রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারঃ মামলা এড়াতে ১১০০ কোটি টাকা ফেরত

রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারঃ মামলা এড়াতে ১১০০ কোটি টাকা ফেরত
ছবির ক্যাপশান, রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারঃ মামলা এড়াতে ১১০০ কোটি টাকা ফেরত
  • Author, এ.এন.জাহান
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

রপ্তানি পণ্যের আড়ালে অর্থ পাচার তদন্তের মুখে শেষ পর্যন্ত ২১টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রায় ১১শ কোটি টাকার বেশি অর্থ দেশে ফেরত এনেছে। যা প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সিআইডি’র (Criminal Investigation Department) অনুসন্ধানের পর এসব প্রতিষ্ঠান মামলা এড়ানোর জন্য এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়।

সিআইডি'র আর্থিক অপরাধ (Financial Crime) ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি মূল্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশে আনার কথা থাকলেও, কিছু অংশ দেশে এনে বাকি টাকা বিদেশে রেখে দিত। তবে সিআইডি'র চাপে পড়ে বেশিরভাগ অর্থই গত এক বছরে দেশে ফেরত এসেছে। তবুও এই ২১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখনও প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার বা ৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা দেশে ফেরত আনা বাকি রয়েছে।

উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বিদেশে অর্থ পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে। এর প্রতিক্রিয়ায়, সিআইডি পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে একটি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রায় ১০০টি রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিক দল অনুসন্ধান শুরু করে।

তদন্ত চলাকালীন, কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর সিআইডি বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে ১৭টি পৃথক মামলা দায়ের করে। এর ফলে চাপে পড়ে তালিকায় থাকা একাধিক প্রতিষ্ঠান রপ্তানির আড়ালে পাচার করা অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি মূল্য দেশে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একজন রপ্তানিকারককে সাধারণত পণ্য রপ্তানির ১২০ দিনের মধ্যে সেই পণ্যের মূল্য দেশে আনতে হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সময়সীমা ২১০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সিআইডি'র পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত কয়েক বছরে অনুসন্ধানের মুখে ২১টি প্রতিষ্ঠান তাদের পাচার করা ৯ কোটি ২১ লাখ ৬৪ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ ফেরত এনেছে, যার বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১শ ২২ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে, ক্যামলেট ফ্যাশনসহ ১২টি প্রতিষ্ঠান তাদের পাচার করা ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার ডলারের মধ্যে ৩০ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৬ ডলার ফিরিয়েছে। অন্যদিকে, কুন্তং অ্যাপারেলসহ ৪টি প্রতিষ্ঠান তাদের পাচার করা প্রায় ৮ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পুরো টাকাই ফেরত এনেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান এখনও অর্থ ফেরত আনেনি, তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে।

এদিকে, সিআইডি'র তথ্যানুসারে, ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে তদন্ত করে মোট ৩ হাজার ১১১ কোটি টাকার বেশি সমপরিমাণ সম্পদ ফ্রিজ, ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে, ৮১৩ কোটি টাকার বেশি সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে, প্রায় ৭৯ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, এবং ২ হাজার ২শ ১৯ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ক্রোককৃত সম্পদের মধ্যে রয়েছে:
    ২০ একর ৫২ শতক জমি।
    ২৯টি বাড়ি এবং ১১টি ফ্ল্যাট।
    ৩টি মার্কেট এবং ২১টি মিনিবাস।
এছাড়া, বেক্সিমকো গ্রুপের ক্রোককৃত সম্পত্তির মধ্যে ঢাকার দোহারে ২০ একর ৫২ শতক জমি এবং গুলশানের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটও রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ