সঠিক পথে অবিচল থাকা আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চাবিকাঠি – ইস্তিকামাত

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ইসলামী জীবনধারায় "ইস্তিকামাত" (الاستقامة) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর ধারণা। এর অর্থ হলো সরল পথ ধরে চলা, আল্লাহর আদেশের প্রতি অবিচল থাকা, এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধারাবাহিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
নবী করিম (সা.) আমাদেরকে ইস্তিকামাতের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। ইস্তিকামাত বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাবার জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার কাছে বারবার দুআ করতেন,
"হে অন্তরের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অটল রাখুন।"
[তিরমিজি -২১৪০,মুসনাদু আহমাদ-১৩৬৯৬,ইবনু মাজাহ-৩৮৩৪]
আল্লাহ তাআলার ইরশাদ করেন-
"নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, এরপর অবিচল থাকে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, তাতে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে, তারা যা আমল করত তার পুরস্কারস্বরূপ।" [ সূরা আহকাফ, ১৩-১৪]
অন্তরের ইস্তিকামাতই হলো প্রকৃত ইস্তিকামাত।
ইমাম আহমাদ রহ. হযরত আনাস বিন মালেক রা.-এর সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
" বান্দার ঈমান ততক্ষণ দৃঢ় হবে না যতক্ষণ তার অন্তর দৃঢ় না হবে।" [মুসনাদু আহমাদ, ১৩০৪৮। শায়খ আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তবে ইমাম ইরাকী রহ. তাখরীজু ইহযায় উলুমদানে বলেন, হাদীসের সনদে দুর্বলতা আছে।]
সুতরাং অন্তরের ইস্তিকামাতই হলো প্রকৃত ইস্তিকামাত। তাই অন্তর যখন পরিশুদ্ধ ও দৃঢ় হয়ে যাবে, দেহও অন্তরের অনুরূপ হয়ে যাবে।
ইস্তিকামাতের মূল দিকসমূহ-
১. অবিচলতা: ইস্তিকামাত মানে কোনো পরিস্থিতিতে দমনশীল ও স্থির থাকা। জীবনের প্রতিটি সমস্যা, চাপ বা প্রলোভন সত্ত্বেও সঠিক পথে স্থির থাকা হলো ইস্তিকামাতের মৌলিক অর্থ।
২. সঠিক পথের প্রতি আনুগত্য:
কোরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
" আমাদের সরলপথে পরিচালনা করুন।" (সূরা আল-ফাতিহা, ৬)
এখানেই বোঝা যায়, মুসলিমকে সরল ও ন্যায়পরায়ণ পথে অবিচল থাকা প্রয়োজন।
৩. আল্লাহর নির্দেশ পালন: ইস্তিকামাত শুধু ধর্মীয় আদেশ মেনে চলা নয়, বরং ধারাবাহিক ও সতর্কতার সাথে আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন করাকে বোঝায়। এটি প্রতিটি নফল ও ফরজ ইবাদাত -যেমন নামাজ, রোজা, জাকাত নিয়মিতভাবে পালন করার মাধ্যমে জীবনে অভ্যাসে পরিণত হয়।
৪. আত্মশক্তি ও দৃঢ়তা: ইস্তিকামাত মানে কঠিন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়বেন না। আল্লাহ তাআলা তো বলেই দিয়েছেন:
"অতএব তোমরা তাঁর পথে দৃঢ়ভাবে অটল থাকো "
[ মুসলিম, ২৭২৫; নাসায়ী, ৫২১০, ৫২১২, ৫৩৭৬; আবু দাউদ, ৪২২৫; আহমাদ, ৬৬৬, ১১৬৬, ১৩২৩]
ইস্তিকামাত কেন গুরুত্বপূর্ণ?
☞ সফলতার চাবিকাঠি: ইস্তিকামাত সফল মানুষের বৈশিষ্ট্য। যে ব্যক্তি তার লক্ষ্য ও কর্তব্যে স্থির থাকে, তার সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
☞ দ্বীনের পথে দৃঢ়পদ থাকা: ইমান আনার পর দ্বীনের পথে স্থির থাকা ও ধৈর্যশীল থাকা ইস্তিকামাতের মাধ্যমে সম্ভব।
☞ মন ও আত্মার শান্তি: স্থিরতা ও ধারাবাহিকতা মানুষকে মানসিক শান্তি দেয়। হঠাৎ বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতেও আল্লাহর পথে অবিচল থাকা এক ধরনের নিরাপত্তা ও আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করে।
বাস্তব জীবনে ইস্তিকামাতের প্রয়োগ-
নামাজ ও অন্যান্য ইবাদাত নিয়মিত পালন করা।জীবনের লক্ষ্য পূরণের জন্য অবিচল থাকা—যেমন পড়াশোনা, কাজ, পরিবার বা সমাজে দায়িত্ব পালন। প্রলোভন ও নৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে স্থির থাকা। আত্মশক্তি ও ধৈর্য বজায় রাখা, বিশেষত কঠিন সময়ে।
ইস্তিকামাত কেবল ধর্মীয় নির্দেশাবলী পালন নয়, বরং এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা ও দৃঢ়তার প্রতীক। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে স্থির থাকে, সে মানসিক শান্তি, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং সামাজিক সফলতা একসাথে অর্জন করে। এটি প্রতিটি মুসলিমের জন্য এক অবিচল জীবনযাপনের অনুপ্রেরণা—যা আত্মার শান্তি ও জীবনের সাফল্যের মূল।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।