। কিন্তু শুধু ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতাই পর্যাপ্ত নয়,মানুষের অনুভূতিশীলতা অর্জন করতে হলে স্পর্শ, চাপ, কম্পন এবং শরীরের অন্যান্য প্রতিক্রিয়াও জরুরি। এই চাহিদাকেই পূরণ করছে হ্যাপটিক স্যুট, যা ব্যবহারকারীর শরীরকে সরাসরি ভার্চুয়াল ইন্টারঅ্যাকশনের সঙ্গে সংযুক্ত করছে।
হ্যাপটিক স্যুট হলো একটি পরিধেয় ডিভাইস, যা পুরো শরীরকে ঘিরে ধরে এবং নির্দিষ্ট অংশে স্পর্শ বা চাপের অভিজ্ঞতা দেয়। স্যুটে থাকে ভাইব্রেশন মোটর, লিকুইড বা এয়ার অ্যাকচুয়েটর, সেন্সর এবং নিয়ন্ত্রণ ইউনিট। VR বা AR (Augmented Reality) অ্যাপ্লিকেশন থেকে তথ্য আসে, এবং স্যুট সেই অনুযায়ী শরীরের অংশে কম্পন, চাপ বা তাপ অনুভূতি তৈরি করে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি VR-এ কোনো বস্তুর সাথে হাতের সংস্পর্শ হয়, স্যুটের মোটর বা অ্যাকচুয়েটর হাতের ত্বকে ক্ষুদ্র কম্পন তৈরি করে, যা মস্তিষ্কে বাস্তব স্পর্শের মতো সিগন্যাল পৌঁছে দেয়।
মানুষের স্পর্শ সংবেদন মূলত ডার্মিস ও সাবকিউটেনিয়াস নার্ভ ফাইবার মাধ্যমে কাজ করে। যখন আমরা কিছু স্পর্শ করি, সেন্সরগুলো থেকে নিউরাল সিগন্যাল মস্তিষ্কের সিপারেট অংশে পৌঁছে। হ্যাপটিক স্যুট এই প্রক্রিয়াকে নকল করে:
⇨ মোটর বা অ্যাকচুয়েটর শরীরের নির্দিষ্ট স্থান কম্পিত বা চাপিত করে।
⇨ সেন্সর ব্যবহারকারীর ভঙ্গিমা, মুভমেন্ট ও অবস্থান ট্র্যাক করে।
⇨ মস্তিষ্ক এই সেন্সরিয়াল ডেটাকে বাস্তব স্পর্শের সাথে মিলিয়ে নেয়, ফলে ব্যবহারকারী প্রকৃত অনুভূতি পাই।
বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, হ্যাপটিক স্যুট প্রেসার, টেক্সচার এবং ভিব্রেশন তিনটি মাত্রা নিয়ে কাজ করে:
১। প্রেসার: ভারী বা হালকা বস্তুর চাপ অনুভব করানো।
২। টেক্সচার: কাঁচা, মসৃণ বা খসখসে পৃষ্ঠের অনুভূতি তৈরি করা।
৩। ভিব্রেশন: হালকা স্পর্শ, বাতাস বা আঘাতের কম্পন অনুভব করানো।
ব্যবহারিক ক্ষেত্র-
⇨ গেমিং ও বিনোদন: VR গেমে ব্যবহারকারী যুদ্ধ, রেসিং বা অ্যাডভেঞ্চার অনুভব করতে পারে। হঠাৎ কোনো ধাক্কা বা হাওয়া আসল মনে হয়।
⇨ চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ: সার্জনরা VR-এ অস্ত্রোপচারের প্র্যাকটিস করতে পারে। হ্যাপটিক ফিডব্যাক দিয়ে টিস্যু স্পর্শ, ছেদ বা চাপ অনুভব করা সম্ভব।
⇨ সেনা ও অ্যাম্বুল্যান্স প্রশিক্ষণ: ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে সেনা বা উদ্ধারকর্মীরা বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে পারে।
⇨ ফিটনেস ও রিহ্যাব: ব্যায়াম বা শারীরিক পুনর্বাসনে হ্যাপটিক স্যুট ব্যবহার করে শরীরের মুভমেন্ট এবং চাপ নিরীক্ষণ ও অনুভব করা যায়।
হ্যাপটিক স্যুট-এর রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতাও-
১. পুরো শরীরের নির্দিষ্ট সূক্ষ্ম স্পর্শ এবং তাপমাত্রা পরিবর্তন এখনো সীমিত।
২. স্যুটের ওজন এবং ব্যাটারি ক্ষমতা ব্যবহারকে প্রভাবিত করে।
৩. প্রফেশনাল স্যুটগুলো এখনও তুলনামূলকভাবে দামি।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা-
⇨ ফুল বডি হ্যাপটিক: আগামী কয়েক বছরে স্যুট সম্পূর্ণ শরীর জুড়ে স্পর্শ ও চাপ অনুভব দিতে পারবে।
⇨ ইমোশনাল ফিডব্যাক: VR-এ শুধু স্পর্শ নয়, অনুভূতি ও আবেগের সংবেদনও সম্ভব হবে।
⇨ দৈনন্দিন ব্যবহার: বিনোদন, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং রিমোট কাজের ক্ষেত্রে হ্যাপটিক স্যুট সাধারণ মানুষের জন্যও সহজলভ্য হবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।