শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ডেটা কেন সাইবার অপরাধীদের নতুন টার্গেট!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ডিজিটাল যুগে যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বা বহুজাতিক কোম্পানি সাইবার হামলার প্রধান টার্গেট বলে মনে করা হতো, সেখানে এখন নতুন উদ্বেগের নাম স্কুল ও কলেজ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাইবার হামলার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রশ্ন উঠছে-কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন হ্যাকারদের পছন্দের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে?
কেন স্কুল-কলেজ টার্গেটে?
১. সংবেদনশীল তথ্য ভান্ডার: স্কুল ও কলেজে থাকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীর ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন:জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মতারিখ, যোগাযোগের তথ্য, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত ডেটা। এগুলো কালোবাজারে বিক্রি করার চাহিদা অনেক।
২. দুর্বল সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা: অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পর্যাপ্ত সাইবার সিকিউরিটি অবকাঠামো তৈরি করতে পারেনি। বাজেট সীমিত, প্রযুক্তি পুরনো—ফলে হ্যাকারদের জন্য সহজ শিকার।
৩. অনলাইন শিক্ষার প্রসার: কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে অনলাইন ক্লাস, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম এবং ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি ইন্টারনেট নির্ভরশীল হয়েছে, যা ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
৪. র্যানসমওয়্যার আক্রমণ: অনেক ক্ষেত্রে হ্যাকাররা প্রতিষ্ঠানের সার্ভার লক করে দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে,যা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত অর্থ পরিশোধে বাধ্য করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে গত কয়েক বছরে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় র্যানসমওয়্যারের শিকার হয়েছে।দক্ষিণ এশিয়াতেও সম্প্রতি কিছু কলেজের ওয়েবসাইট বিকৃত করা হয়েছে, যেখানে হ্যাকাররা নিজেদের পরিচয় প্রচার করেছে। বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও একাডেমিক ডকুমেন্ট ফাঁসের ঘটনাও ঘটেছে, যা সাইবার আক্রমণের অংশ হিসেবে ধরা হয়।
শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি-
ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক হয়ে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। আর্থিক প্রতারণার শিকার হতে পারে পরিবার। একাডেমিক রেকর্ড পরিবর্তন বা মুছে ফেলা হলে পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
১. ডিজিটাল লিটারেসি বৃদ্ধি: শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন করা-অজানা ইমেইল বা লিংক না খোলা।
২. সিকিউরিটি সফটওয়্যার ও আপডেট: পুরনো সিস্টেম না রেখে নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট ও সাইবার সিকিউরিটি টুল ব্যবহার।
৩. ডেটা এনক্রিপশন: গুরুত্বপূর্ণ ডেটা এনক্রিপ্ট করে সংরক্ষণ।
৪. ব্যাকআপ ব্যবস্থা: নিয়মিত ব্যাকআপ রাখলে র্যানসমওয়্যার আক্রমণেও ক্ষতি কমানো সম্ভব।
৫. সাইবার নীতি প্রণয়ন: প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলাদা সাইবার নিরাপত্তা নীতি থাকা দরকার।
স্কুল-কলেজ একসময় শুধুই শিক্ষার জায়গা ছিল, এখন এগুলো বিশাল ডেটা সেন্টারে পরিণত হয়েছে। এই ডেটা যদি সঠিকভাবে সুরক্ষিত না হয়, তবে শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক, সবাই ঝুঁকিতে পড়বে। সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তু বদলাচ্ছে, আর তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এখনই নিজেদের ডিজিটাল নিরাপত্তাকে গুরুত্ব সহকারে দেখা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।