নিজেকে 'গণিতের ঈশ্বর' দাবিকরা বারী

বাংলাদেশকে ‘সন্ত্রাসবাদী দেশ’ আখ্যা দিলেন সুবর্ণ আইজেক বারী

বাংলাদেশকে ‘সন্ত্রাসবাদী দেশ’ আখ্যা দিলেন সুবর্ণ আইজেক বারী
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সুবর্ণ আইজ্যাক বারীকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। একদিকে তাকে অসাধারণ মেধাবী শিশু হিসেবে তুলে ধরা হয়, অন্যদিকে নানা অতিরঞ্জিত প্রচারণা, বিতর্কিত মন্তব্য এবং প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানের কারণে তিনি ও তার পরিবার সমালোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে তার কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য বিষয়টিকে আবারও আলোচনায় নিয়ে এসেছে।

সম্প্রতি একটি ভিডিওতে সুবর্ণ বারী বলেন-“আমি এমন কোনো দেশে জন্মগ্রহণ করিনি যে দেশ টেররিজম সমর্থন করে, আমি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।” এই বক্তব্যকে বাংলাদেশবিরোধী কটাক্ষ হিসেবে দেখা হয়েছে। অথচ বাস্তবে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে এবং আন্তর্জাতিক মহলেও এ নীতির স্বীকৃতি মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদ দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে সুবর্ণের এই মন্তব্য শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, বরং বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অযাচিতভাবে ক্ষুণ্ণ করছে।

সুবর্ণের বাবা রাশিদুল বারী একজন প্রাক্তন শিক্ষক ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ছেলেকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। ফেসবুক পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও কিংবা সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার, সব জায়গায় তিনি ছেলের মেধাকে অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করেছেন। ফলে সমালোচকদের মতে, সন্তানের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো একা তার ব্যক্তিগত অবস্থান নয়, বরং বাবার প্রভাব ও সমর্থনের ফল। এভাবেই বাবা-ছেলে মিলে একধরনের “ব্র্যান্ডিং প্রোপাগান্ডা” গড়ে তুলেছেন।

সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত বিষয় হলো সুবর্ণ বারীকে “God of Math” বা “গণিতের ঈশ্বর” আখ্যা দেওয়া। তাদের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলগুলোতে নিয়মিত এই টাইটেল ব্যবহার করা হয়। এই উপাধি যেমন অতিরঞ্জিত, তেমনি ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকেও বিতর্কিত, কারণ ইসলাম ধর্মে মানুষকে দেবত্ব দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল একটি শিরোনাম ব্যবহার করা হয়েছে যা অনেক মুসলিম দর্শকের কাছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

সুবর্ণ বারী ও তার পরিবার প্রায়শই ভারতকে নিয়ে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেন। “আমাকে শিক্ষা দিয়েছে আমেরিকা, সম্মান দিয়েছে ভারত” এ ধরনের বার্তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের দর্শকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। একই সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ায় সুবর্ণের প্রচারণামূলক সফরকে অনেকে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের প্রতি ঝোঁক হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। যদিও পরিবার কখনো সরাসরি হিন্দুত্ববাদ সমর্থনের কথা বলেনি, তবুও তাদের ভারতমুখী অবস্থানকে বাংলাদেশি পরিচয়ের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হচ্ছে।

২০১৬ সালে বারাক ওবামা থেকে পাওয়া একটি চিঠি নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। পরিবার দাবি করে, এটি সুবর্ণের জন্য এক বিশেষ স্বীকৃতি। ইউটিউবে এ নিয়ে ভিডিও প্রকাশও করা হয়। কিন্তু ফ্যাক্টচেক সংস্থা রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন উৎসে দেখা যায়, ওবামা হোয়াইট হাউসে প্রতিদিন হাজারো নাগরিকের চিঠি থেকে ১০টি পড়ে সেগুলোর উত্তর দিতেন, যা একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। অর্থাৎ সুবর্ণ যে চিঠিটি পেয়েছে, সেটি একটি সাধারণ উৎসাহব্যঞ্জক জবাব, বিশেষ স্বীকৃতি নয়। তাছাড়া, রাশিদুল বারীর ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা, কোথায় ছিলেন এবং কীভাবে খবর পেলেন, ঘটনাটিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভিডিও ফুটেজও পরিকল্পিত মনে হওয়ায় অনেকেই এটিকে অতিরঞ্জিত প্রচারণা হিসেবে দেখছেন।

সুবর্ণ বারী মেধাবী একটি শিশু। গণিত ও বিজ্ঞানে তার আগ্রহ প্রশংসনীয়। তবে তার মেধাকে ঘিরে তৈরি হওয়া প্রচারণা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য এখন মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ গর্ব করতে চায় যখন কোনো প্রবাসী সন্তান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু সেই গর্ব তখন আঘাতে পরিণত হয়, যখন তাকে নিয়ে ভ্রান্ত প্রচারণা চালানো হয় বা বাংলাদেশকে হেয় করা হয়। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এভাবে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হলে ভবিষ্যতে সুবর্ণের প্রকৃত মেধা আড়ালে চলে যাবে।

সুবর্ণ আইজ্যাক বারীকে ঘিরে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। ওবামার চিঠি থেকে শুরু করে “গড অব ম্যাথ” উপাধি, ভারতমুখী অবস্থান থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বাংলাদেশবিরোধী মন্তব্য, সবকিছুই প্রমাণ করছে পরিবারটি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচারণা পরিচালনা করছে। এতে হয়তো তারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচিত হচ্ছেন, কিন্তু বাংলাদেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ও সামাজিক-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুবর্ণের প্রকৃত মেধাকে স্বীকৃতি দেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি মিথ্যা প্রচারণা থেকে তাকে রক্ষা করাও বাবা-মায়ের দায়িত্ব। কারণ একটি মেধাবী শিশুর পরিচয় যতটা মূল্যবান, তার মাধ্যমে ছড়ানো প্রোপাগান্ডা ততটাই ক্ষতিকর।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ