কাতারের দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলা

কাতারের দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলা
ছবির ক্যাপশান, কাতারের দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

কাতারের রাজধানী দোহায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এ হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে। ঘটনাটিকে দোহায় প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি হামলা হিসেবে বর্ণনা করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। হামলাটি ঘটে এমন সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য হামাসের প্রতিনিধিদল বৈঠক করছিল।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সম্প্রতি হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে টার্গেটেড হামলা চালিয়েছে। এ নেতারা বছরের পর বছর সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন এবং সরাসরি ৭ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য দায়ী।” সেনাবাহিনীর দাবি, সাধারণ মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য ও নিখুঁত অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে আল জাজিরা জানিয়েছে, দোহায় যে এলাকা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে তা আবাসিক অঞ্চলের খুব কাছাকাছি। ফলে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আল জাজিরার আরবি বিভাগীয় প্রতিবেদক সুওহাইব আল-আসা বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গা, যেখানে মানুষের বসবাস রয়েছে। তাই নিরাপত্তা বাহিনী বর্তমানে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়টি চিহ্নিত করার কাজ করছে।”

হামাসের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, এ হামলায় তাদের আলোচক দলকে টার্গেট করা হয়। হামাসের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির খসড়া নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এর আগে ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, বিশ্বের যেখানেই হামাস নেতারা অবস্থান করবেন, ইসরায়েল তাদের নিশানা করবে।

হামলার ঘটনায় কাতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি এক বিবৃতিতে বলেন, “দোহায় আবাসিক ভবনে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর কয়েকজন সদস্যের বাসস্থানে যে হামলা চালানো হয়েছে, কাতার সেটিকে আন্তর্জাতিক আইন ও বিধির চরম লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। এটি কাতারের নাগরিক ও বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।” তিনি আরও বলেন, “কাতার এ ধরনের বেপরোয়া আচরণ সহ্য করবে না এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”

এদিকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানদা সালহুত জানান, ইরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের মতো দোহায় এই হামলাও ইসরায়েলের আন্তর্জাতিকভাবে আগ্রাসী নীতি প্রকাশ করছে। তার মতে, “গাজার গণহত্যা চালিয়ে পার পেয়ে যাওয়ায় ইসরায়েল এখন আরও সাহসী হয়ে উঠেছে।”

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাতারের মাটিতে এ হামলা আঞ্চলিক শান্তি প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলবে। কারণ কাতার দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করছে এবং দোহা ছিল চলমান আলোচনার অন্যতম কেন্দ্র। হামলার পর কাতার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।

এ হামলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেল। ইতোমধ্যেই গাজা, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে, একই সঙ্গে পশ্চিম তীরেও প্রতিদিন হামলার ঘটনা ঘটছে। এবার দোহায় আঘাত হেনে ইসরায়েল গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা সংকট আরও গভীর করল বলে মন্তব্য করছেন পর্যবেক্ষকরা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ