মাইন্ড-কম্পিউটার ইন্টারফেসের যুগ, মানুষের চিন্তা এখন সরাসরি যন্ত্রে!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষ কম্পিউটারের সঙ্গে আজকাল নানাভাবে যুক্ত-কীবোর্ডে টাইপ করা, মাউস দিয়ে নেভিগেশন, স্পর্শকৃতির মাধ্যমে ইনপুট। এই প্রথাগত পদ্ধতিগুলোতে কম্পিউটারকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমাদের শারীরিক অংশের সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) প্রযুক্তি এই প্রথাগত বাধা দূর করছে। এখন শুধু মস্তিষ্কের চিন্তা ব্যবহার করেই কম্পিউটার বা যান্ত্রিক ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
BCI কী?
ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস হলো একটি প্রযুক্তি যা মানব মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক সংকেতকে সরাসরি বাহ্যিক যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এটি মূলত মানুষের মোটর, সংবেদনশীল বা জ্ঞানীয় ফাংশন পুনর্বাসন, সহায়তা ও উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়।
BCI তিন ধরণের হতে পারে:
১. অ-আক্রমণাত্মক (Non-invasive): EEG (Electroencephalography), MEG, MRI দ্বারা বাহ্যিকভাবে সিগন্যাল রিড করা।
সুবিধা: ঝুঁকিমুক্ত।
সমস্যা: সিগন্যাল দুর্বল ও সীমিত।
২. আংশিক আক্রমণাত্মক (Partially invasive): ECoG বা এন্ডোভাসকুলার পদ্ধতি। কিছু ইলেক্ট্রোড মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে বসানো হয়।
সুবিধা: শক্তিশালী সিগন্যাল।
সমস্যা: আংশিক ঝুঁকি।
৩. পূর্ণ আক্রমণাত্মক (Invasive): মাইক্রোইলেকট্রোড সরাসরি মস্তিষ্কে বসানো হয়।
সুবিধা: নিখুঁত সিগন্যাল।
সমস্যা: ব্যয়বহুল, ঝুঁকিপূর্ণ এবং সার্জারি প্রয়োজন।
১৯৭০-এর দশকে জ্যাক ভিডাল লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণীর উপর গবেষণা শুরু করেন। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে মস্তিষ্কের সংকেত ব্যবহার করে বাহ্যিক যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ১৯৯০-এর দশকে প্রথম নিউরোপ্রোস্থেটিক ডিভাইস মানুষের মধ্যে বসানো হয়। এটি বিশেষ করে পঙ্গুত্ব বা মোটর ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়ক।
স্টিফেন হকিং মোটর নিউরন রোগে সম্পূর্ণ শারীরিক বোধ ও বাকশক্তি হারিয়ে হুইলচেয়ারে ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি 'স্পিচ প্লাস' প্রোগ্রামের মাধ্যমে হুইলচেয়ার ও লেখালেখি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৯৩ সালে উন্নত ইনফ্রারেড সুইচ ও টেক্সট-টু-স্পিচ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি লেখালেখি, বক্তৃতা এবং যোগাযোগ চালাতে সক্ষম হন। তবে হকিং-এর ব্যবস্থাতেও সামান্য পেশির নড়াচড়া প্রয়োজন ছিল। এখানেই BCI-র গুরুত্ব, যা শুধু মস্তিষ্কের চিন্তাকে ব্যবহার করে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়।
মানব মস্তিষ্ক ও নিউরনের ভূমিকা
মানব মস্তিষ্ক প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন নিয়ে গঠিত।
প্রতিটি চিন্তা, অনুভূতি, কথা বা চলাফেরা-সবই নিউরনের ইলেকট্রিক সিগন্যালের মাধ্যমে ঘটে। কম্পিউটারের কাজও সিগন্যাল ভিত্তিক। তাই মস্তিষ্ক ও কম্পিউটারের যোগাযোগের সামঞ্জস্য BCI-র মূল।
বর্তমান প্রকল্প ও বাস্তবায়ন
◑ ইলন মাস্ক-এর Neuralink: সরাসরি মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রোড বসিয়ে সিগন্যাল রিড।
উদ্দ্যেশ্য: পঙ্গুত্ব বা মোটর অক্ষমতা দূর করা।
◑ BrainGate: আংশিক আক্রমণাত্মক BCI।হুইলচেয়ার, রোবটিক হাত বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার।
◑ DARPA-র গবেষণা: মস্তিষ্কের সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর পুনর্বাসন।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
⇨ পূর্ণ শারীরিক অক্ষমতায় সহায়তা: শুধু মস্তিষ্কের চিন্তা ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজ।
⇨ রিয়েল টাইম যোগাযোগ: হিউম্যান-মেশিন ইন্টার্যাকশন আরও দ্রুত ও নির্ভুল হবে।
⇨ অগমেন্টেড রিয়েলিটি ও AI সংযোগ: মস্তিষ্কের সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
⇨ দৃষ্টি, শ্রবণ ও মুভমেন্ট হীন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন।
BCI প্রযুক্তি এখন কেবল সায়েন্স ফিকশন নয়, এটি মানব জীবনের সীমাবদ্ধতা দূর করতে, পুনর্বাসন, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও শিল্পে নতুন সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম। ভাবুনতো! শুধু মস্তিষ্কের চিন্তা ব্যবহার করেই কম্পিউটার, রোবট বা যান্ত্রিক ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা। এটি শুধু শারীরিক সীমাবদ্ধতার প্রতিবন্ধকতা দূর করছে না, বরং মানব ও যন্ত্রের মধ্যে এক নতুন যুগের সূচনা করছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।