পানি নেই, কিন্তু জীবন আছে: বাওবাব ও তার সহযাত্রীদের বিস্ময়কর টিকে থাকার কৌশল!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
প্রকৃতি সবসময়ই বিস্ময়কর। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিকূল পরিবেশ-মরুভূমি ও শুষ্ক অঞ্চলেও জীবন টিকে আছে। এ টিকে থাকার পেছনে রয়েছে কিছু বিশেষ অভিযোজন। কাকটাস, বাওবাব কিংবা অন্যান্য জেরোফাইট (Xerophyte) উদ্ভিদ আশ্চর্যজনকভাবে পানি সংরক্ষণ করে বেঁচে থাকে। এরা যেন প্রকৃতির তৈরি "প্রাকৃতিক পানির ট্যাঙ্ক"।
কাকটাস: কাঁটার আড়ালে জলাধার-
কাকটাস মরুভূমির প্রতীক। এর পানিসংরক্ষণ কৌশল একেবারেই অনন্য।
⇨ পাতার পরিবর্তে কাঁটা: সূক্ষ্ম কাঁটা বাষ্পীভবন কমায়, আবার শিকারি প্রাণীর হাত থেকেও রক্ষা করে।
⇨ ফটোসিনথেসিসে বিশেষ কৌশল: কাকটাস CAM (Crassulacean Acid Metabolism) নামক পদ্ধতিতে রাতে স্টোমাটা খুলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, যাতে দিনের বেলায় পানি নষ্ট না হয়।
⇨ ফুলে ওঠা কান্ড: এর মোটা কান্ড আসলে পানির ভাণ্ডার। একেকটি বড় কাকটাস কয়েকশো লিটার পানি জমিয়ে রাখতে পারে।
বাওবাব: আফ্রিকার জীবন্ত পানির ট্যাঙ্ক-
আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে দাঁড়িয়ে থাকা বাওবাব গাছকে বলা হয় "Tree of Life"-জীবনের বৃক্ষ।
⇨ মোটা কাণ্ড: বিশালাকার গাছটির কাণ্ড আসলে স্পঞ্জের মতো কাজ করে, যেখানে হাজার হাজার লিটার পানি জমা থাকে। খরার সময় এ পানি ধীরে ধীরে ব্যবহার হয়।
⇨ পত্রঝরা কৌশল: শুষ্ক মৌসুমে পাতা ঝরিয়ে দেয়, যাতে পানি খরচ কম হয়।
⇨ মানুষের ব্যবহার: স্থানীয় জনগোষ্ঠী কখনো কখনো এর ভেতর জমা পানি ব্যবহার করে পানীয় হিসেবে কাজে লাগায়।
অন্যান্য পানি-সংরক্ষণকারী উদ্ভিদ-
⇨ অ্যালোভেরা – পাতার ভেতর জেলি জাতীয় অংশে পানি ধরে রাখে।
⇨ অ্যাগাভে – পুরু পাতায় পানি জমা করে, মরুভূমিতে সহজে টিকে থাকতে পারে।
⇨ সাকুলেন্টস – ছোট হলেও পাতার কোষে প্রচুর পানি মজুত রাখে।
⇨ ম্যাংগ্রোভ গাছ – লবণাক্ত পানির পরিবেশে লবণ ছেঁকে পানি ব্যবহার করে, যা এক ধরণের ভিন্নধর্মী অভিযোজন।
বিজ্ঞানীরা বলেন, এসব উদ্ভিদের অভিযোজন ইকোফিজিওলজি-র এক চমৎকার উদাহরণ।
এদের টিস্যুতে পানি সংরক্ষণের বিশেষ ভ্যাকুয়োল থাকে। পাতার গঠন ও কোষ দেয়ালের পুরুত্ব এমনভাবে তৈরি যে পানির ক্ষতি ন্যূনতম হয়।
ফটোসিনথেসিসের CAM কৌশল পানির ব্যবহারকে ৩-৪ গুণ কমিয়ে দেয়, যা মরুভূমির পরিবেশে বেঁচে থাকার মূল চাবিকাঠি।
কেন এ অভিযোজন গুরুত্বপূর্ণ?
⇨ প্রকৃতির টিকে থাকা: মরুভূমি বা শুষ্ক অঞ্চলে এরা পুরো বাস্তুতন্ত্র ধরে রাখে।
⇨ মানুষের জন্য প্রেরণা: পানি সংরক্ষণের এসব প্রাকৃতিক কৌশল বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করছে। বর্তমানে বায়োমিমিক্রি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতের পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও কৃষি প্রযুক্তিতে এ ধারণা কাজে লাগানো হচ্ছে।
⇨ জলবায়ু পরিবর্তনের শিক্ষণীয় দিক: বৈশ্বিক উষ্ণতা ও খরার ঝুঁকি বাড়ার সাথে সাথে এই উদ্ভিদগুলো আমাদের দেখাচ্ছে, কিভাবে অভিযোজিত হয়ে টিকে থাকা যায়।
কাকটাসের কাঁটা, বাওবাবের মোটা কাণ্ড কিংবা অ্যালোভেরার পাতার ভেতর জমে থাকা পানি-সবই প্রমাণ করে, প্রকৃতি কখনো হার মানে না। চরম প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকার জন্য প্রকৃতি তৈরি করেছে বিস্ময়কর কৌশল। এসব উদ্ভিদ শুধু মরুভূমি নয়, পুরো মানবজাতির জন্য এক অনন্য শিক্ষা-যথাযথ অভিযোজনই হলো বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।