ঘুমহীন নারী মানেই বিপর্যস্ত মন-গবেষণা বলছে চমকে যাওয়ার মতো সত্য!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আজকের দ্রুতগামী জীবনযাত্রায় ঘুম ও মানসিক চাপ নারীর স্বাস্থ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। ঘুম শুধু শরীরের বিশ্রাম নয়, বরং এটি এক ধরনের জৈব-চিকিৎসা প্রক্রিয়া, যেখানে শরীর ও মস্তিষ্ক একসাথে পুনর্গঠিত হয়। অপরদিকে মানসিক চাপ এমন একটি অদৃশ্য শক্তি, যা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শরীর ও মনকে ক্লান্ত করে তোলে, তবে নারীর হরমোনজনিত চক্র ও জীববিজ্ঞানের কারণে এর প্রভাব নারীদের ক্ষেত্রে আরও জটিল হয়ে ওঠে।
ঘুম কেন অপরিহার্য?
প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমকে "সোনার মানদণ্ড" ধরা হয়। এ ঘুমের মধ্যে শরীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে-
১। হরমোন নিয়ন্ত্রণ: মেলাটোনিন, কর্টিসল, গ্রোথ হরমোন ইত্যাদি ঘুমের সময় ভারসাম্যে আসে। এটি নারীর মাসিক চক্র, ডিম্বাশয়ের কার্যক্ষমতা এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।
২। পেশী ও কোষ মেরামত: দিনের কাজকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত পেশী, টিস্যু ও কোষ ঘুমের মধ্যেই পুনর্গঠিত হয়।
৩। মস্তিষ্কের পরিশুদ্ধি: ঘুমের সময় মস্তিষ্কের "গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম" কাজ করে, যা স্নায়ুতে জমে থাকা টক্সিন দূর করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিক বিভ্রান্তি, ভুলে যাওয়া, এমনকি ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে।
মানসিক চাপের প্রভাব-
মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী হলে শরীরে কর্টিসল হরমোন বাড়তে থাকে। স্বল্পমেয়াদে এটি শক্তি জোগালেও দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নারীর ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও সূক্ষ্ম—
◑ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়: ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের মাত্রা ওঠানামা করলে মাসিক অনিয়মিত হয়।
◑ প্রজনন স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয়: দীর্ঘ চাপ বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
◑ মেজাজ পরিবর্তন হয়: অতিরিক্ত চাপ নারীদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা ও খিটখিটে স্বভাব তৈরি করে।
ঘুম ও চাপের "চক্রাকৃতি সম্পর্ক"-
গবেষণায় দেখা গেছে, চাপ থেকে ঘুম নষ্ট হয়, আর ঘুমের ঘাটতি থেকে চাপ আরও বেড়ে যায়। এটিই এক ধরনের চক্রাকৃতি ফাঁদ। যেমন-
বেশি চাপ → কর্টিসল নিঃসরণ বাড়ে → ঘুম ভাঙা বা হালকা ঘুম → ঘুমের অভাব → মনোযোগহীনতা ও আরও চাপ।
ফলে নারীর জীবনযাত্রা, কর্মক্ষমতা ও সামাজিক সম্পর্ক সবক্ষেত্রেই প্রভাব পড়ে।
সমাধানের কৌশল:
নারীর জীবনে ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কৌশল অনুসরণ করা জরুরি-
◑ খাদ্যাভ্যাসের যত্ন:
আঁশসমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফল খেলে শরীর স্বস্তি পায়।
বাদাম ও মাছের মতো ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্ককে চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন (চা-কফি) ও মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
◑ নিয়মিত ব্যায়াম:
হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হালকা কার্ডিও ব্যায়াম শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।
ব্যায়াম এন্ডরফিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা প্রাকৃতিকভাবে চাপ কমায় ও ঘুমকে গভীর করে।
◑ ডিজিটাল ডিভাইস থেকে বিরতি:
শোবার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ বন্ধ রাখা উচিত।নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনকে দমন করে, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
◑ মানসিক প্রশান্তি অনুশীলন: গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস (৪-৭-৮ পদ্ধতি) বা মেডিটেশন চাপ কমাতে কার্যকর। দিনের মধ্যে ছোট ছোট বিরতি নেওয়া—যেমন কয়েক মিনিট চুপচাপ বসা বা প্রকৃতির মধ্যে হাঁটা-মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করে।
◑ ঘুমের রুটিন তৈরি:
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগা অভ্যাস করলে দেহঘড়ি (Biological Clock) সঠিকভাবে কাজ করে। শোবার ঘর ঠাণ্ডা, অন্ধকার ও শান্ত রাখলে ঘুম আরও গভীর হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ কেন জরুরি?
সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যদি দীর্ঘদিন ঘুমের সমস্যা থাকে বা মানসিক চাপ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, অনেক সময় পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে হরমোনজনিত সমস্যা, থাইরয়েড, বা মানসিক স্বাস্থ্যজনিত জটিলতা। এগুলো সঠিক সময়ে নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসা সম্ভব এবং জীবন অনেক সহজ হয়ে ওঠে।
নারীর সুস্থতা শুধু দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে একটি সুষম জীবনধারা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি ছাড়া সেই জীবনধারা অসম্পূর্ণ। মনে রাখতে হবে, ঘুমকে অবহেলা করলে এর ফল শুধু ক্লান্তি নয়, বরং নারীর শারীরিক, মানসিক ও প্রজনন স্বাস্থ্যকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার প্রথম ধাপ হলো-ঘুমকে প্রাধান্য দেওয়া এবং মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।